“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

মঙ্গলবার, ৩০ জুন, ২০২০

কেইসড্রাট












।। জাহিদ রুদ্র ।।



স্ট্রিট লাইট
নেই তেল, চারদিক ঘিরে আছে অন্ধকার
হামাগুড়ি দেয়া ইঁদুর ছানা 
রেখাহীন গর্ভে সুড়ঙ্গ খোদে ওরা, এখন বাহুবলী।
আমি জড়পদার্ধ 
বিউগল বাজাতে জানি, বড় বিউগল!
আমার কী দোষ - না স্বেচ্ছায় এসেছি এখানে
এই দুর্দশা গ্রস্থে ভরপুর মাঠে।

আমাদের এ জীবন যেহেতু কমার্শিয়াল চিন্তার,
বেপার চলছে
এক চিলতে রুদ্দুর ও,
জলন্ত অঙ্গারে পরাজিত জীবন্ত আত্মারা 
গলায় দড়ি দিয়ে সময়ের দাবি রাখে
কেইসড্রাটের ডালে।

সোমবার, ২৯ জুন, ২০২০

ত্রিদিবকে নিয়ে কিছু কথা

 
প্রজাতন্ত্র দিনে ত্রিদিবের শিল্প

   

       ২৬জানুয়ারী ২০২০ !  সকালে স্কুলের প্রজাতন্ত্র উদযাপন অনুষ্ঠান শেষ করে ফিরতি পথে মোটর সাইকেল যেন নিজেই ঘুরে গেল নতুন স্টেশনের দ্বিতীয় গেটে । কচি কাঁচারা বিস্ফারিত চোখে এলোমেলো ভিড় করে আছে । অটো চালক কয়েকজন গুটখা মুখে পুরে ঢিলেঢালা মন্তব্য দিয়ে জানালো ‘রেল পয়সা খরচ করছে, এলেকশন এসে যাচ্ছে তো, কিছু তো লোক দেখানো কোরতে হবে ।’ সেই সঙ্গে ভিড়ে মিশে আছে বিভিন্ন স্কুলের কিছু ছাত্র ছাত্রী । একটু উঁচু বেদি ঘেরাও করে বিদেশি ঘাসেদের সদর্প শিশির মাখা উপস্থিতি । তাতে নৃত্যরত তিন বিহুআ, আবহমানকালের সংস্কৃতি লালিত ধারাটিকে বুকে আগলে রোদ ঝড় জল বৃষ্টিতে দাঁড়ানোর অঙ্গীকারবদ্ধ। আর এর ঠিক পেছনেই আপাত সিমেন্টের পাঁচিলে শহরবাসীর জন্য এবছরের সেরা উপহার , ‘সুজলাং সুফলাং’ ! তেরঙ্গা নিয়ে আমাদের আবেগ আহ্লাদ ইতিপূর্বে নাটিকা, সিনেমা, কবিতা, আড্ডা এসবে প্রতিফলিত হয়েছে । কিন্তু কেন যেন আমার দেখার চোখ আমার বোধকে বললো, একি করেছেন শিল্পী! এতো নিজের চেতনাকে অতিক্রম করা, জনজীবনে, নদীমাতৃক রাজ্যের বহমানতায়, কৃষিক্ষেতে পুষ্টি কল্যাণ চিন্তায় এভাবে যে তেরঙা নেমে আসতে পারে, পারে মিশে যেতে, তা কি আগে দেখেছি!! এই কারু শিল্পের কাছে খোদ পতাকা কয়েক মুহূর্ত উন্মোচনের আগে পাশাপাশি নেমে এসে যেন তার দোসরকে সেলাম জানিয়ে ঊর্ধ্বে উঠে যাবার দাম্ভিক যাত্রাটি করার আদেশ নিতে এসেছে । ত্রিদিব, আপনাকে আর কি বলে সাধুবাদ জানাই, শেষ হবার পর এ কাজ তো আর আপনার থাকলো না, এ শহরবাসীর, সত্যি বলতে কি, অসমবাসীর বড় নিজস্ব, বড় আপনার সম্পত্তি হয়ে গেল । তবু ত্রিদিব, আপনার সম্মানে একবার টুপি খুললাম । আপনি সত্যিকারের ভারতবাসী, অসমবাসী খিলঞ্জিয়া । কারণ জাতি মাটি ভেটির প্রতি ভালোবাসার চূড়ান্ত টান না থাকলে এ কাজ আপনাকে দিয়ে হতো না !
          প্রজাতন্ত্র দিনের টান টান গর্ব নিয়ে আমি মোটর সাইকেল স্টার্ট দিলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে !

  ‘মনের কথায়রবি ঠাকুরের চিত্রজগত নিয়ে ত্রিদিবের কাজ দেখে ....

         সোজা কথায় সাধারণ মানুষের ব্যাপারটা এই, 'আমাদের সময় নেই'! যদিও এক অত্যন্ত গুণীজন আমায় বলেছিলেন 'তার কাছেই সময় আছে, যিনি খুব ব্যস্ত' ! যাক গে সে কথা ! বলছিলাম , সাত মিনিট তিরিশ সেকেন্ড ভিডিওতে রবীন্দ্রনাথের চিত্রশিল্প তুলে ধরা যে একপ্রকার দুঃসাধ্য তা শিল্পী মাত্রই অনুভব করেন । কিন্তু ত্রিদিব সেই দুঃসাহস করে দেখিয়েছেন শুধু বলা ঠিক নয় , বলা ভালো যারা পেইন্টিং বা চিত্রকর্ম এসব বোঝেন কম , তারাও ভিডিওটি দেখে রবি ঠাকুরের তুলির কারিগরির অ আ ক খ টুকু ধারণা করতে পারবেন । লিখে, বলে, কম্পিউটার গ্রাফিক্স করে, পরিবেশন করে ত্রিদিব তুলে ধরলেন রবীন্দ্র সাহিত্যের ওই পারে গিয়ে কবি যে অন্য একটি জগৎ রচেছিলেন তার হদিস । যারা ত্রিদিব দত্তের চ্যানেলে নতুন তারা বোধয় জানেন ত্রিদিব নিজেও এক সাধক চিত্রশিল্পী, এবং এই কথাটি একটুও বাড়িয়ে বলা নয় । ক্যানভাস ও আঁকার খাতা ছেড়ে ত্রিদিবের তুলি নগর-প্রাচীরও আলোকিত করেছে বহুবার । শহরের বহু জনপদ তো সেই কথাই বলে । আর আরেকটু বলার কথা হচ্ছে, যারা আমার কথা শুনে ভড়কে যাবেন বা আমায় উন্মাদ বলে ভাবতে চাইবেন , চান, কিন্তু আমি বলি কি রবি ঠাকুরের নিজস্ব চিত্র-দুনিয়া থেকে ত্রিদিবের ছবি আঁকার জগৎটিও কোন মঙ্গল গ্রহের কাছাকাছি নয়, বরং যেমন রবি তাঁর কিরণে আমাদের পুষ্টি বর্ধন করেন, তেমনি ত্রিদিবের শিল্প কর্ম সকল স্তরের (হ্যাঁ, শুধু বোদ্ধারা নন, অবোদ্ধাও) মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে , প্রাণের আরাম এনে দেয় চোখের দুয়ার দিয়ে ! বলার এইটুকুই !

 হীরক রাজা, করোনা ও ত্রিদিব


তিনসুকিয়া শহরে মনে হচ্ছে প্রথমবারের মতো এই অনুষ্ঠান দেখলাম । এনিমেশন ! না না তা তো মনেই হয়নি মনে হচ্ছে স্টেজ প্রোগ্রাম ! দেখছি ! ত্রিদিব আপনি চালিয়ে যান, আপনি শুধু আমাদের নয়, আপনি সমগ্র রাজ্যের গর্ব!

 

বৃহস্পতিবার, ২৫ জুন, ২০২০

রূপান্তর

 
          ।।   সিক্তা বিশ্বাস  ।।


           
(C)Image:ছবি





















গতির পরিণাম রূপান্তর! 
এ যে গবেষণায় পরিলক্ষিত
লয়ে ক্ষয়ে কাল থেকে কালান্তর!
কেটে যায় গতিবেগে অলক্ষ্যে 
অগণিত কত বসন্ত! কত কাল! 
কত সবুজ বাহু রূপান্তরিত
পাকাপোক্ত হলদে মাখা
কেমন কটকটে রুক্ষ নিরস ডাল! 
সমষ্টি সংখ্যায় কত ঋতুর সমন্বয় কাল! 
তাড়িয়ে তাড়িয়ে হয় ঈপ্সিত
কত টক ঝাল মিষ্টি চাখা! 
নীল আকাশে হলুদ পাখির 
পাখনা মেলা! আবেগ মেশা
ইচ্ছে ডানার ঝাপটা খেলা!!
কুলুকুলু ঝর্ণার আছড়ানো স্রোতে
সময়ের আবেগে ভেসে যাওয়া....
তৃপ্তির পুণ্য সঙ্গমে নাওয়া... 
এও যে অভিসার তীর্থে যাওয়া....
আকাঙ্খিত প্রেম যে যতনে সামলে রাখা
ঝিনুকের বুকের আহ্লাদি মুক্তো, 
আশা, আহ্লাদ ও স্বপন যুক্ত...
স্বপ্ন পূরণেই কালের দাপটের 
নিত্য মারমুখী আকন্ঠ গরল বিষ পান! 
হলাহলের ফলাফলে কখনও বা হৃদয় নাম্নী 
ভঙ্গুর পেলব আরশি রূপান্তরিত
মুকুর-চূর্ণ ঝনঝনানি খানখান!
সুখ-স্বপ্ন সাধনের একি বিচিত্র রূপান্তর! 
শত ধারায় প্রবাহিত অমোঘ এ রূপান্তর যুগ যুগান্তর!!!

        *************

মঙ্গলবার, ১৬ জুন, ২০২০

ফুটে উঠবার কথা

 

স্কুলে ২০১৭র জানুয়ারিতে
তই বা বয়েস হবে
, এই সপ্তদশ ছেড়ে অষ্টাদশী হতে চলেছে ও! এবং দুনিয়ার বহু অল্প বয়েসী  প্রতিভাদের মতই আবার ও প্রমাণ করলো যে শিল্পীর চেতনার উত্তরণ ঘটার কোনো বায়োলজিক্যাল সীমানা হয় না, হয় না বয়েস, পারিপার্শ্বিকতা ও সমাজের বিশেষ ভূমিকা । উল্লেখিত সূচকগুলি শুধু মাত্র দশ বারো শতাংশ প্রভাব ফেলে সাধারণ এক ব্যক্তির ওপর, যা কিনা তাঁকে সাধারণ ব্যক্তি থেকে সচেতন শিল্পীতে উন্নীত হতে একটুও বাধা দেয় না।   

৮ মার্চ, ২০২০ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বর্ণালি শিশু কল্যাণ সংস্থা, তিনসুকিয়ার আমন্ত্রণে গিয়ে সংস্থার ৩৮ তম প্রতিষ্ঠা দিনে পৌষালি গাইল চিৎকার কর মেয়ে’ , এই সুবিখ্যাত গানটি ! তো আমিও বলছিলাম পৌষালি করের কথা । উজান অসমের একেবারে প্রান্তীয় শহর তিনসুকিয়াতে বিগত কয়েক বছর ধরে সাহিত্য শিল্প সঙ্গীত এসব চর্চার একটি নিয়মিত বহমানতা এসেছে , যদিও একে স্রোত বা উচ্ছ্বাস বলা চলে না সে অর্থে ! এর কারণ অবশ্যই বহুমুখী । বাণিজ্য প্রধান সমাজ, প্রকৃত অর্থে অল্প-সংখ্যক সচেতন ব্যক্তি, রাজনৈতিক উদাসীনতা, নিজস্ব ভাষাশিক্ষার দুর্বল পরিকাঠামো, সাম্প্রদায়িক সমস্যা ইত্যাদি এই শহরকে মাখামাখি ভাবে জড়িয়ে রেখেছে । তো এই অবস্থায় গান বাজনা তো হয়, কবিতা লেখাও যায়, নাটক মঞ্চস্থ হয় , আবৃত্তি আওড়ানোও চলে ; যতক্ষণ না সেই গান মানুষের অন্তরমহলে সুচের মতো আঘাত হানে, যতক্ষণ না সেই কবিতা পড়ে অনেকের ভ্রূ কুঁচকে আসে দেশদ্রোহিতার সন্দেহে, যতক্ষণ সেই নাটক সমাজ ব্যবস্থার নগ্ন রূপকে মঞ্চে আছড়ে ফেলে অনেকের বিরাগভাজন না হয়, যতক্ষণ না সেই আবৃত্তি কানের অলিগলিতে গলিত সীসার মতো ঢেলে দিতে থাকে সত্য ও সংগ্রামের শাশ্বত বাণী ! পৌষালি কর শহর তিনসুকিয়ায় এক ব্যতিক্রমী শিল্পীর মতো মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে ! ওর গানে, আবৃত্তিতে , আঁকায় ছড়িয়ে রয়েছে সেই বহুমুখী শিল্প প্রতিভা যা মানুষকে ভাবায়, নতুনকে আলিঙ্গন করে নেবার শিক্ষা দেয় ! যুগ পাল্টাচ্ছে দ্রুত । সেই সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে সাহিত্য সংস্কৃতি সঙ্গীত এসবের আঙ্গিক । এসেছে নতুন পরীক্ষা নিরীক্ষা ! এবং সমস্যাটা ঠিক এখানেই ! পুরাতন অনেকেই একে সাদরে, সদরে নিতে পারেননি বা পারছেন না ! ফলে দুখঃজনকভাবে তারা ছিটকে যাচ্ছেন আধুনিক পরিমণ্ডল থেকে।

         একটা উদাহরণ দি । গায়কের কাজ কি? গান গেয়ে পয়সা উপার্জন করা , না সেই সঙ্গে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা রেখে জনসচেতনতা বাড়ানোতে সঙ্গীতকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা ? এই দুটো দিক একসঙ্গে থাকলেই তাঁকে প্রকৃত শিল্পী বলা চলে। সেজন্যই জোন বেজ, বব ডিলান, হ্যারি বেলাফন্ট, ভূপেন হাজরিকা, কবির সুমনরা আন্তর্জাতিক স্তরে শিল্পীর সম্মান ও স্বীকৃতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পেয়েছেন অসংখ্য জনতার মরমী হৃদয় আসনটি , যেখানে তাঁদের অবস্থান চিরকালীন হয়ে থাকবে ।

ঠিক তেমনি বহু আবৃত্তিকার ঠাণ্ডা নরম প্রেম পিরিতির ও প্রকৃতি বর্ণনার কুসুম কোমল পথে গলার সুধা ঢেলে পুরো ক্যারিয়ার যাপন করেছেন, শোনাননি সবহারাদের, দুর্গতদের ও শোষিতদের আর্তি তার আবৃত্তিতে ! তো এরাও শিল্পী , তবে ইতর ভাষায় আলুভাতে মার্কা !

২০শে মে, ২০১৮ শিলচর রেলস্টেশনে
খুব ছোটবেলা থেকে আমি পৌষালির গড়ে উঠা দেখেছি ! আর সকলের মতো ২৫শে বৈশাখে রবীন্দ্র কবিতা আবৃত্তি ও গানের প্রতিযোগীদের মতই শুরু হয়েছিল ওর পথ চলা ! কিন্তু আপন ছন্দে সুরে সেই পথের মোড় ফিরে গেছে এক নিজস্ব শৈলীতে ! শহর তিনসুকিয়াতে বাংলা ফোক, ভাটিয়ালি, লোকসঙ্গীত, বাউলের ধারার যে অসংখ্য শাখা প্রশাখা আছে , আছে গায়েন ভঙ্গি, এসব কিন্তু পৌষালি এই সবুজ বয়েসেই দেখাতে শুরু করেছে ! সেই সঙ্গে অসংখ্য স্বর প্রক্ষেপণ বিধি, বিভিন্ন  ধারার লোকগান , বাংলাদেশ , ত্রিপুরা ও উত্তর পুবের বাংলা গানের যে সরস ও সমৃদ্ধ ধারাটি রয়েছে, যাকে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এতদাঞ্চলের লোকেরা কলকাতাকেন্দ্রিকতার মায়াপাশে ভুলে রয়েছিলেন নিতান্তই অজ্ঞতার পরবশে, সেসব পৌষালির গানের সুরে প্রায়ই উঠে আসছে অধুনা সময়ে ! হ্যাঁ, শহরের অনেকের সঙ্গে কথাবার্তা বলে দায়িত্ব নিয়েই বললাম এ কথা ! যেসব বিষয় ও শিল্পীকে পৌষালি নির্বাচন করছে ওর গানের পরিবেশনায় তাঁদের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন শহরবাসী , এই প্রথম ! হ্যাঁ , ঠিক শুনলেন , এই প্রথম ! কই আগে তো তিনসুকিয়ার মঞ্চে অনুসূয়া অনাদিলের গান গাইতেন না সাধারণ শিল্পীরা, গাইতেন না হেমাঙ্গ বিশ্বাসকে, কবি আলফাজকে কি কেউ পৌষালির আগে এই শহরে আবৃত্তি করেছে ?

এই তো বিগত দীপাবলির সন্ধ্যায় হিজুগুড়িতে পৌষালি গাইল কী ঘর বানাইমু আমিএই হাছনের গান ! সে জানে আর আমি জানিএই লালনের গানটিও ! আয়োজক ছিল প্রগতি গোষ্ঠী !


  
২০১৭র জানুয়ারিতে স্কুলে
    পৌষালির কণ্ঠে গতবছর শুনেছিলাম  সুনীল মাহাতোর কথাতে কুড়মালি ঝুমুর  পিন্দারে পলাশের বনএর মতো চা বাগানের অনিন্দ্য সঙ্গীতটি ! গুয়াহাটি পাণ্ডু রেস্ট ক্যাম্পর অনুষ্ঠানে যেমন জনপ্রিয় ভূপেনদার কহুয়া বনগাইল ঠিক সেই সঙ্গে ২১ জুন , ২০১৮ বিশ্বসঙ্গীত দিবসকে কেন্দ্র করে শিলচরের বাংলা গানের দল দলছুটউদযাপন করা নিজেদের দশ বছর পূর্তি উৎসবে শিলচর রাজীব ভবনে’ ‘প্রজন্মের এককঅনুষ্ঠানে পৌষালি গাইলো আমি সুন্দর হবো’, ফারজানা ওয়াহিদ সায়ানের মাটির সাথে দোস্তি’, লালনগীতি সে কি আমার কবার কথার সঙ্গে চাটগাঁইয়া গান মধু হই হই বিষইত্যাদি !  প্রচলিত চাটগাঁইয়া গান রাধারমণ দত্তর  ভ্রমর কইও গিয়া’, অমর পালের কালারে কইরো গো মানাএর সঙ্গে কিছু রবীন্দ্রনাথের গানও ।

২১শে ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে পৌষালিকে আবৃত্তি করতে শুনি  অসম ও উত্তর পূর্বের বাংলা ও বাঙালির সবহারানোদের কথা তুলে ধরা কবি শিলচরের শক্তিপদ ব্রহ্মচারীর বিখ্যাত কবিতা উদ্বাস্তুর ডায়েরি’, অথবা ডিব্রুগড়ের কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাসের কবিতা ।

তিনসুকিয়াতে এসব গান বেশির ভাগ শিল্পীরা গান না, আবৃত্তিকারেরা করেন না । সুতরাং বোম্বাইয়া আমের মতো হিন্দি গান ছাড়া যে আমাদের শেকড়ের বাংলা গান আছে , আছে বিশ্বজনীন শ্রেণিহীন শোষিতদের কান্না, বাস্তুহারার মাটির প্রেমের গান, এসবের সঙ্গে এই ছোট শহরের শ্রোতা পরিচিত হচ্ছিলেন না, থেকে যাচ্ছিলেন  ব্রাত্য । এই কাঁচা বয়েসে পৌষালি সেই দায়িত্বটুকু পালন করে প্রকৃত শিল্পী সচেতনতার পরিচয় দিচ্ছে । প্রসঙ্গত উল্লেখ করি ইংরেজি মাধ্যমেই কিন্তু পড়াশুনা পৌষালির । সুতরাং যেমন বলেছিলাম শুরুতে, প্রতিবন্ধকতা থাকতে পারে কিন্তু তা প্রকৃত শিল্পীর গতিকে প্রতিহত করে না ।  

যারা পৌষালিকে চেনেন না , শোনেন নি তাঁদের জন্য আন্তর্জালে সক্রিয় মেয়েটির সূত্র নিচে দিয়ে ওর ইউট্যুব, ব্লগ ইত্যাদিতে যাবার পথ বাতলে রাখলাম। ঘুরে আসুন, ভালো লাগবে !

সকল শহরবাসীর পক্ষ থেকে এই নাগরিক শিল্পীর নিজের, ওর অভিভাবকের, শিক্ষকদের শুভ কামনা জানাই । এগিয়ে চলো মেয়ে !                                                    

 

https://www.youtube.com/c/MusicalDiariesPoushali

https://poushalikar.blogspot.com 

https://www.facebook.com/poushali.kar.75

 

 পৌষালির ভিডিওগুচ্ছ ০১


পৌষালির ভিডিও গুচ্ছ ০২

বৃহস্পতিবার, ১১ জুন, ২০২০

সব ভুল কি সমতুল!

 
 ।। সিক্তা বিশ্বাস ।।


 
















ভুলেই তো গেছি প্রায়! ম্রিয়মান স্মৃতিপট দর্শায়! 
সে কবে কোন যুগে ছিল, হুজুগেপানা  হৃদয় বিনিময়! 
কেমন আবছা মনে পড়ে-----
অফিসের সময়টা সুন্দর এডজাস্ট করতে
ঠিক আমার কলেজের সময় ধরে!
অবাক হয়ে ভাবতাম , 
ভালোবাসা কতো কি শেখায়! 
যত্ন করে সব খবর রাখা....
ক'টায় ক্লাস... ক'টায় কলেজ যাওয়া... ক'টায় আবার ফেরা...
তখনতো স্বপ্নেও ভাবিনি এও ভুলে যাবো!

ভুলেই তো গেছি সব! 
সেই একসাথে নাটক, সিনেমা দেখার পালা! 
ক'দিন আগে থেকেই কবে যাবো! 
কবে যাবো! জল্পনাতে কান  ঝালাপালা!
কতো না বলা কথা চোখাচোখিতে বলা...
এইতো প্রেমের আসল শিল্পকলা.... 
দূর থেকে দেখে এক ঝলকেই  কেমন বুক ধড়ফড়.... 
যেন দু'জনে দু'জনকে অহরহ বলছে , 
চিনি ওগো চিনি...জানি ওগো জানি... মানি ওগো মানি...
এত্তো সবও ভুলেই গেছি ! 
কালের দাপটে! সজোরে চাপটে ! 
দু'টি পথ দু'টি দিকে গেছে বেঁকে! 
কেমন না ভাবা বিরহের ছবি এঁকে!
সত্যি! এত্তো বছরে একবারওতো পড়েনি মনে ! 
কোথা ছিল সেদিনের সেই সে টান! সেই আকর্ষণ! 
একে অন্যের অন্তপ্রাণ! প্রাণের দোসর !
সময়ের সাথে জীবন ও কর্তব্যের দাবিতে 
সব ছিল কেমন তলিয়ে যাওয়া অঘটা! বিস্মৃত!
আজ হঠাৎ কোনও এক বন্ধুর পাতায় 
অজান্তে চোখ পড়ে যায় তোমার লেখায়! 
ছোট্ট একটি মন্তব্য! কি তার ইন্দ্রজাল! 
ম্যাজিকের মতো সুস্পষ্ট হয়ে যায় বিস্মৃত স্মৃতিপট! 
কেমন দিন ক্ষণ সহ মনে পড়ে যায় স---ব চটপট!
ফিরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে সেই মুছে যাওয়া দিনগুলোতে.... 
ইচ্ছে করছে জুড়ে দিতে সেই ছিঁড়ে যাওয়া দোতারার তারগুলো....
যদি আবার বেজে ওঠে..... 
ছেয়ে যায় সুরে সুরে ...... 
ঠেলে দেয় বাস্তবের সব বেড়াজাল!
কই এবারে তো ভুলতে ইচ্ছে হচ্ছে না! 
সযতনে পুষে রাখতে ইচ্ছে হচ্ছে অন্তরের মণিকোঠায়...
ভাবছি শুধু কি করে সব ভুলেই ছিলাম! 
একি ভোলা যায়! নাকি নতুন স্বাদের খেলার নেশায় ,
 কিংবা বাঁচার তাগিদে অথবা মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টায়!!
                    *****************

রবিবার, ৭ জুন, ২০২০

দেশান্তরে পরিবেশ



(পরিবেশ মনস্ক সাংবাদিক প্রয়াত  পীযুষ কান্তি দাস-এর প্রতি উৎসর্গীকৃত)


প্রয়াত  পীযুষ কান্তি দাস
কোন অনুষ্ঠানে সঞ্চালক যে ভুমিকাটুকু পালন করেন, এই উত্তর সম্পাদকীয় লিখতে গিয়ে আমাকে তাই করতে হচ্ছে যেহেতু অন্যদের মতামত এবং বার্তা নিয়েই  আজকের এই লিখাটা। সে রকম একটা অনুষ্ঠান বাস্তবে যদি করা হতো, সেখানে সঞ্চালক হিসেবে নিজের মত প্রকাশের অবকাশ খুব কমই থাকতোতাই নিজস্ব মতামত দেওয়া থেকে বিরত থাকতেই হচ্ছে।
সঞ্চালনা এবং ভাষান্তরঃ
পার্থঙ্কর চৌধুরী
 অধ্যাপক, বাস্তু ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগ,
আসাম বিশ্ববিদ্যালয়, শিলচর,
মুঠোফোন ∶ ৯৪৩৫০৭৮২৯৬
  
শঙ্খচিল দেখছিলাম, আর ভাবছিলাম সিনেমার নামটা নিয়ে। পাখিগুলোতো ভূগোলের জ্ঞান থাকে না! ভৌগলিক সীমানার ধার ধারে না আপনার আমার পরিবেশটাও ঠিক তাই দেশ এবং বিদেশের যে যেখানেই রয়েছেন, ঠিক ওই ছোট্ট মেয়েটার স্বাস্থ্যের মতো পরিবেশ নিয়ে যে উদ্বেক সেটাও কিন্তু ভৌগোলিক সীমারেখাতে সীমাবদ্ধ নেই এই প্রেক্ষিতেই আজকের এই দিনটি নিয়ে, দেশের ভুখন্ডের বাইরে থাকা বেশ কিছু বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে কথা বলেছিলাম জানতে চেয়েছি, দিনটি নিয়ে তাদের কি ভাবনা চিন্তা, যেসব দেশে তাঁরা রয়েছেন, সেসব জায়গার পরিবেশের খুনসুটি, এবং এ দিনটির জন্য কোনও বিশেষ বার্তা যাদের সঙ্গে কথা হচ্ছিল, তাদের কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কর্মরত কিম্বা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, আবার নতুন প্রজন্মের অনেকেই গবেষনায় রত কারোও সাথে পরিচয় হয়তঃ বা কোন সেমিনার-সিম্পসিয়াতে, কিম্বা শুধুই  ইমেল মারফৎ

রমেশ বুনোরতন থাইল্যান্ডের মহীডল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ষাটোর্ধ বয়স ফুরফুরে মেজাজ  চেহারা না দেখে কথা বললে মনে হবে উঠতি যুবক কথায় কথায় বললেন, ১৯৭৪ সাল থেকে প্রতি বছরই এই ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসটি পালন করে আসছেন জাতিসংঘের গৃহীত এই বিশ্ব পরিবেশ দিবসটা পরিবেশ সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের প্রধান বাহন হিসেবে কাজ করছে বলে জানালেনপ্রতি বছর, এক একটি আলাদা আলাদা থিম নিয়ে দিনটা পালিত হয়। ২০২০, এ বছরের থিমটি হ'ল ‘জীব বৈচিত্র্য উদযাপন’ (Celebrate Biodiversity) কথা প্রসঙ্গে অধাপক বুনোরতন বললেন, প্রায় চার দশক ধরে তিনি সংরক্ষণের প্র্যাকটিশনার। কিন্তু তারও অনেক বেশি সময় ধরে তিনি এই প্রচলিত সংরক্ষণের মান সম্পর্কে সচেতন। প্রত্যেকটি দিনই উনার কাছে এক একটি পরিবেশ দিবস, এবং প্রতিদিনই  তিনি তা উদযাপন করেন
দুঃখ করে বুনোরতন বললেন, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, বিশেষতঃ, গত দুই দশকে, পরিবেশের গুনগত অবক্ষয় দেখলে, ‘হৃদয় শিউরে উঠে’! সত্যিই তো! পরিবেশের দুর্বল ও ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু অবস্থা মূলত আমাদের জন্যই। এটা খুব বেদনাদায়কহ্যাঁ, এটা সত্যি যে জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের পরিবেশকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে। তবুও, ভালো করে দেখতে গেলে সেটা আবার সেই মানুষের জন্যই, যারা জলবায়ু পরিবর্তনের গতিটাকে আরও ত্বরান্বিত করছে। প্রচণ্ড ক্ষমতাশীল এবং দোর্দণ্ডপ্রতাপ এই মানুষের জন্যই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট হওয়া পরিবেশের দ্রুত পরিবর্তনগুলি প্রশমিত করার যে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, সেই স্থিতিস্থাপকতা বিকাশের সুযোগ (Opportunity to develop resilience) খুব কমই হচ্ছে! পরিবেশের প্রত্যক্ষ উপকারভোগী হওয়া সত্ত্বেও যতই উপার্জন এবং জীবিকা নির্বাহের দিকে ধাবিত হচ্ছে মানবকুল, ততই পরিবেশের স্বাস্থ্যকর অর্থাৎ সুফলদায়ী দিকটাকে আরও খারাপ করে তোলা হচ্ছে এতসবের পরও অন্ধদৃষ্টিকে মুলধন করে পরিবেশের ধ্বংসের দিকে আমাদের যে যাত্রা, সেটা থেকে পিছ পা হতে আমরা যেন নারাজ।  পৃথিবীতে সম্ভবত মানুষই একমাত্র প্রজাতি, যারা এই ধরনের আত্মঘাতী আচরণ করছে !

রাখঢাক না করেই অধ্যাপক বললেন, যদি আমি আমার মতো করে বলি, তবে বলবো, এভাবে বছর বছর পরিবেশের জন্য ঘটা করে এই ফিফথ জুন উদযাপনের প্রয়োজন নেই। আমি চাই, প্রতিটি দিন, এমনকি প্রতিটি মুহূর্ত নিবেদিত হোক পরিবেশের জন্য। এছাড়া, আমি চাই না দিনটি নিয়ে কোন সেলিব্রেশন হোকযদিও পরিবেশ দিবসের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে পরিবেশ সুরক্ষার জন্য সচেতনতা  গড়ে তোলা যাতে করে পরিবেশ রক্ষার জন্য একশন প্ল্যানগুলা আরো বেশী কার্যকরী করা সম্ভব হয়, কিন্তু বাস্তবটা ঠিক তার বিপরীত। বাস্তবে আমরা দেখছি, পরিবেশ রক্ষার এই গুঁড় তত্ত্বটুকু উদযাপনকারীরা অনুধাবন করতে পারছেন না! পরিবেশ রক্ষার ‘তত্ত্ব-বার্তা’-গুলি  সত্যি সত্যিই উদযাপনকারীদের কানের ভেতর গিয়ে পৌঁছে না। বেশীর ভাগ দেশের লোকেরাই এটাকে ‘ক্রিসমাস’ বা ‘দিওয়ালি’-র মতো উদযাপন করেনসে রকম না করে, এই দিনটা আমাদের অন্তর্দর্শন এবং দৃঢ়় পদক্ষেপের দিন হওয়া উচিত। আমি সেই দিনটার স্বপ্ন দেখছি যেদিন পরিবেশের হানিকারক কাজগুলোকে প্রকৃত অর্থে অপরাধ, মানে আরও জোরালো ভাষায় বলতে গেলে, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের সমান কাঠগড়ায় বিচার করা হবে এক বুক নিরাশার মধ্যেও  আশা করছি, এ বছরের পরিবেশ দিবসে শেষ পর্যন্ত সম্বিত ফিরবে এবং লোকেরা বুঝতে সক্ষম হবে যে  পরিবেশের অবনতির সাথে সাথে তাদের আরও বেশী করে হারানো ছাড়া আর কিছুই থাকবে না। দরিদ্র ও প্রান্তিক বর্গের লোকেরা সাধারণতঃ প্রথম ধাক্কায়  এটা টের পায়। আর শক্তিশালী ধনীরা ? তাদেরও এ থেকে পরিত্রান নেইশুধু সময়ের ব্যাপার। অত্যাধুনিক হাজারো প্রযুক্তি সত্ত্বেও, আমরা এখনও আমরা জীববৈচিত্রের উপর নির্ভরশীল। জীববৈচিত্র্য সমস্ত জৈবিক সিস্টেম এবং প্রক্রিয়াগুলির একটি মৌলিক উপাদান।  জীবিকা এবং জীবন উপভোগের জন্য জীব বৈচিত্র্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই পথে না হেটে, এই মানুষ নামের প্রজাতিটা যা করছে, তা তো নিজেরাই নিজেদের কফিন বানিয়ে রাখার সামিল!

    নেপালের ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুকেশ কুমার চালিশে। মাস ছয়েক হল, অবসর নিয়েছেন। কথায় কথায় বললেন, পৃথিবীর মোট স্থলভাগের শতকরা মাত্র ০.১ থাকলেও উনাদের দেশে বেশ কিছু আকর্ষণীয় জীববৈচিত্র্য রয়েছেহিমালয় অঞ্চলের চারটি হটস্পটগুলির মধ্যে সেদেশ জীববৈচিত্রের  একটি হটস্পটের অংশ। ছয়টি জীব সংমন্ডল নেপালে রয়েছে। নেপালের মোট অঞ্চলের প্রায় ২৫% এলাকা জুড়ে সুরক্ষিত বনাঞ্চল রয়েছে, এর মধ্যে ৯টি জাতীয় উদ্যান, ৩টি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণাগার, ৫টি সংরক্ষণ অঞ্চল, ১টি হান্টিং রিজার্ভ রয়েছে এবং সেগুলোর প্রত্যেকটাকে ঘিরে বিশাল জায়গা জুড়ে বাফার অঞ্চল রয়েছে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ সম্পর্কিত সেদেশে স্থানীয় লোকেদের মধ্যে কিছু প্রচলিত রীতি বংশ পরম্পরায় চলে আসছে এবং সংরক্ষন সম্পর্কে তাদের জ্ঞান অন্য জায়গার আরো দশজন লোকের তুলনায় বরং ভালই জানা। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে অনেক পরে, অর্থাৎ ১৯৭০ সাল থেকে সরকারি পর্যায়ে সেদেশে সংরক্ষণের কাজ হাতে নেওয়া হয়জীববৈচিত্র্য নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তাদের দেশ সক্রিয়ভাবে যোগদান করে চুক্তি সাক্ষর করেছে এবং জীববৈচিত্র্যের বিভিন্ন দিক নিয়েও নিরন্তর গবেষণা করে যাচ্ছে। হিমালয়ের পাদদেশের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে দেশটি রয়েছেপ্রয়োজনমতো বৃষ্টিপাতের ফলে সেখানে প্রচুর অরণ্য রয়েছে এবং সেগুলোতে বন্য প্রাণীদের অবাধ বিচরন চোখে পড়ে এদের মুক্ত চলাফেরার মধ্য দিয়ে উনার যে উপলব্ধি, তা পরিবেশের সুস্বাস্থ্যের ইঙ্গিত দেয় এবং বিশেষ করে এই লকডাউনের সময় বিভিন্ন দূষণকারী এজেন্টকে হ্রাস করার সহায়ক বলে মনে হয়। তাই, পরিবেশ দিবসে উনার এটাই প্রত্যাশা যে  গোটা বিশ্বের লোকেদের জন্য জীববৈচিত্র্যে যেন বজায় থাকে, পাশাপাশি পরিমণ্ডলটাকেও যেন স্বাস্থ্যকর ও দূষণ মুক্ত রাখা যায়৫ জুন দিনটি সম্মিলিত প্রচেষ্টার দিন এবং জীববৈচিত্র্য, মানব এবং সামগ্রিকভাবে আমাদের সৌরজগতের এই একমাত্র জীবন্ত গ্রহকে বাঁচানোর জন্য অনুশীলন শুরু এবং বজায় রাখার অঙ্গীকার করার দিন। 

হাঙ্গেরির জেন্ট ইস্তভান বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্যপ্রাণী সংরক্ষন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত গবেষিকা, শ্রেয়া। বাঙালি মেয়ে। বেশ কবছর থেকে সে দেশে থাকলেও, জন্মসুত্রে ভারতীয়।  বলল, ভারত সম্পর্কে ভেবে আমার মনে প্রথম যে শব্দটি আসে তা হ'ল 'বৈচিত্র্য'; প্রাকৃতিক এবং নৃতাত্ত্বিক দুটোই দেশজুড়ে সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক দৃশ্য, প্রজাতি এবং বাস্তুতন্ত্রের বৈচিত্রতা পাশাপাশি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বৈচিত্র্য দেশটাকে বিশ্বের অন্যান্য অংশ থেকে আলাদা করে তোলে।
পরিবেশ উদযাপনের এই দিনটিতে, চারপাশের যে প্রাকৃতিক ঘটনা ঘটছে তার ধারাবাহিকতা এবং এদের সম্ভাব্য মোকাবিলা নিয়ে সবার জন্য একটি সুস্পষ্ট চিন্তাভাবনা এবং রূপরেখা তৈরি করা খুবই জরুরিঅতিমারি, ভূমিকম্প, দাবানল, সুপার ঘূর্ণিঝড়ের মতো একের পর এক বিশ্বব্যাপী মহামারীর আকস্মিক প্রাদুর্ভাব সব কিছুই যেন এ বছর হচ্ছে। এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পিছনে থাকা অদৃশ্য বাস্তব টাকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত আমরা সত্যই প্রকৃতির করুনায় রয়েছি তা যেন বার বারই মনে হচ্ছে।
করোনা আক্রান্ত ভারতের বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করে আমাদের জনগণ ও সরকার পরিস্থিতি মোকাবেলায় কঠোর সময়ের মুখোমুখি হচ্ছেনবিভিন্ন পেশার লোকেরা যদি এই সমস্যাগুলির সমাধানের জন্য একত্র হয়ে সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করেন, তবে সম্ভবত একটি উপায় বেরোতে করতে পারেবন্যজীবন সংরক্ষণের শিক্ষার্থী হওয়ায়, আমার দৃষ্টিকোণ থেকে, বাস্তুসংস্থান এবং বন্য প্রজাতির উদ্ভিদ এবং প্রাণীজগতের গুরুত্ব সম্পর্কে সারা দেশে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে সচেতনতা যথেষ্ট অবদান রাখতে পারেএকইসাথে গবেষণা  এবং বৈজ্ঞানিক অধ্যয়নকেও  গুরুত্ব দিতে হবে। আমি দৃঢ়়ভাবে বিশ্বাস করি যে পরিবেশের স্বার্থে এই পরিবেশ দিবসে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসা উচিত এবং সুস্থ সমাজ, আদর্শ পরিবেশ শিক্ষা এবং একটি সচেতন জাতি হিসাবে ইতিবাচক বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা উচিত।

সিঙ্গাপুরের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এন্ডি আংগ জানালেন, আসুন, বিশ্ব পরিবেশ দিবসটি উদযাপন করার সাথে সাথে  আমরা আমাদের চারপাশের সুন্দর প্রকৃতির প্রশংসা করার জন্য কিছুটা সময় ব্যয় করি এবং আমাদের প্রাকৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় একসাথে কাজ করি।

বাংলাদেশ, ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্যপ্রাণী গবেষক, হাসান আল-রাজি জানালেন অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এ দিনটি খুবই উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে উদযাপন করা হবে বিশেষ করে পরিবেশ সংরক্ষণ এবং পরিবেশ নিয়ে গবেষণা করে এ ধরনের সংগঠনগুলো এই দিনটিকে পালন করতে বিশেষ উৎসাহী। বাংলাদেশ সরকারের বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এই দিনটিকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতি বছর উদযাপন করে থাকেপরিবেশের প্রয়োজনীয়তা পরিবেশ সংরক্ষণ এর তাৎপর্য এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় আমাদের করণীয় বিষয়গুলোকে সকলের সামনে তুলে ধরাই এই দিনটির উদ্দেশ্য। প্রতি বৎসর ঢাকার আগারগাঁওয়ের বন ভবনে এই দিনটি উদযাপিত হয়। দিনটিকে কেন্দ্র করে রেলি, সেমিনার, আলোচনা সভা ইত্যাদি  আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন, স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই আয়োজনে অংশগ্রহণ করে।
এ বছরের পরিবেশ দিবসের বিষয়টা পুরোপুরি ভিন্ন।  পরিবেশ দিবস উদযাপনের ঠিক এই মুহূর্তে পুরো পৃথিবী এমন একটা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে যেখানে জনসমাগম পুরোপুরি বিপদজনক। করোনাভাইরাস  এর প্রাদুর্ভাবের ফলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে। তাই এবছর হয়তো বা আগের বছরগুলোর মত পরিবেশ দিবস উদযাপন করা সম্ভব হবে না। তবে এটাও সত্য যে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এর জন্য দিনটির উদযাপন থেমে থাকবে না।  বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই উদযাপন হবে প্রযুক্তির ব্যবহারের মধ্য দিয়ে। ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে ঘরে বসেই উদযাপন করা হবে পরিবেশ দিবস। এই কদিন আগে (অর্থাৎ ২২শে মে) বিশ্ব জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের দিনটিও ঠিক এভাবেই পালিত হয়েছে।
করোনাভাইরাস এবছর আমাদেরকে বুঝিয়ে দিল যে পৃথিবীতে মানব সভ্যতা টিকে থাকার জন্য পরিবেশের প্রতি যত্নশীল হওয়া কতটুকু প্রয়োজন। এই  ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এর জন্য অনেক জায়গাতেই পরিবেশ তার নিজের অবস্থায় ফিরে আসছে বলে অনেকে নামি-দামি লোকেরাই মন্তব্য করছেনতবে আমার মনে হচ্ছে, করোনা কালীন সময়েও কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা পরিবেশ দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে।  নিজেদের সুরক্ষার জন্য আমরা মাস্ক ব্যবহার করছি, হ্যান্ড গ্লোবসও ব্যবহার করছিব্যবহারশেষে সেগুলো ছুড়ে ফেলে দিচ্ছি এখানে ওখানে যত্র তত্র। এইদিকটাতে  বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই নিয়ম মানা হচ্ছে না। কোন কোন দেশে নীতি নির্দেশিকা থাকলেও, সেভাবে সেটা দেখভাল করা হচ্ছে না।  এতে করে পরিবেশ, বিশেষ করে জলজ পরিবেশ হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। তাই বলছিলাম, এই পরিবেশ দিবসে বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে আমাদের পরিবেশের প্রতি আরও যত্নশীল হতে হবে, পরিবেশের ভারসাম্য যাতে নষ্ট না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।