মঙ্গলবার, ৩০ জুন, ২০২০
কেইসড্রাট
সোমবার, ২৯ জুন, ২০২০
ত্রিদিবকে নিয়ে কিছু কথা
প্রজাতন্ত্র দিনে ত্রিদিবের শিল্প
২৬জানুয়ারী ২০২০ ! সকালে স্কুলের প্রজাতন্ত্র উদযাপন অনুষ্ঠান শেষ করে ফিরতি পথে মোটর সাইকেল যেন নিজেই ঘুরে গেল নতুন স্টেশনের দ্বিতীয় গেটে । কচি কাঁচারা বিস্ফারিত চোখে এলোমেলো ভিড় করে আছে । অটো চালক কয়েকজন গুটখা মুখে পুরে ঢিলেঢালা মন্তব্য দিয়ে জানালো ‘রেল পয়সা খরচ করছে, এলেকশন এসে যাচ্ছে তো, কিছু তো লোক দেখানো কোরতে হবে ।’ সেই সঙ্গে ভিড়ে মিশে আছে বিভিন্ন স্কুলের কিছু ছাত্র ছাত্রী । একটু উঁচু বেদি ঘেরাও করে বিদেশি ঘাসেদের সদর্প শিশির মাখা উপস্থিতি । তাতে নৃত্যরত তিন বিহুআ, আবহমানকালের সংস্কৃতি লালিত ধারাটিকে বুকে আগলে রোদ ঝড় জল বৃষ্টিতে দাঁড়ানোর অঙ্গীকারবদ্ধ। আর এর ঠিক পেছনেই আপাত সিমেন্টের পাঁচিলে শহরবাসীর জন্য এবছরের সেরা উপহার , ‘সুজলাং সুফলাং’ ! তেরঙ্গা নিয়ে আমাদের আবেগ আহ্লাদ ইতিপূর্বে নাটিকা, সিনেমা, কবিতা, আড্ডা এসবে প্রতিফলিত হয়েছে । কিন্তু কেন যেন আমার দেখার চোখ আমার বোধকে বললো, একি করেছেন শিল্পী! এতো নিজের চেতনাকে অতিক্রম করা, জনজীবনে, নদীমাতৃক রাজ্যের বহমানতায়, কৃষিক্ষেতে পুষ্টি কল্যাণ চিন্তায় এভাবে যে তেরঙা নেমে আসতে পারে, পারে মিশে যেতে, তা কি আগে দেখেছি!! এই কারু শিল্পের কাছে খোদ পতাকা কয়েক মুহূর্ত উন্মোচনের আগে পাশাপাশি নেমে এসে যেন তার দোসরকে সেলাম জানিয়ে ঊর্ধ্বে উঠে যাবার দাম্ভিক যাত্রাটি করার আদেশ নিতে এসেছে । ত্রিদিব, আপনাকে আর কি বলে সাধুবাদ জানাই, শেষ হবার পর এ কাজ তো আর আপনার থাকলো না, এ শহরবাসীর, সত্যি বলতে কি, অসমবাসীর বড় নিজস্ব, বড় আপনার সম্পত্তি হয়ে গেল । তবু ত্রিদিব, আপনার সম্মানে একবার টুপি খুললাম । আপনি সত্যিকারের ভারতবাসী, অসমবাসী খিলঞ্জিয়া । কারণ জাতি মাটি ভেটির প্রতি ভালোবাসার চূড়ান্ত টান না থাকলে এ কাজ আপনাকে দিয়ে হতো না !
প্রজাতন্ত্র দিনের টান টান গর্ব নিয়ে আমি মোটর সাইকেল স্টার্ট দিলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে !
‘মনের কথায়’ রবি ঠাকুরের চিত্রজগত নিয়ে ত্রিদিবের কাজ দেখে ....
সোজা কথায় সাধারণ মানুষের ব্যাপারটা এই, 'আমাদের
সময় নেই'! যদিও এক অত্যন্ত গুণীজন আমায় বলেছিলেন 'তার কাছেই সময় আছে, যিনি খুব ব্যস্ত' ! যাক গে সে কথা ! বলছিলাম , সাত মিনিট তিরিশ সেকেন্ড
ভিডিওতে রবীন্দ্রনাথের চিত্রশিল্প তুলে ধরা যে একপ্রকার দুঃসাধ্য তা শিল্পী মাত্রই
অনুভব করেন । কিন্তু ত্রিদিব সেই দুঃসাহস করে দেখিয়েছেন শুধু বলা ঠিক নয় , বলা ভালো যারা পেইন্টিং বা চিত্রকর্ম এসব বোঝেন কম , তারাও ভিডিওটি দেখে রবি ঠাকুরের তুলির কারিগরির অ আ ক খ টুকু ধারণা করতে
পারবেন । লিখে, বলে, কম্পিউটার গ্রাফিক্স
করে, পরিবেশন করে ত্রিদিব তুলে ধরলেন রবীন্দ্র সাহিত্যের ওই
পারে গিয়ে কবি যে অন্য একটি জগৎ রচেছিলেন তার হদিস । যারা ত্রিদিব দত্তের চ্যানেলে
নতুন তারা বোধয় জানেন ত্রিদিব নিজেও এক সাধক চিত্রশিল্পী, এবং
এই কথাটি একটুও বাড়িয়ে বলা নয় । ক্যানভাস ও আঁকার খাতা ছেড়ে ত্রিদিবের তুলি নগর-প্রাচীরও
আলোকিত করেছে বহুবার । শহরের বহু জনপদ তো সেই কথাই বলে । আর আরেকটু বলার কথা হচ্ছে,
যারা আমার কথা শুনে ভড়কে যাবেন বা আমায় উন্মাদ বলে ভাবতে চাইবেন ,
চান, কিন্তু আমি বলি কি রবি ঠাকুরের নিজস্ব
চিত্র-দুনিয়া থেকে ত্রিদিবের ছবি আঁকার জগৎটিও কোন মঙ্গল গ্রহের কাছাকাছি নয়,
বরং যেমন রবি তাঁর কিরণে আমাদের পুষ্টি বর্ধন করেন, তেমনি ত্রিদিবের শিল্প কর্ম সকল স্তরের (হ্যাঁ, শুধু
বোদ্ধারা নন, অবোদ্ধাও) মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে , প্রাণের আরাম এনে দেয় চোখের দুয়ার দিয়ে ! বলার এইটুকুই !
হীরক রাজা, করোনা ও ত্রিদিব
তিনসুকিয়া শহরে মনে হচ্ছে প্রথমবারের মতো এই অনুষ্ঠান দেখলাম । এনিমেশন ! না না তা তো মনেই হয়নি মনে হচ্ছে স্টেজ প্রোগ্রাম ! দেখছি ! ত্রিদিব আপনি চালিয়ে যান, আপনি শুধু আমাদের নয়, আপনি সমগ্র রাজ্যের গর্ব!
বৃহস্পতিবার, ২৫ জুন, ২০২০
রূপান্তর
(C)Image:ছবি |
মঙ্গলবার, ১৬ জুন, ২০২০
ফুটে উঠবার কথা
স্কুলে ২০১৭র জানুয়ারিতে |
৮ মার্চ, ২০২০ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ‘বর্ণালি শিশু কল্যাণ সংস্থা, তিনসুকিয়া’র আমন্ত্রণে গিয়ে সংস্থার ৩৮ তম প্রতিষ্ঠা দিনে পৌষালি গাইল ‘চিৎকার কর মেয়ে’ , এই সুবিখ্যাত গানটি ! তো আমিও বলছিলাম পৌষালি করের কথা । উজান অসমের একেবারে প্রান্তীয় শহর তিনসুকিয়াতে বিগত কয়েক বছর ধরে সাহিত্য শিল্প সঙ্গীত এসব চর্চার একটি নিয়মিত বহমানতা এসেছে , যদিও একে স্রোত বা উচ্ছ্বাস বলা চলে না সে অর্থে ! এর কারণ অবশ্যই বহুমুখী । বাণিজ্য প্রধান সমাজ, প্রকৃত অর্থে অল্প-সংখ্যক সচেতন ব্যক্তি, রাজনৈতিক উদাসীনতা, নিজস্ব ভাষাশিক্ষার দুর্বল পরিকাঠামো, সাম্প্রদায়িক সমস্যা ইত্যাদি এই শহরকে মাখামাখি ভাবে জড়িয়ে রেখেছে । তো এই অবস্থায় গান বাজনা তো হয়, কবিতা লেখাও যায়, নাটক মঞ্চস্থ হয় , আবৃত্তি আওড়ানোও চলে ; যতক্ষণ না সেই গান মানুষের অন্তরমহলে সুচের মতো আঘাত হানে, যতক্ষণ না সেই কবিতা পড়ে অনেকের ভ্রূ কুঁচকে আসে দেশদ্রোহিতার সন্দেহে, যতক্ষণ সেই নাটক সমাজ ব্যবস্থার নগ্ন রূপকে মঞ্চে আছড়ে ফেলে অনেকের বিরাগভাজন না হয়, যতক্ষণ না সেই আবৃত্তি কানের অলিগলিতে গলিত সীসার মতো ঢেলে দিতে থাকে সত্য ও সংগ্রামের শাশ্বত বাণী ! পৌষালি কর শহর তিনসুকিয়ায় এক ব্যতিক্রমী শিল্পীর মতো মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে ! ওর গানে, আবৃত্তিতে , আঁকায় ছড়িয়ে রয়েছে সেই বহুমুখী শিল্প প্রতিভা যা মানুষকে ভাবায়, নতুনকে আলিঙ্গন করে নেবার শিক্ষা দেয় ! যুগ পাল্টাচ্ছে দ্রুত । সেই সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে সাহিত্য সংস্কৃতি সঙ্গীত এসবের আঙ্গিক । এসেছে নতুন পরীক্ষা নিরীক্ষা ! এবং সমস্যাটা ঠিক এখানেই ! পুরাতন অনেকেই একে সাদরে, সদরে নিতে পারেননি বা পারছেন না ! ফলে দুখঃজনকভাবে তারা ছিটকে যাচ্ছেন আধুনিক পরিমণ্ডল থেকে।
একটা উদাহরণ দি । গায়কের কাজ কি? গান গেয়ে পয়সা উপার্জন করা , না সেই সঙ্গে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা রেখে জনসচেতনতা বাড়ানোতে সঙ্গীতকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা ? এই দুটো দিক একসঙ্গে থাকলেই তাঁকে প্রকৃত শিল্পী বলা চলে। সেজন্যই জোন বেজ, বব ডিলান, হ্যারি বেলাফন্ট, ভূপেন হাজরিকা, কবির সুমনরা আন্তর্জাতিক স্তরে শিল্পীর সম্মান ও স্বীকৃতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পেয়েছেন অসংখ্য জনতার মরমী হৃদয় আসনটি , যেখানে তাঁদের অবস্থান চিরকালীন হয়ে থাকবে ।
ঠিক তেমনি বহু আবৃত্তিকার ঠাণ্ডা নরম প্রেম পিরিতির ও প্রকৃতি বর্ণনার কুসুম কোমল পথে গলার সুধা ঢেলে পুরো ক্যারিয়ার যাপন করেছেন, শোনাননি সবহারাদের, দুর্গতদের ও শোষিতদের আর্তি তার আবৃত্তিতে ! তো এরাও শিল্পী , তবে ইতর ভাষায় আলুভাতে মার্কা !
২০শে মে, ২০১৮ শিলচর রেলস্টেশনে |
এই তো বিগত দীপাবলির সন্ধ্যায় হিজুগুড়িতে পৌষালি গাইল ‘কী ঘর বানাইমু আমি’ এই হাছনের গান ! ‘সে জানে আর আমি জানি’ এই লালনের গানটিও ! আয়োজক ছিল প্রগতি গোষ্ঠী !
২০১৭র জানুয়ারিতে স্কুলে |
২১শে ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে পৌষালিকে আবৃত্তি করতে শুনি অসম ও উত্তর পূর্বের বাংলা ও বাঙালির সবহারানোদের কথা তুলে ধরা কবি শিলচরের শক্তিপদ ব্রহ্মচারীর বিখ্যাত কবিতা ‘উদ্বাস্তুর ডায়েরি’, অথবা ডিব্রুগড়ের কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাসের কবিতা ।
তিনসুকিয়াতে এসব গান বেশির ভাগ শিল্পীরা গান না, আবৃত্তিকারেরা করেন না । সুতরাং বোম্বাইয়া আমের মতো হিন্দি গান ছাড়া যে আমাদের শেকড়ের বাংলা গান আছে , আছে বিশ্বজনীন শ্রেণিহীন শোষিতদের কান্না, বাস্তুহারার মাটির প্রেমের গান, এসবের সঙ্গে এই ছোট শহরের শ্রোতা পরিচিত হচ্ছিলেন না, থেকে যাচ্ছিলেন ব্রাত্য । এই কাঁচা বয়েসে পৌষালি সেই দায়িত্বটুকু পালন করে প্রকৃত শিল্পী সচেতনতার পরিচয় দিচ্ছে । প্রসঙ্গত উল্লেখ করি ইংরেজি মাধ্যমেই কিন্তু পড়াশুনা পৌষালির । সুতরাং যেমন বলেছিলাম শুরুতে, প্রতিবন্ধকতা থাকতে পারে কিন্তু তা প্রকৃত শিল্পীর গতিকে প্রতিহত করে না ।
যারা পৌষালিকে চেনেন না , শোনেন নি তাঁদের জন্য আন্তর্জালে সক্রিয় মেয়েটির সূত্র নিচে দিয়ে ওর ইউট্যুব, ব্লগ ইত্যাদিতে যাবার পথ বাতলে রাখলাম। ঘুরে আসুন, ভালো লাগবে !
সকল শহরবাসীর পক্ষ থেকে এই নাগরিক শিল্পীর নিজের, ওর অভিভাবকের, শিক্ষকদের শুভ কামনা জানাই । এগিয়ে চলো মেয়ে !
https://www.youtube.com/c/MusicalDiariesPoushali
https://poushalikar.blogspot.com
https://www.facebook.com/poushali.kar.75
পৌষালির ভিডিওগুচ্ছ ০১
বৃহস্পতিবার, ১১ জুন, ২০২০
সব ভুল কি সমতুল!
রবিবার, ৭ জুন, ২০২০
দেশান্তরে পরিবেশ
প্রয়াত পীযুষ কান্তি দাস |
পার্থঙ্কর চৌধুরী