“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

শুক্রবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৩

তুমি আমার অনেক কিছুই,আমি তোমার কেউনা

(c)ছবি


আমার প্রিয় শহরটায় নাট্যচর্চা সবকালেরই ক্লাসিক্যাল পর্যায়ের। মনে আছে,বাবাকে ছোটবেলায় একটা নাটকে রাক্ষস হতে দেখেছিলাম। নাটক চলাকালীন রাজা বাবার কান কেটে দিয়েছিল বলে অডিয়েন্সের চেয়ার থেকে চিৎকার করে কেঁদে উঠেছিলাম। নাটক সেরে বাবা ফিরে আসার পর বুঝতে পেরেছিলাম, নাটকে আসলে সবকিছুই মিথ্যে মিথ্যে হয়, তখন থেকেই বোধ হয় সত্যি সত্যি কি হয় তা জানবার ইচ্ছেগুলো সুযোগ পেয়ে গেছিল তীব্র হয়ে ওঠার। যাই হোক, বাবা জেঠুদের কেউই শেষপর্যন্ত সেই ক্লাসিক দলতন্ত্রে আর বিশ্বাস রাখতে পারেননি।
            যারা ইদানিং বিশ্বাস রাখছেন, কিশোর বয়স থেকে ওরাই আমার হিরো। তাদের সাথে অনেকবারই নাটক করার সুযোগ হয়েছিল। তাদের চিনেছি,মননের অনেক জটিলতা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এমনই একটা নাটকের রিহারসেলের সময় হথাৎ ঝিলমিলকে দেখেছিলাম। প্রথমদিন তাকে দেখে একটু বিরক্তিবোধ হয়েছিল। কেননা রিহারসেল রুমের সামনে প্রায় দু’ঘণ্টা অনবরত ফোনে কথা বলতে দেখেছিলাম ওকে। ডিজিটাল বিপ্লবের প্রভাব সমৃদ্ধ এই প্রতিরূপটাকে আমি হোস্টেল জীবন থেকেই সহ্য করতে পারিনি। নিজেও চেষ্টা করেছিলাম কয়েকবার, একপ্রকারের খামখেয়ালী আচ্ছন্নতাভরা যাপনের প্রতিফলন ছাড়া কিছুই পাইনি তাতে।
          নাটক ঘনিয়ে আসছিল ,আমাদের রিহার্সেল হচ্ছিল না। কেউ ডিরেক্টারের কর্তব্য, কেউ পজেটিভিটির সঙ্গায় যখন আগ্রহ সহকারে ডিবেট তৈরি করে চলেছিল ঝিলমিল তখন গেয়ে চলেছিল একের পর এক গান। মেয়েটা ক্লান্তিহীন, যেমন কথা বলাতে ঠিক তেমনি গানেও। মনে মনে ভেবেছিলাম, ঝিলমিল যেখানে থাকবে সেখানে আর আলাদা করে রেডিও মির্চির কোন প্রয়োজন নেই,ঝিলমিল কে বলেও ছিলাম সে কথা। নাটক শেখা আর নাটক করবার তীব্র ইচ্ছেগুলোর ফাকে আমার কান ঠিক পড়ে থাকত ঝিলমিল এর গানের কাছে। এমনই একদিন ওকে গাইতে শুনলাম একটা তীব্র অবসাদের গান
              “এ পেয়ার তু নে কেয়া কিয়া............এক হি পল মে আচানক দি হে সারি খুশিয়া......লি হে সারি খুশিয়া”
জানতে ইচ্ছে হল। ঝিলমিলকে,কাছে গিয়ে বসলাম। প্রশ্ন আর কথার কোটরের ফাঁকে লক্ষ্য করতে থাকলাম ঝিলমিলের চোখের নিচের কালশিটে দাগ। গল্পের পরে গল্প যুগিয়ে প্রেমহীনতাকে ভুলে যাবার কৌশল।
              নাটকে ওকে আমার ভীষণ জোরে বকতে হয়েছিল মিথ্যে মিথ্যে। কিন্তু নাটক মঞ্চস্থ হবার পরে বাড়ি ফিরে এসে বুকের মধ্যে ভীষণ একটা কষ্ট অনুভব করছিলাম।সেই কষ্টটা যে কিসের ছিল তা আজও অজানা। সেই কষ্টটা নিয়ে আমি কোন কবিতা লিখতে পারিনি।
         পৃথিবী ঘুরতে থাকছিল তার নিজস্ব লয়ে.. কী করে কি জানি ওর সাথে বন্ধুত্ব হয়েগেছিল। আবার সেই কথা আর গানের কোটরের ফাঁকে ফাঁকে ঝিলমিল বলে ফেলছিল তার পুরনো প্রেমের কথা।পাঁচ বছর প্রেম করেছিল ঝিলমিল!তারপর হঠাৎ সেই সম্পর্কটা কেন ভেঙে গেল সেই প্রশ্ন আমি ওকে করিনি।
              এখন আমি ঝিলমিলের বাড়িতে বেড়াতে এসেছি। ঝিলমিল কে বলেছি এক কাপ চা খাওয়াতে।চায়ের চুমুকের ফাঁকে ফাঁকে শুনতে পাচ্ছি ঝিলমিল বলে আবার বলে ফেলছে না বলতে পারা কথাগুলি। অভিযোগগুলি ক্রমশ ফেলে দিচ্ছে পুরনো প্রেমিকটার ঘাড়ে।
           ‘-জানো ও না কোনদিন আমার সাথে জীবন নিয়ে কোন কথা বলেনি।শুধু মা,বাবা প্রফেশন এসব। এভাবে হয়?’ চুপচাপ চা খেয়ে একা বাইকে করে বাড়ি ফিরে আসার সময় বা হাতে চুল ঠিক করতে করতে ফাকা রাস্তায় ঠিক নাটকের মত করে চিৎকার করে নিজেই নিজেকে একটা সংলাপ বলে উঠলাম -
                ‘’শুভ, তুই পড়াশোনাটা ঠিক করে করলিনা কেন রে?’’



বাড়ি ফেরার একটু আগে বাইকে বসে বসে আরো ভাবছিলাম।
-ঝিলমিল যে প্রথাগত মেয়েদের মত নয় সেটা ও নিজেও জানেনা,ওর রোগা শরীর আর ঘুম ঘুম কথাগুলোর মধ্যে যে একটা অনাবিল শান্তি খুঁজতে চায় সরলতা ওর বাড়ির গাছের ছায়াগুলো বোধ হয় সেটা খুব ভালো করে বুঝতে পারে।
-ফোনে ও আমাকে অনেকবার নীল রঙের কথা বলেছে,বলেছে শীতে পাতিয়ালা আর নীল জ্যাকেট পরতে।
 নীল আমার সবচাইতে পছন্দের রঙ,শব্দটাও।স্বপ্নের ঠিক পরেই নীল লিখলে শব্দটা ‘স্বপ্ননীল’ হয়ে যায়।স্বপ্ন আর নীলের কি নিবিড় সেই বন্ধুত্ব!!
-আহা!
-পাতিয়ালা প্রথম দেখেছিলাম কোলকাতা কিডস্ট্রীটে একজন চাইনিজ পর্যটকের পায়ে।সেদিন থেকেই চোখে লেগে ছিল।
-কিন্তু ঝিলমিলকে তো আগে এসব কিছুই বলিনি।
-কি করে জানল ও?
ওর বা হাত থেকে একটা চুড়ি খুলে চোখ আর চশমার ফাঁকে বসিয়ে একদিন মোবাইলে
একটা ছবি তুলেছিলাম। ম্যাগ্নিফাইন গ্লাসের মত লাগছিল চুড়ি আর চশমাটাকে একসাথে।
ফিকফিক করে হাসছিল ও,আর আমি বড় করে দেখছিলাম ওর প্রাণবন্ততার বিপন্ন ছটফট!
বাড়িতে ঢুকলাম,গ্যরাজে বাইকটাকে সাইডস্ট্যান্ড করিয়ে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম স্ট্যান্ডটার দিকেই।মনে হল,ছোট্ট স্ট্যান্ডটা যেন একশপঞ্চাশ কেজি ভার সামলাতে সামলাতে
ডিপ্লোম্যাটিক একটা মন্তব্য করতে চাইছে...
-“তুই আমাকে তোয়াক্কা না করলেও,আমি তোকে তোয়াক্কা করি!”



গতকাল দুপুরে ঝিলমিল-কে একটা মেসেজ করেছিলাম।বলেছিলাম সন্ধ্যায় নাটক দেখতে যাবার কথা।কোন উত্তর দেয়নি তাই সন্ধ্যায় একবার ফোন করেও জানতে চেয়েছিলাম ও যাবে কিনা।
-আমি টিউশন পরাচ্ছি,তুমি দেখে এসে আমাকে জানিও,কেমন হয়েছে।
জানিনা ঝিলমিল কী ভবেছে প্রশ্নটা করায়।আমি শুধু ওর কাছে উৎসর্গ করতে চাইছিলাম আমার প্রিয় বন্ধুদের রঙিন দৃষ্টিময়তা...
          যে নাটকটা হবে সেটা ছোটবেলায় আমিও অভিনয় করেছিলাম।মনে পড়ে,নাটক করবার জন্য ক্লাস-ওয়ার্ক খাতার পাতা ছিড়ে ছাতার ডগায় মুড়ে বিপ্লবী মিছিলের কথা,ফলস্বরূপ প্রথমবারের মত দেয়াল চরিত্রে অভিনয় করবার চান্স।
          এখনও নিজেকে সেই দেয়ালের মতই মনে হয়।ইচ্ছের শিশুগুলির সামনে আজও যেন একটা দেয়াল বানিয়ে রাখি,কী জানি তারা সাজানো কোন বাগান নষ্ট করে দেয়...রাতে ঘুমোবার আগে আরেকটা মেসেজ করলাম ঝিলমিল-কে
-Great work by Kushal & Abir.In the next youth festival we will do something together.

ঘুমের মধ্যে আবছায়া রকমের একটা স্বপ্নে দেখতে পেলাম সাদাকালো রঙের জামা পরা ঝিলমিল-কে একটা বিদঘুটে রাক্ষস জড়িয়ে ধরতে চাইছে,প্রাণপণে আটকানোর চেষ্টা করছি আমি,শেষটা দেখেতে পেলাম না।অর্থহীন রয়ে গেল স্বপ্নটা...

          আজ সারাদিন ওর সবকটা নম্বরে ডায়েল করেই চলেছি।বারবার বিজি টোন দেখাচ্ছে!
দুপুরে একটু ঘুমিয়ে নেব বলে মন স্থির করে ফেললাম কেননা রাতে ঘুম ভালো হয়নি, স্বপ্ন দেখলে নিরেট ঘুম হয়না ...



সক্রেটিস হাসতে হাসতে বিষ খেয়েছিলেন ঝিলমিল।
তার বন্ধু বান্ধবরা অনেক চেষ্টা করেছিলেন সময় বুঝে তাকে নিরুদ্দেশ করে দেবার।
তিনি ব্যাক্তিগতভাবে সামগ্রিক সিদ্ধান্ত এড়াতে চাননি!
তুমি প্রেমের বিনিময়ে বাঁধনছাড়া হতে চাও আজ! বাঁধনছাড়া হতে গেলে যে প্রথমেই চাই বাঁধনের দীর্ঘ অভ্যাস সেটা তোমার জানা নেই?
আমার ও জানা ছিলনা!
তবু ও তোমার মুগ্ধতাকে আমি শব্দরূপ দিয়েছি, ঠিক অস্ত্র যেমন ধাতুরূপে দ্বন্দ্ব খোঁজে সারাদিন শুধু একটা গোলাপের জন্য, সেভাবে...
জানো?
চাঁদের কাছে পৃথিবী খুব অসাড়,একটা নীল দানবের মত!আরেকটু ভেবে দেখ...
গ্রহ,উপগ্রহ,জন্মান্তর ওরা কেউ কিন্তু আসলে কোন কাজ করেনা!!
শুধু গোল গোল ঘোরে আর নিজেদের প্রতিসরন শূন্য করে দেয়!
তুমি দ্বিমত পোষণ করতে পারনা কেননা তোমার কাছে বিজ্ঞান অর্থহীন হতে পারেনা...

এমা!একি ঝিলমিল? তুমি চুপ করে আছ কেন? তর্ক কর...
তুমিতো পাঠচক্র,আশ্রম কোনটাই বাদ দাও না!
কোনদিন শোননি শ্রীকৃষ্ণের সেই উপদেশ বাক্য?
“তর্ক জীবনের আধার। তর্ক ছাড়া বিশ্বাস অটুট হয় না।“
না জেনে না শুনেই জলের গভীরতা মাপতে দু’পা ডুবিয়ে ফেলেছ?
সাতার জানো?
কি বললে? জাননা!!!
তারপরেও তোমার দৃঢ় বিশ্বাস যে তুমি ডুববে না!!!
স্ট্রেঞ্জ!!!

এসব কথা আমি আর ধরে রাখতে পারছিলাম না, বাগবিতণ্ডা, ঝগড়া আমার খুব একটা পছন্দের নয় তাই তোমাকে এভাবে বোঝাচ্ছি।
এ কী! কান বন্ধ করে আছ কেন?শুনবেনা???
শুরুতে বললেনা কেন যে তুমি এসব কিচ্ছু শুনতে চাওনা!!!
আচ্ছা তুমি কি চাও বলত A,B,C,D সবাই! সবাই তোমার প্রেমে পড়ে যাক?
আর তুমি আফিমের নেশায় মত্ত থেকে থেকে জুড়ে দাও কবিতাকাহিনি?
পারবেনা!!
কেননা এভাবে হয়না !!!!
আর কয়েকদিনের মধ্যেই আমি নিরুদ্দেশ হয়ে যাব।বিষ খুঁজতে চলে যাব সমুদ্রের নিচে।
তখন তুমি নিজে দেখে নিও অমৃতের শেষ প্রতিরূপ!
ব্রহ্মাণ্ড গ্রাস করার তার অভিনব পদ্ধতি!
এখন তোমার এসব কিচ্ছুই বিশ্বাস হবেনা। না হোক!
অন্ধকারে, রাস্তায় ফেলে রাখা সামান্য একটা দড়িকেও সাপ বলে মনে করে মানুষ।সময় যখন মানুষটাকে দড়িটার অনুমান সুচক দূরত্বে নিয়ে যায় তখন সে ঠিক বুঝতে পারে সব!!
আজ সক্রেটিসের জীবনী পড়তে পড়তে মাইগ্রেনের ব্যাথায় কপালের শিরাগুলি দবদব করছিল ঝিলমিল,জানি এখনও ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের আরও অনেক কঠিনভাবে জীবনকে যাপন করতে হয়, তবুও অনেক বকে ফেললাম!
কিছু মনে করোনা, আসলে আমি বকিনি,আমার ব্যাথাগুলো বকেছে তোমাকে...

আমাকে এখন ও স্যাবিকাসের মত ফ্লেমেঙ্কো শিখতে হবে ঝিলমিল, অনেক অনেক...
টিচার পাচ্ছিনা!!
নিজে নিজে আর কত শেখা যায় বল?
সক্রেটিসের একটা কোট তোমাকে মেসেজ করছি,বেশি হীনমন্যতায় ভুগলে মেসেজটা খুলে পড়ে নিও, ডিলিট করোনা প্লীজ...
“আমি জানি
আমি জানিনা
ওরা জানেনা
ওরা জানেনা...” ভালো থেকো...



        ঝিলমিল তোমাকে আমার এঅঅঅঅঅ টা ভালো লাগে...
তোমার ঠোট চাপা বাঁকানো হাসিটাকে আমি কতবার ছড়িয়ে দিয়েছি কুয়াশায়...
শিশির হয়ে ওরা আবার আমার চোখের পাতায় জমে গেছে আর শীতল করে দিয়েছে আমার অপরাগ গুলিকে।
কাঁদব ঝিলমিল? তোমার আঙুলে মাথা রেখে?
      বাবা বলতেন হাতের আঙুল দেখেই নাকি বোঝা যায় মন...আমি তোমার আঙুল খুব স্পষ্ট করে দেখেছি...ভীষণ স্পর্শ লেগেছে জানো?
আমাকে বেহালা বাজানো শেখাবে? তুমি শেখালে আমি একটুও অন্যমনস্ক হবনা দেখো...
শিখতে শিখতে অনেক রাত হয়ে গেলে ঘুম পাড়িয়ে দেবেনা?
তোমাকে দেয়া একটা কথাও আমি রাখতে পারিনি... শাস্তি দিওনা প্লীজ...
আমি তোমাকে আর বকবনা...আর চাইবনা রাজা হতে...

এ কী! ঝিলমিল, তুমি হাসতে হাসতে কাঁদছ? তোমার কাছে গেলেই আমার সব বিস্মৃতিগুলি বিলীন হয়ে যায়,আমাকে একা একা খেলতে দেখলেই তুমি যখন দৌড়ে এসে বলে ওঠ...
“আমি আছিত”
খুব খুশি হয় মনের আর ঠিক তক্ষুনি আমি পাইপাই করে ভালো মানুষগুলোকে খুজে বার করতে শুরু করি আর বাতাসার মত ভালবাসা লুটাই...

আমার সব রঙ তোমার দেয়া উপহারের অনুমাংশ মাত্র...তুমি জাননা যে,তুমি রূপসার মত জড়িয়ে গেছ আমার রক্তে...আজ যখন কথায় কথা না বাড়িয়ে হঠাৎ বলে ফেললে ভালবাসার কাছে চাওয়াটা তোমার অনেক কম...তোমাকে বিশ্বাস করতে আমি বাধ্য হলাম...
তারপর থেকে...
আমি ক্রমশ শান্ত হয়ে যাচ্ছি... আমার সমস্ত ক্ষোভগুলি মিহিন বালুকনা হয়ে মিশে যাচ্ছে মরুঝড়ে...
তোমাকে প্রথমবার বলেছিলাম ভালবাসাবাসির কথা...তুমি হঠাৎ বলেছিলে কিচ্ছু না দেবার আশ্বাস... আমি ভয় পেয়েছিলাম... কিন্তু তুমি তাও জাননা ঝিলমিল... তুমি যা দিয়েছ টা আমার চাওয়া থেকে অনেক অনেক অনেএএএক বেশি...

তাই তোমাকে বারবার বলি তোমাকে আমার এঅঅঅঅঅ টা ভালো লাগে... তোমাকে সামনে পেলে আর যেতে দেবনা কোথাও... কোনদিন...

তারপর...
তোমাকে একটা সমূদ্র দেব...আর তোমার পিপাসার জন্য... বৃষ্টির ঝাঁক......



শুধু...তিন চার দিনকে কোটেশনে রেখে আনন্দ করাটাকে আমি কোনদিন ও সহ্য করতে পারিনি ঝিলমিল...
তখন শুধু এই ভেবে ভাল লাগে যে কোন না কোন ছুতোয় হলেও তো হাসছে সবাই...গান গাইছে...রাত কে রাত বলে ভাবছে না...
এই চারদিন চোখে মুখে একটা অদ্ভুৎ রকমের অভিমান রেখে আমি সাজগোঁজ করি,একা হাঁটতে থাকি আমার বাড়ির পাশের বাধটায়...
বাধের পাশের নদীটা মায়ানীল হয়ে সারাদিন আমাকে প্রশ্ন করে...
-‘পুজো দেখতে যাবিনা?’
আমি বলি
-নাহ!!!
নদী আবার প্রশ্ন করে
-‘কেন?’
আমি রেগেমেগে উত্তর দিই
-‘ইচ্ছেটা আমার! জীবনটা আমার! তোর এত মাথাব্যাথা কেন?’
আমি এবারও সেম টু সেম রিপিট করব ঝিলমিল !কেননা তুমি আমার কাছে থাকবেনা...
মম হমম...বলতে হবেনা...
জানি......
মনে মনে সবসময় তুমি আমার কাছে থাক...কিন্তু বাস্তবে বাস্তবে,বছরের একটা দুটো অথবা তিনটে বিকেলে আমি তোমাকে চাইতেই পারি...আর ঠিক তখনও যদি সেই নামকরা ক্রিয়েটার
তার কোডিং চেঞ্জ করার বিন্দুমাত্র চেষ্টা না করে,
আমিও আমার মন ভালো করার চেষ্টা করব না!

ফোনে এসব কথা শুনতে শুনতে ঝিলমিল যে কখন একটা নির্জন রেস্তোরায় ঢুকে এক প্যাক ব্লাডিম্যারি অর্ডার করে ফেলেছিল সেটা কেউ দেখেনি... কোন কথা বলছিল না ও...একটা হালকা লাল ডিম স্পটলাইটের নীচে বসে বসে ব্লাডিম্যরিতে চুমুক দেবার সময় অবসাদগ্রস্ত
স্টিউয়ার্ড রা জ্বলজ্বল করতে দেখতে পাচ্ছিল ঝিলমিলের কাজল কে...

বাড়ি ফিরে বাদামী সোফায় মাথা রেখে ঝিলমিল ভাবতে থাকছিল নিষ্পাপ আকাশের কথা...
তখন সেই আকাশে ...
আমি লিখছিলাম...
আরেকটা অভিমান...
“দুঃখ শুধু দুঃখ এসে মোক্ষের পাশে বসে
বসে বসে সে যে ...অনায়াসে ...কঠিন অঙ্ক কষে...
সোজা পথ বেঁকে যাওয়া দেখে দেখে কালো পীচের দুঃখ বাড়ে
কলঙ্ক আর চাঁদ মিশে মেখে শহরটা ঘুম কাড়ে...........................”



সারাদিন ঝিলমিল কে তন্ন তন্ন করে খুঁজছিলাম
থানায় প্রতিবাদ করার সময় টেবিলে এত জোরে থাপ্পড় বসালাম যে একটা কাচ ভেঙে চুরমার হয়ে গেল।
হাতের আঙুলের নিচের একটা জায়গা কেটে ফালাফালা হয়ে গেল…
সঙ্গে ইমন ছিল…আমার রক্ত,তুলো আর ওর আঙুলের চাপেও বন্ধ হলনা
ইমন ডাক্তার
রক্তের সাথে ওর লেনাদেনা হয় রোজ, তবুও এমনভাবে হাত ব্যান্ডেজ করে দিল যেন হাতটা তার নিজের।
আজকাল ইমন নামে ওকে কেউ ডাকেনা… ইমন যখন গান লেখে আর নিজের লেখা গান গায়… খুব সহজ মনে হয় ওকে আমার… অথচ ইদানিং যুগের মেয়েদের ব্যাখ্যায় সে নাকি খুব জটিল…
আমি যখন সরলতার কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করি…… ইমন বলে
-‘আর কতবার প্রেম করবি বোকা?’
রাতে আড্ডা শেষ হলে কেন যে ও আমাকে রোজ রেস্টুরেন্ট এ নিয়ে গিয়ে চিকেন রেজালা খাওয়ায় সেটা অনেকবার জানার চেষ্টা করেছি তার কাছে…
কোনদিন বলেনি
‘ঝিলমিল কে আর বোধ হয় খুঁজে পাবনা’
এই কথাটা নাড়িয়ে দিচ্ছিল হৃদয়ের চাপা যন্ত্রণাগুলোকে
ইমনকে জোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বাইকে চেপে বসে কাটা হাতের দুটো আঙুল দিয়ে এক্সিলেটার বাড়িয়ে মুহূর্তে অনেকদুর চলে যেতে থাকলাম…
প্রায় কুড়ি কিলোমিটার পেরিয়ে এসছি...আরো অনেক যাব অনেক
বারবার মনে হচ্ছে আলবার্ট আইনস্টাইনের কথা,থিওরি অফ রিলেটিভিটির কথা...
ঝিলমিলের সাথে কোন কোন শহর, কোন কোন মানুষ রিলেটিভ...হঠাৎ মনে হল রবীন্দ্রনাথ আইনস্টাইেনর খুব ভালো বন্ধু ছিলেন…
আরে নাহ!
ঝিলমিল তো এ বছর রবীন্দ্রজয়ন্তীতে চিরনতুনের কথা বলেছিল!
সারা পৃথিবী খুঁজতে হবে ওকে?!!
এসব ভাবতে ভাবতে দেখি ব্যান্ডেজ ভিজে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে হাত থেকে…ব্যাথায় শিনশিন করছে
শরীরের ডানদিক…
বাইকের তেল শেষ!
বাইক থেকে নেমে চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে ডাকতে থাকলাম ঝিলমিল কে
আকাশে চাঁদ নির্বিকার!
আমার চাওয়া পাওয়া নিয়ে চাঁদের কোন মাথাব্যাথা নেই… চাঁদের গলায় অলঙ্কার আর সাজাতে ইচ্ছা হচ্ছেনা।
শুধু ঝিলমিলের কথা মনে পড়ছে অমলিন……



ঝিলমিল দেখতে অনেকটা সরু রাস্তার মত ছিল, যেখানে অপ্রয়োজনীয় কোন আস্তরণ ছিলনা। শক্ত মন থেকে যাকে কেউ এড়িয়ে যেতে পারতনা।
অনেক তরুণ বুকে জায়গা করেছিল তাই ও...
অনেক ছোটবেলা থেকেই ভালবাসা ছাড়া আমি আর কিছুই বুঝি না।
ঝিলমিল কে শুধু ভালবাসার কথাই বুঝিয়েছিলাম।
ও কি ভুল বুঝেছিল?
এখন আমি এত মায়া কি করে কাটাই?
ওত ওর ফোনটাও আমার কাছে ফেলে গেছে...সবাই ফোন করছে...
বলনা মা
কি জবাব দেব সবাইকে
প্রত্যেকটা মুহূর্ত শঙ্খনিবিড় করে দিয়ে এভাবেই কি চলে যায় সবাই?
তোমাদের কারুর কাছেই তো উত্তর নেই এসবের...
তবু তোমরা আড়চোখে অহংকার আঁক রোজ......

কোন মন্তব্য নেই: