।। সঞ্জীব দাস।।
ভারত উন্নতশীল দেশ।বর্তমান ভারত অনেক এগিয়ে গেছে। প্রযুক্তির দিক দিয়েও অনেক এগিয়ে গেছে। কিন্তু এই উন্নতি সঠিক অর্থে উন্নতি কি? এখনও ভারতে দরিদ্রের সংখ্যা পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ। এখনও ৪০ কোটি মানুষ রাতে না খেয়ে ঘুমাচ্ছে। কিছু মুষ্টিমেয় লোকের ধনবৃদ্ধি মানে ভারতের ধনবৃদ্ধি নয়। নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার মানে ভারতের উন্নতি নয়। এই দরিদ্রতা যতদিন পর্যন্ত দূর হচ্ছে না, ভারতকে সঠিক অর্থে উন্নতশীল দেশ বলা যাবে না। বর্তমান ভারত নানান সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তারই কিছু সমস্যার বিষয়ে নীচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলোঃ
১. দরিদ্রতাঃ-
দরিদ্রতার দিক দিয়ে ভারতের স্থান তৃতীয়। পৃথীবির ৩৩%দরিদ্রের বাস ভারতে।UNICEF এর মতে ভারত ৪২%শিশু যাদের বয়স ৫ বছরের কম তারা পরিপুষ্টির অভাবে ভুগছে। তাদের ওজন মাত্রাতিরিক্ত কম। বিশ্ব ব্যাঙ্কের সভাপতি জিম ইয়ঙ্গ বলেছেন অন্যান্য দেশে দ্রুত গতিতে হ্রাস পেলেও ভারতে তা নুন্যতম। এই দরিদ্রতার প্রধান কারণ হল দ্রুতগতিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি। জনসংখ্যার দিক দিয়ে ভারতের স্থান দ্বিতীয়।UNCEUS (National Commission for Enterprise in the Unrecognized Sector)এর মতে ৭৭%ভারতীয়ের আয় দিনপ্রতি ২০ টাকারও কম। বিহার, ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, উড়িষ্যা, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ,পশ্চিম বঙ্গেদরিদ্রতার হার সবচেয়ে বেশি। যতদিন পর্যন্ত এই দরিদ্রতা হ্রাস না পাবে আমরা ভারতকে উন্নত বলতে পারি না। তাই আমাদের ভারতেউন্নত বলতে পারি না। তাই আমাদের এবং ভারত সরকারের প্রয়োজন দ্ররিদ্রতা হ্রাস করার জন্য ফলপ্রসূ পদ্ধতি অবলম্বন করা।
২. শিশুশ্রমঃ-
বর্তমান ভারতে শিশুশ্রম অন্যতম একটি প্রধান সমস্যা। দিন দিন শিশুশ্রমের হার ক্রমেই বেড়ে চলেছে। যেখানে উচিত শিশুরা বিদ্যালয়ে যাবে, পড়াশুনা, খেলাধুলা করবে সেখানে ঠিক বিপরীত ঘটছে। অনেক অনেক বড়ো উদ্যগগুলোতে লোকিয়ে বাঁচিয়ে হলেও সেখানেই শিশুশ্রম বেশি হচ্চে। আজকাল চায়ের দোকানে নায্যমূল্যের দোকানে প্রকাশ্যেই হচ্ছে। কিন্তুতাতে সাধারণ জনসাধারণ এবং সরকারের টনক নড়ছে না। এমনকি শিক্ষিত জনসাধারণও এই শিশুদের দিয়ে ওনেক শিক্ষিত ঘরগুলোতে শিশুশ্রম হচ্ছে।The International Labour Organisation (ILO)২০০২ সাল থেকে ১২ জুনকেআন্তর্জাতিকভাবে বিশ্ব শিশুশ্রম বিরোধিতা দিবস হিসাবে ঘোষিত করলেও এখনও শিশুশ্রম ক্রমেই বেড়ে চলছে। এবছরের এই ১২ জুনেই হায়দরাবাদে একটি অলঙ্কারের দোকান থেকে ৬ জনশিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। এবং এর পরের দিনই রাজকোট থেকে ১৪ জন শিশুকে একটি অলঙ্কারের কর্মক্ষেত্র থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। যাদের মধ্যেব১২ জন শিশুই পশ্চিম বঙ্গের। রাজস্থানে সবচেয়ে বেশি শিশুশ্রম হচ্ছে। ১০ শতাংশ শিশুশ্রম এই রাজস্থানেই হচ্ছে। জয়পুরের ৫০,০০০ শিশুরা যাদের বয়স ৫-১৪ তারা শিশুশ্রমে লিপ্ত। উত্তরপ্রদেশ ও অন্ধ্রপ্রদেশের পরেই এই রাজ্যের স্থান। তাই ভারত সরকারের প্রয়োজন উপযুক্তপদ্ধতি গ্রহণ করা যাতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই ভয়াবহ সমস্যা থেকে ভারত মুক্তি পায়। এবং আমাদের সাধারণ জনসাধারণের প্রয়োজন এর দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা।
৩. নারী নির্যাতনঃ-
বর্তমান ভারতে নারী নির্যাতন এক ভয়াবহ রূপ। যেখানে নারীরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে ভয় পাচ্ছে। নারীদের সম্মানরক্ষা এখন বিপদে। কিছু মানুষেরা যাদের আকৃতিটাই শুধু মানুষের মতো কিন্তু মানবতা তাদের মধ্য থেকে অনেক আগেই লুপ্ত হয়ে গেছে, তারা শুধু নিজের লালসা পূরণ করতে জানে। অকারণেই নিজের অবমানবিক বাসনা পূর্ণ করছে। তাদের মা-বোনও যে নারী তারা কবেই ভুলে গেছে। তারা কোনোদিনও নারীদের সম্মান করতে শিখেনি। যার ফলে নারীরা আত্মরক্ষার ওভাবে ভুগছে।NCRB (National Crime Record Bureau)এর মতে বর্তমান ভারতে প্রতি মিনিতে ২২ টি ধর্ষণজনিত ঘটনা থানায় নথিভুক্ত হচ্ছে। এই ধর্ষণজনিত ঘটনা দিনে দিনে কেবল বেড়েই চলেছে। ২০১০ এএর সংখ্যা ছিল ১৪,২৬৩ এবং ২০১১ তে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫,৪২৩। আজকাল এই শ্বপদরা শিশুদেরকেও ছাড়েনি। তারাশিশুদের সরল অবুঝ মনের সু্যোগ নিয়ে তাদের উপরও নিজের অবমানবিক বাসনা পুর্ণ করছে। শিশু নির্যাতন, শিশুদের যৌনপীড়ন আজকের সমাজে এক জলন্ত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে । ২০০১ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ৪৮,৩৩৮ টি শিশুধর্ষণ জনিত ঘটনা থানায় নথুভুক্ত হয়েছে। আবার অনেক ঘটনা আছে যেগুলোথানায় নথিভুক্তই হচ্ছে না। আজকের ভারতে নারীদের বিভিন্ন সরকারি দফতরে, স্কুল-কলেজে, রাস্থাঘাটে যাতায়াত করতে গিয়ে অপমানিত হতে হচ্ছে। তাদের নানা প্রকারন্তরে নানাভাবে অপমানিত হতে হছে। আপরদিকে কিছু কিছু লোকের ধারণা যে মহিলাদের এরকম বিপত্তির জন্য নাকি মহিলারা নিজেই দায়ী তাদের পোষাক আশাকের জন্যে। কিন্তু একটি পোশাক কখোনই একটি নারির গঠন করে না। প্রয়োজন সেইসব লোকের ধারণার পরিবর্তন এবং সেই নরপিশাচদের হাত থেকে নারীদের রক্ষা করা। তাই নারীদের সম্মান রক্ষায় সারা দেশের জেগে উঠার সময়আসন্ন।
বর্তমান ভারত এই সকল ভয়াবহ সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া আরও নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে যেমন বেকার সমস্যা, শিক্ষিতের হারের অভাব। তাই বর্তমান ভারত উন্নতিশীল হলেও তা অনুন্নতের সামিল।এখনও ভারত খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটছে। তাই আমাদের সাধারণ জনসাধারণের প্রয়োজন ভারত সরকারকে দোষারোপ না করে এই সকল সমস্যা দূরীকরণে ভারত সরকারকে উপযুক্ত সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। তাহলেই ভারত উন্নতির পথে আরও প্রগতিশীল হবে এবং একটি সুস্থ এবং সুশৃঙ্খল সমাজ গড়ে উঠবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন