“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই, ২০১৩

'গানের কারিগর': নচিকেতা সঞ্চালিত কর্মশালা এবং ব্যতিক্রম সম্মান

      ।। প্রতিবেদকঃ সুশান্ত কর।।

ম্প্রতি ব্যাতিক্রমমাসডোর উদ্যোগে এবং রাজ্য সরকারের জনসংযোগ দপ্তর ও নিডস কাস্টমার কেয়ার কার্ডসের সহযোগিতাতে গুয়াহাটিতে ‘গানের কারিগর’ নামের একটি কর্মশালার আয়োজন হয়ে গেল। ১১ থেকে ১৩ জুলাই, ২০১৩  এই তিনদিনের কর্মশালা সঞ্চালন করেছিলেন বাংলা গানের সুপরিচিত শিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী। এমনিতে ব্যতিক্রম মাসডো মাসে প্রায় দু’টো করে রাজ্যের বা দেশের  বিভিন্ন জায়গাতে এমন অনুষ্ঠান করেই থাকে। কোথাও কর্মশালা, তো কোথাও আলোচনা চক্র। সঙ্গে থাকে এদের বই প্রকাশ। অসমে বাণিজ্যিকভাবে   বাংলা বই প্রকাশের সূচনাও করেছিল ভিকি পাব্লিশার্স  এবং জোয়ারও এনেছে তাঁরা। ‘ব্যতিক্রম’ এই প্রকাশন সংস্থার নিয়মিত মাসিক পত্রিকার নাম। সম্পাদনা করেন সৌমেন ভারতীয়া, প্রকাশনার দায়িত্ব সামাল দেন পিন্টু গুপ্ত। ব্যতিক্রম মাসডো তাদেরই শাখা সংগঠন। এবারের কর্মশালার শেষে তেমন বই প্রকাশ হয় নি বটে।  এ ছিল সংস্থার নবম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান।  তাই  চারজন কৃতী ব্যক্তিত্বকে ব্যতিক্রম সম্মানে সম্মানিত করা হলো, সেই সঙ্গে ছিল নচিকেতার গান এবং জাহ্নবী চৌধুরীর একক নাচের অনুষ্ঠান। পাশাপাশি রাজ্যের কিছু কৃতী চিত্রশিল্পীর আঁকা ছবির প্রদর্শনী এবং বিক্রির ব্যবস্থা করেছিল ব্যতিক্রম। এই শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন ননী বরপূজারী, দিপঙ্কর কর, অদিতি চক্রবর্তী, দাদুল চালিহা, চম্পক বরবরা এবং মীনাক্ষী বরগোঁহাই।
            সব সময় খবর পেলেও এদের অনুষ্ঠানে যাওয়া হয়ে উঠেনা। এবারে যাওয়া হলো, তার কারণ সংযোগটি ভালো জুটে গেল। আমার গ্রীষ্মের বন্ধের শেষ হবে, মেয়ে পৌষালির শুরু হলো –এই এক সপ্তাহ পাওয়া গেল। শিলঙে গিয়ে পারিবারিক ছুটি কাটানো হলো দিন দুই। ফেরার পথে এই কর্মশালাতে মেয়ে অংশ নিল। সঙ্গে আমরা ওর মা-বাবা ফাউ হিসেবে গোটা অনুষ্ঠান উপভোগ করলাম।

আমাদের শিলং চেরাপুঞ্জী ভ্রমণের কিছু ছবি দেখা যাবে এখানেঃ

                                           
                           ১১ই দিনের দু’টোতে কর্মশালার উদ্বোধন হলো। সেখানে উপস্থিত ছিলেন নচিকেতার সঙ্গে রাজ্যের আরো দুই খ্যাতনামা সঙ্গীত শিল্পী এবং প্রশিক্ষক মনীষা হাজরিকা এবং মিনু রাজকুমারী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে সৌষ্ঠব বৃদ্ধি করেন বাংলা অনুবাদে সাহিত্য একাদেমী বিজয়ী লেখক গবেষক অধ্যাপক ঊষারঞ্চন ভট্টাচার্য, দৈনিক যুগশঙ্খ কাগজের সম্পাদক বিজয় কৃষ্ণ নাথ প্রমুখ। বেশি সময় নেয় নি উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। প্রদীপ জ্বালানো ইত্যাদি আর দুই একজনের ছোট বক্তৃতা। শীঘ্রই মঞ্চ ছেড়ে দেয়া হয় নচিকেতাকে। তিনি সেদিন প্রায় জনা কয় কম একশত অংশভাগীর গান শুনলেন।
নচিকেতার সামনে নিজের গান গাইছে পৌষালি

 শুনে বাছাই করা কয়েকজনকে কয়েকটি শব্দ দিয়ে বললেন পরের দিন গান লিখে আনতে। কথা এমনি ছিল—তিনি গান শেখাবেন না। গান নির্মাণ করা শেখাবেন। কী করে গান লিখতে হয়, সুর দিতে হয়, বাজাতে হয় এবং গাইতে হয়। অংশভাগীদের মধ্যে বাংলা এবং অসমীয়া দুই ভাষার শিল্পীরাই ছিলেন। যাদের সিংহভাগই মনে হয় না জীবনে কোনদিন গান লিখেছিলেন। পরদিন সত্যি সবাই নিজের মতো করে গান লিখে এলেন। আমাদের মেয়ে পৌষালি লেখার দায়িত্ব পায় নি। তার বয়েসী কেউই পায় নি। কিন্তু সেও কিছু নিজে কিছু আমাদের সঙ্গে কথা বলে লিখে নিয়েছিল একটি গান এরকমঃ

                                      ই রাস্তায় চলেছে গাড়ি আর শুধু গাড়ি
                                     যে দিকে তাকাই জানালা বন্ধ ধুলো ঢাকা ঘরবাড়ি
                                    আইসক্রীম খেতে চাইলে বাবা বলে সব ধুলো বালি
                                     আকাশ জুড়ে মেঘ করে যেন গাড়ির ধুঁয়া কালি
                                     গল্পে শুনেছি এক কালে ছিল পথের পাশে গাছের আম
                                     আমিতো দেখি যে পথেই যাই সব রাস্তায় ট্র্যাফিক জ্যাম।।
       

          ধুলো, রাস্তা এগুলো গানের কথাতে এলো কারণ এরকম কিছু সব শব্দই বেছে দিয়েছিলেন নচিকেতা।  পৌষালি অবশ্যি নিজের লেখা শোনাবার সুযোগ পায় নি, কিন্তু যাদের দায়িত্ব দিয়েছিলেন তাদের প্রায় সবার  লেখাগুলো মন দিয়ে শুনলেন নচিকেতা। পরে নিজেও দশ মিনিটের জন্যে মঞ্চের বাইরে গিয়ে লিখে আনলেন একটি। সুর দিলেন, এবং সবাইকে সেই গান তুলতে দিলেন গলাতে। দেখতে দেখতে একটি গান গড়ে উঠছিল। পুরো গান তিনি লেখেন নি।  অন্যরাও যা লিখেছিলেন সেখান থেকেও কথা বলতে বলতে কথার টুকরোগুলো নিলেন।  এমন আলাপের মধ্যি দিয়ে গড়ে উঠল পুরো গানের কথা। সবাই নিজের মতো করে অভিমতও দিচ্ছিলেন এবং কাঁটাছেড়া করছিলেন। দেখতে দেখতে দেখতে সবাই সেই গান গলাতে তুলেও নিলেন।

গানটির অনুশীলনের বা গড়ে উঠার কিছু মুহূর্ত দেখতে শুনতে পাবেন এখানেঃ





  গানটির অসমিয়া অনুবাদও হয়ে গেল। এবং দুটো  ভাষাতেই গাওয়া হলো।

      সেটিই অভ্যাস করতে করতে পরের দিনের ব্যতিক্রম সম্মান অনুষ্ঠানের পরে যখন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হলো, নচিকেতা নিজে গাইতে উঠবেন তখন সবার শুরুতে অংশভাগীদের সবাই মিলে এই গান পরিবেশন করলেন মঞ্চে। তৃতীয় দিনের দুপুর দু’টোর থেকে অনুশীলনে সঙ্গ দিতে পারেন নি নচিকেতা। দ্বিতীয়দিনে এসেই বলছিলেন তাঁর জ্বর। তাই তৃতীয় দিনে অনুশীলন এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্ব দিয়ে দিয়েছিলেন অংশভাগীদেরই একজন শিল্পী দেবাশিস ভট্টাচার্যকে। তিনি সে দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করেছেন সে কথা বলতেই হবে।

পুরো গানটি ছিল এইঃ

ইতিহাস দিয়ে যায় ডাক
রাস্তা সুদূরে মেলাক
সময়ের ধুলো ঝেড়ে আজ
মানুষই পথেতে দাঁড়াক
#
গাক ভাবনাগুলো আজ বেসুরে
সুর্যটা দিক না আলো পথ ঘুরে
হোক জানা কত শত অজানা
ঠিকানা প্রাগজ্যোতিষপুরে
#
ইতিহাসে দি যায় মাত
সুদূৰত মিলি যাওক বাট
সময়ৰ ধুলি আতৰাই
মানুহ পথতেই ৰওক
#
গোৱা ভাৱনাবোৰ আজি বেসুৰত
সুর্যইও নিতে আনে পোহৰক
হওক জনা সকলো অজানা
ঠিকনা প্রাগজ্যোতিষপুৰত
#
জীবন থামেনি সে যায় চলে,
এগিয়ে যাওয়ার সে কথা বলে
জীবন ভেজেনা চোখের জলে
আয়ুর রেখারাশি সম্বলে
দুটো চোখ স্মৃতিকেই পাক
আলো দিক জোনাকির ঝাঁক
সময়ের ধুলো ঝেড়ে আজ
মানুষই পথেতে দাঁড়াক
#
জীৱন নৰয় যায় আগুৱাই
আগুৱাই যোৱাৰেইএ কথা কয়
জীৱন নিতিতে চকুৰ পানীত
আয়ুৰ ৰেখা হাতৰ মুঠিত
দু’চকুত স্মৃতি ৰই য’ক
জোনাকীয়ে পোহৰ বিলাওক


গানটি শুনতে পাবেন এখানেঃ

   

          
এই নিয়ে পর পর চারবার ব্যতিক্রম সম্মান প্রদান করল প্রতিষ্ঠানটি। এবারে সম্মান প্রাপকদের মধ্যে ছিলেন প্রখ্যাত সত্রীয়া নৃত্যগুরু এবং শিল্পী ইন্দিরা পি পি বরা, অনাবাসী ভারতীয় শিল্পপতি  সৌরভ সেন  ( যিনি সৌর শক্তির ব্যবহার বিস্তারে কাজ করে যাচ্ছেন), ডাক্তার সুচন্দ্রা ভট্টাচার্য –শিলচর চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রী, তিনি এখন একজন সুখ্যাত নিউরো সার্জন, আর পূর্বোত্তর ভারতের সুপরিচিত গল্প লেখক দেবী প্রসাদ সিনহা।

               এমন অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত যেমন পাওনা হয়, বহুদিন পরে সঙ্গ পাওয়া পরিচিত জনের সঙ্গে আড্ডা তাও হলো তিনদিনে চুটিয়ে। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিয় শিক্ষক ঊষা রঞ্জন ভট্টচার্য ছিলেনই তিনদিনের পুরো সময় জুড়ে।এমনিতেও ব্যতিক্রমের কোন অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ হয় না তাঁকে ছাড়া। মনে হয় না গুয়াহাটি বা ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বাংলা শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির অন্য কোন অনুষ্ঠানও সম্পন্ন হয় তাঁকে বাদ দিয়ে। তিনি শুধু নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষক নন, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বাংলা সাহিত্য এবং প্রকাশনার জগতে সম্প্রতি যে জোয়ার বইছে এর বেশিটাই আসলে তাঁর অনুপ্রাণিত ছাত্রদের কীর্তি বললে কম বলা হয় । তিনি এক আন্দোলনের নাম। এই যেমন কর্মশালার এক অংশভাগী সবরী দাস ইংরেজী মাধ্যমের স্কুলে পড়ে বড় হয়েছে , বাংলা হরফে লিখতে পারে না, কিন্তু খুব ভালো বাংলা কবিতা লিখতে  পারে রোমান হরফে । এই তথ্য তিনি সন্ধান করে বের করে ফেললেন এবং মেয়েটিকে উৎসাহীত করবার জন্যে সেখানে উপস্থিত আমাকে, কবি সঞ্জয় চক্রবর্তী , বাচিক শিল্পী গৌতম ভট্টাচার্যকে ধরে বেঁধে শোনালেন তার গুটি কয় কবিতা। ছবিতে প্রমাণ। এখানে দেখুন


অনেকদিন পরে সপরিবার ছাত্রকে পেয়ে বাড়ি ডেকে নিয়ে গেলেন।  এখানে দেখুন।




          এ ছাড়াও সৌমেন, পিন্টুরাতো ছিলই, আড্ডা দেবার জন্যে পাওয়া গেল গল্পকার –চিত্রশিল্পী দিপঙ্কর করকে।  নবীন কবি সম্পাদক অমিতাভ সেনগুপ্ত ছিল। সে  আবার খুব ভালো যন্ত্রশিল্পীও। নচিকেতার সঙ্গে বাজালো এই ক’দিন। ছিল সঞ্জয় দাস । শেষের দিনের অনুষ্ঠানে আমার শহর শিলচর থেকে গিয়ে হাজির ভাষা শহীদ স্টেশন দাবী সমিতির সম্পাদক আমাদের পুরোনো বন্ধু রাজীব কর । পরের দিনই শিলচরে অনুষ্ঠান ছিল নচিকেতার।  সে সেই সূত্রে সেখানে গিয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করা হয়ে উঠেনি। সে আলাপ জুড়ে দিল বরাক এবং ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার চিন্তকদের মধ্যে মতবিনিময়ের একটা অনুষ্ঠান করা যায় কিনা, সেই নিয়ে। সে কথাও আধাতে থেকে গেল, পরে ফোনে হবে বলে রইল কথা।  আমার এক পুরোনো সহকর্মী দীপঙ্কর বৈদ্য, যার বাড়ি গুয়াহাটি কিন্তু  এখন আমাদের কলেজ থেকে গিয়ে  নগাওঁ কলেজে ছাত্র পড়ায় – সস্ত্রীক গিয়েছিল অনুষ্ঠান দেখতে। এগুলো আকস্মিক প্রাপ্তি, কিন্তু মনে থাকবে বহুদিন। এঁরা সবাই আমার পরিচিত বন্ধুজন, কিন্তু মনে হয় না মেয়ে পৌষালি এবং সঙ্গীনী সম্পাও আড্ডার থেকে আলাদা হয়ে পড়েছিল। বিশেষ করে সঞ্জয়দা, গৌতমদা,  মাষ্টার মশাই ঊষা রঞ্জন এবং তাঁর স্ত্রী রুবী বৌদি  এটা হতে দেন নি কিছুতেই।
চিত্র প্রদর্শনীর সামনে দাঁড়িয়ে দীপঙ্কর কর

               এর আগেও ব্যতিক্রমের দুই একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে বুঝবার চেষ্টা করেছি এতো এতো অনুষ্ঠান ব্যতিক্রম করে কী করে! মনে হয় না রাজ্যের অসমিয়া ভাষী কোন প্রকাশনা সংস্থা বা সাহিত্য সংগঠনও এতোটা করে উঠতে পারে। নিশ্চয় তাদের এই উদ্যোগ আমাদের উৎসাহ যোগায়, আশা জাগায়। এক পক্ষ কালের ভেতরেই এই প্রতিবেদন লিখে উঠবার আগেই গুয়াহাটিতে ব্যতিক্রম মাসডো   ডিগবয়ের চিত্র শিল্পী পার্থসারথী দত্তের একক চিত্র প্রদর্শনী করে ফেলেছে। তাদের কাজ করবার রহস্যটি এখনো বুঝে উঠতে পারিনি।   একটি বাণিজ্যিক প্রকাশনা সংস্থা বলে তারা অনুদাতা, বিজ্ঞাপন দাতা যোগাড় করে ফেলেন। কিন্তু সেরকমতো অন্য অনেকেও করতে পারতেন । তাদের চেয়ে আরো বড় বড় প্রতিষ্ঠানও রয়েছে রাজ্যে, সেদিক থেকে সৌমেন ভারতীয়া, পিন্টু গুপ্তের উদ্যম এবং উদ্যোগী বুদ্ধির তারিফ করতেই হয়, সেই সঙ্গে বাংলা ভাষা, সাহিত্য এবং সংস্কৃতির প্রচার প্রসারে তাদের আন্তরিকতা এবং দায় বন্ধতার মধ্যেই যে রহস্যটি লুকিয়ে আছে সেই নিয়ে সন্দেহ নেই। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং দায়বদ্ধতা কথা দুটোকে ঢাকা-কলকাতার আবহের সঙ্গে পরিচিতজনেরা মেলাতে পারবেন না, অনেকে তাই বাঁকা চোখে এদের দিকে তাকিয়েও থাকেন। কিন্তু অসমে বসে এদের এই যে বাণীজ্য তা একটি লড়াইও বটে। লড়াই করবার জেদ এবং বুদ্ধি ছাড়া করা এখানে তা করা সম্ভব নয় বলেই আমরা মনে করি। তাই তাদের প্রতি আমাদের  শুভেচ্ছা থাকে সারাক্ষণ।

             কিন্তু সামান্য সংখ্যক কর্মী নিয়ে এতো এতো অনুষ্ঠান সামাল দিতে গিয়ে মনে হয়েছে কিছু কিছু অসম্পূর্ণতা থেকেই যায়। এটা এর আগেও দুই একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে এমনটা মনে হয়েছে। এই যেমন একটি কর্মশালা সম্পর্কে আমাদের যে ধারণা তার সঙ্গে এই তিনদিনের ব্যাপার মেলেনি কিছুতেই। তা না মিলতেই পারে, কিন্তু  ব্যতিক্রমী পদ্ধতি বলেও মনে হয় নি। মনে হয়েছে এটা সামাল দেবার সমস্যা। যেমন আমরা জানতাম কর্মশালা শুরু হবে বেলা দশটাতে। শুরুতে কথা তাই ছিল। কিন্তু দু'তিনদিন আগে থেকেই কাগজে ঘোষণা হচ্ছিল শুরু হবে দুপুর দুতো থেকে। আমরা যেহেতু রাজ্যের বাইরে ছিলাম জানতাম না। প্রথমদিন বেলা দশটাতে অনুষ্ঠান হলে গিয়ে দেখি কোত্থাও কিছু নেই। বন্ধুজনকে তখন ফোন করে জানলাম, সময় বদলাবার কথা। ফলে ঘণ্টা চারের আমাদের এমনিতেই গুয়াহাটির এখানে ওখানে ভরা আষাঢ়ের গরমে ঘুরে কাটাতে হলো।   অংশভাগীদের নাম ভুক্তির পরে আশা করা গেছিল একটি নোট বই দেয়া হবে। এমনটা হবে আগে জানলে খাতা একটা আগে নিয়েই যাওয়া যেত, না নেয়াতে পৌষালির বেশ সমস্যা হয়েছিল। পরে যদিও নিজ উদ্যোগে এটা মেটানো গেছে। আশা করা গেছিল, আমরা অভিবাবকেরা ওখানে থাকতে পারব না, আমাদের আলাদা বসতে দেয়া হবে। সেটি হয় নি। ফলে অংশভাগীরা যখন নচিকেতার অনুরোধে গাইছিল তাদের অনেকেই ভুলে গেছিল যে তারা প্রশিক্ষার্থী, নচিকেতার এবং এতো দর্শকের সামনে মঞ্চে উঠে গান গাইতে পারার সুযোগের জন্যে এরা যেন প্রায় পরস্পরের সঙ্গে  প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেতে উঠেছিল। পেছন থেকে কিছু অভিভাবকের সন্তানের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি এবং বাক বিনিময় দৃষ্টি এবং শ্রুতিকটুর বিষয় হয়েছিল। নাম ধরে একে একে ডাকা হচ্ছিল না, ফলে কার আগে কে যায় এমন একটা চাপ সৃষ্টি হয়ে গেছিল। এটা শেষ দিন অব্দি ছিল।  শুরু থেকেই উদ্যোক্তারা বলছিলেন, নয় থেকে নব্বুই যে কেউ এই কর্মাশালাতে যোগ দিতে পারবেন—এটা কী করে সম্ভব আমার কাছে কৌতুহল ছিল। তবু নিয়ে গেছিলাম মেয়ের একটা অভিজ্ঞতা হবে বলে। তো নচিকেতার যেহেতু ভাবনাতে ছিল তিনি সবাইকে গান লিখতে দেবেন, তাই  কচি ছেলে মেয়েদের প্রতি শুরু থেকেই তিনি অনাগ্রহ দেখাচ্ছিলেন। স্পষ্টই তিনি বলছিলেন এখানে এতো ছোটদের কী কাজ? অথচ, ছোটরা কোনো বিধি ভেঙ্গে কর্মশালাতে প্রবেশ করে নি। তাদের অংশ নিতে দিয়েছিলেন উদ্যোক্তারা। ফলে নচিকেতার প্রশ্নের উত্তর শুধু তাঁরাই দিতে পারতেন। তাঁরা ব্যাপারটি এর পরেও স্পষ্ট করেন নি।  তাতে শিশু শিল্পীরা  বেশ ম্রিয়মান হয়ে পড়েছিল। অনেকরই মনে হচ্ছিল তারা অংশভাগী থেকে শুধু শুধু নিতান্ত শ্রোতাতে অবনমিত  হয়েছে। পরে উদ্যোক্তারা এই সমস্যা আঁচ করে  একটি তালিকা ধরিয়ে দিলেন নচিকেতাকে , নচিকেতা খুব তাড়াতাড়ি একেবারেই যারা শিশু তাদের  ডেকে  কয়েকটি গানের কলি শুনে নিলেন একেবারে শেষে। বলা হয়েছিল তিনদিনের কর্মশালা থেকে নচিকেতা যে ক’জনকে বাছাই করবেন তাঁরা শেষ দিনে তাঁর সঙ্গে এখানে তৈরি গান গাইবার সুযোগ পাবেন। কিন্তু কার্যত দেখা গেল প্রথম দিনে তিনি যাদের গান  লিখে আনতে বলেছিলেন তারাই আসলে তাঁর নির্বাচিত শিল্পী থেকে গেলেন। এবং তৃতীয় দিনে তিনি আসলে অনুশীলনে আসতেই পারেন নি। শুধু তাই নয়, তৃতীয়দিনের তিন ঘণ্টার অনুশীলন পর্বে দরজা জানালাবিহীন শীততাপ নিয়ন্ত্রিত হলে আলো হাওয়া এবং শব্দযন্ত্রের কোনো ব্যবস্থা না থাকাতে ভর গরমে অংশভাগীদের নাজেহাল অবস্থা হয়েছিল। মনে হয় এতে যে চাপ সৃষ্টি হয় , তাতেই শেষের দিনের অনুষ্ঠানে  দেখা গেল সবাইকে মঞ্চে তুলতে বাধ্য হলেন উদ্যোক্তারা।   নচিকেতা শুধু গানটির শুরুতে কর্মশালা এবং প্রশীক্ষার্থীদের সম্পর্কে , প্রস্তুত গানের সম্পর্কে দুটো কথা বলে   মঞ্চ থেকে নেমে গেলেন দর্শকাসনে। তাঁর একক অনুষ্ঠান এর পরে তিনি একাই করেন। যদিও সেটিও ছিল সংক্ষিপ্ত।  অর্থাৎ তাঁর সঙ্গে প্রশিক্ষার্থীদের  গাইবার যে কথা ছিল সে ঘটনাটি ঘটে নি। এ ছাড়াও যেহেতু শ্রোতা দর্শক হিসেবে তিনদিনেই কর্মশালাতে  আমাদের থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল, আশা ছিল নচিকেতা বাংলা গানের ইতিবৃত্ত, তাঁর নিজের গানের ইতিবৃত্ত বা সাধারণ ভাবে গান সম্পর্কে কিছু তাত্ত্বিক আলোচনা করবেন, একটা দ্বিমুখী আলাপ জমে উঠবে। কিছু প্রশ্ন করে বুঝে নেবার সুযোগ পাবে সবাই।  সেরকম কিছু হয় নি। বস্তুত যখন যা হচ্ছে তখনকার ঠিক পূর্বমুহূর্তে কারো ধারণা খুব স্পষ্ট ছিল না যে এর পরে কী হবে। এগুলো ব্যবস্থাপনার ত্রুটি বলেই মনে হয়েছে, যেদিকে ব্যতিক্রমের আসলে মনোযোগ দেয়া উচিত পরের অনুষ্ঠানগুলোর জন্যে। অন্যথা আগ্রহ ধরে রাখা কঠিন হবে, অনুরাগীর চেয়ে বিরাগী বাড়াবেন ব্যতিক্রম মাসডো। সেটা হোক, তা আমরা যারা অসমের বাংলা ভাষা এবং সাহিত্যরে নিষ্ঠাবান কর্মী তাঁরা কেউ চাইব না। চাইব, ব্যতিক্রম যা করছে তাই করুক আরো বেশি বেশি, কিন্তু আরো বেশি সামর্থ্য, সুপরিকল্পনা , সুবন্দোবস্ত এবং সপ্রতিভতার সঙ্গে।
                বাকি কথা ছবিতে হোক। এখানে পুরো অনুষ্ঠানের কিছু বাছাই ছবি রইল এলবামেঃ


সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০১৩

বাসা বদল

।।মিফতাহ উদ্দীন।।



 
  মার রূহ বেরিয়ে যেতেই শুরু হয়ে যাবে এক মহা ব্যস্ততা,
কোদাল, শাবল আর দা’র হবে জোগাড়
পারিবারিক গোরস্থানে আন্দাজ করে এক জায়গা হবে ঠিক,
যেখানে সমকালে হয়নি কারুর দাফন
সাড়ে তিন হাত মাপ নিয়ে শুরু হবে আয়তাকার এক বাসার কাজ
কেটলি ভরে চা আসবে কারিগরদের জন্য
গ্রামের বিভিন্ন বয়সি জুটির ও হবে পাল করে আগমন
আমার নতুন ঘর দেখতে, কেউ কেউ টিপ্পনীও কাটবেন।
দেখতে দেখতে আমার ঘর হয়ে যাবে পুরো।
আমাকে হয়তো স্নান করিয়ে তখন শুইয়ে রাখা হয়েছে খাটে
সুরা ইয়াসিন আর আগর বাতিতে আমার চারিদিক নেবে এক অপার্থিব রূপ
তারই মাঝে কচি কাঁচাদের থাকবে এক অনাবিল আনন্দ
বন্ধুময় চারিদিক যেন তাঁদের জন্য এক বিশেষ পাওনা।
এমন অকৃত্রিম আনন্দ আর কিছু বিশেষ বুক ফাটা বিষাদের মাঝখান দিয়ে
চারজনের কাঁধে ভর দিয়ে আমি বাসা বদল করে নেবো চুপচাপ।

২৮শে জুলাই, ২০১৩
মাদ্রাজ

বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই, ২০১৩

শুধু তোমারি জন্য












ত আশা রয়ে গেলো ঢাকা
নিরাশার বালুচরে
রয়ে গেলে তুমি রয়ে গেলাম আমি
বাঁধা
সময়ের বাহুডোরে ।।
বদ্ধ মনের আঁধার ঘরে
আলোর একটিও কিরণ যখন
পায়নি যখন একটিও ভাষা
রয়ে গেলে তুমি রয়ে গেলাম আমি
আর ব্যর্থতার নীরবতা।।
                   
                             ।। অরুণিমা ।।


মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০১৩

কার বাপের সম্পত্তি ?


(c)ছবি
         শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাঠ ( Silchar DSA  ) দেখতে গিয়ে আমরা তিন বন্ধু চরম হেনস্থার শিকার হয়ে গেলাম আমাদের দূর থেকে মাঠ দেখতে দেওয়া তো হয়ইনি বরং সেখানে আর  না আসার হুমকি দেওয়া হল । আর সঙ্গে অশ্লীল গালিগালাজ ও আমাদের বন্ধু বিশ্বকল্যাণ পুরকায়স্থের উপর হাতাহাতি করতেও ওরা এগিয়ে আসে । আমরা ঘটনার প্রতিবাদ করলে মাঠের ওই দুই কর্মী এই মাঠ তাদের বাপের সম্পত্তি বলে আমাদের হুমকি দিয়ে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয় । শিলচর শহরের সভ্য নাগরিক এবং ছাত্র হিসেবে আমাদের একটাই প্রশ্ন , আজকাল শিলচর শহরের মাঠ দেখতে গেলেও কী অশ্লীল ব্যাবহার ও হাতাহাতির সম্মুখীন হতে হবে ? সেখানে তো আজকাল প্রকাশ্যে দাদাগিরি চলছে ! এ মাঠ কী সত্যি ওদের বাপের সম্পত্তি ? কে তাদের অধিকার দিয়েছে অশ্লীল গালিগালাজ ও হাতাহাতি করার ?
                            
                                           --- রাজেশ শর্মা ,
                                               বিশ্বকল্যাণ পুরকায়স্থ,
                                               সূর্যতপ নাথ ।
      ( লিটিল ম্যাগাজিন সম্পাদক – ‘ পাগলবনে’ কবিতার অভয়ারণ্য )

তুলসী সাঁও

##

যে পথ দিয়ে হেটে যায়
কবি, সে পথ দিয়ে হেটে যায়
আজ দীর্ঘ  মিছিল।

যে সভ্যতা যত্নে তৈরী করেছিল পিরামিড
আজ সেই সভ্যতা ভেঙ্গে খান খান।

এরপরেও বলবে বেঁচে আছি,
ভালোবাসা আছে!

##
গত কদিন ধরে
সুভদ্রার রথের জং
তুলছে কিছু মানুষ।
ঘোড়া গুলির গায়ে লেগেছে সাদা রঙ।

পিচগলা রাস্তায়, নরম হাতে সাদা রেখা এঁকে,
দিক ঠিক করে দিচ্ছে তুলসী সাঁও,
ফোস্কা পড়া এই হাতেই রাতে চুমু খায় পৌরসভার পারিষদ
এরপর বিক্রি হয়ে যায় গণতান্ত্রিক শরীর
সুগন্ধি সাবানের বুদবুদে সমাজতন্ত্রের স্লোগান
গাল দেয় শহীদ মিনার। সহ্য করে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস।

এরপরেও বলবে ভালো আছি!
কিছুই শেষ হয়ে যায়নি!

##
কোর্টের কাগজটা এখনও রান্নার গ্যাসের পাশেই
রাখা আছে, সই করে দাও
নচেৎ টিপ দাও,
এটাও না পারলে কপালের টিপটা
সেঁটে দাও। ফরেনসিক ল্যাবে পাঠিয়ে প্রমান করে দেব
তোমার ঘামের গন্ধ, এটা আমার দেয়া নয়

প্রমান করে দেব সামাজিকভাবেই তোমায় বিক্রি করেছিল
তোমার বাবা,

####
আজ আমি আস্ত সমাজতত্বকেই নোটিস পাঠাবো।
আদালত কাল রাতে তোমার সাথে ঘুমোবে না,
আদরও করবে না, ভাত কাপড় দেবে না।

ভাঙ্গা পিরামিডটা লীজে নিয়েছি,
বিছানার চাদরটা সমাধিস্থ করবো বলে

সেদিন রক্তাক্ত হবে গণতন্ত্র
মেঘ লিখবে কবিতা, আর তুমি বাসর জাগবে
রাতভর।
পরদিন ভোট, বঙ্গোপসাগরের সরকার নির্বাচন।

শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০১৩

বর্তমান ভারত

         
                                                                                                           ।। সঞ্জীব দাস।।

    ভারত উন্নতশীল দেশ।বর্তমান ভারত অনেক এগিয়ে গেছে। প্রযুক্তির দিক দিয়েও অনেক এগিয়ে গেছে। কিন্তু এই উন্নতি সঠিক অর্থে উন্নতি কি? এখনও ভারতে দরিদ্রের সংখ্যা পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ। এখনও ৪০ কোটি মানুষ রাতে না খেয়ে ঘুমাচ্ছে। কিছু মুষ্টিমেয় লোকের ধনবৃদ্ধি মানে ভারতের ধনবৃদ্ধি নয়। নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার মানে ভারতের উন্নতি নয়। এই দরিদ্রতা যতদিন পর্যন্ত দূর হচ্ছে না, ভারতকে সঠিক অর্থে উন্নতশীল দেশ বলা যাবে না। বর্তমান ভারত নানান সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তারই কিছু সমস্যার বিষয়ে নীচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলোঃ
         ১. দরিদ্রতাঃ- দরিদ্রতার দিক দিয়ে ভারতের স্থান তৃতীয়। পৃথীবির ৩৩%দরিদ্রের বাস ভারতে।UNICEF এর মতে ভারত ৪২%শিশু যাদের বয়স ৫ বছরের কম তারা পরিপুষ্টির অভাবে ভুগছে। তাদের ওজন মাত্রাতিরিক্ত কম। বিশ্ব ব্যাঙ্কের সভাপতি জিম ইয়ঙ্গ বলেছেন অন্যান্য দেশে দ্রুত গতিতে হ্রাস পেলেও ভারতে তা নুন্যতম। এই দরিদ্রতার প্রধান কারণ হল দ্রুতগতিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি। জনসংখ্যার দিক দিয়ে ভারতের স্থান দ্বিতীয়।UNCEUS (National Commission for Enterprise in the Unrecognized Sector)এর মতে ৭৭%ভারতীয়ের আয় দিনপ্রতি ২০ টাকারও কম। বিহার, ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, উড়িষ্যা, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ,পশ্চিম বঙ্গেদরিদ্রতার হার সবচেয়ে বেশি। যতদিন পর্যন্ত এই দরিদ্রতা হ্রাস না পাবে আমরা ভারতকে উন্নত বলতে পারি না। তাই আমাদের ভারতেউন্নত বলতে পারি না। তাই আমাদের এবং ভারত সরকারের প্রয়োজন দ্ররিদ্রতা হ্রাস করার জন্য ফলপ্রসূ পদ্ধতি অবলম্বন করা।
          ২. শিশুশ্রমঃ- বর্তমান ভারতে শিশুশ্রম অন্যতম একটি প্রধান সমস্যা। দিন দিন শিশুশ্রমের হার ক্রমেই বেড়ে চলেছে। যেখানে উচিত শিশুরা বিদ্যালয়ে যাবে, পড়াশুনা, খেলাধুলা করবে সেখানে ঠিক বিপরীত ঘটছে। অনেক অনেক বড়ো উদ্যগগুলোতে লোকিয়ে বাঁচিয়ে হলেও সেখানেই শিশুশ্রম বেশি হচ্চে। আজকাল চায়ের দোকানে নায্যমূল্যের দোকানে প্রকাশ্যেই হচ্ছে। কিন্তুতাতে সাধারণ জনসাধারণ এবং সরকারের টনক নড়ছে না। এমনকি শিক্ষিত জনসাধারণও এই শিশুদের দিয়ে ওনেক শিক্ষিত ঘরগুলোতে শিশুশ্রম হচ্ছে।The International Labour Organisation (ILO)২০০২ সাল থেকে ১২ জুনকেআন্তর্জাতিকভাবে বিশ্ব শিশুশ্রম বিরোধিতা দিবস হিসাবে ঘোষিত করলেও এখনও শিশুশ্রম ক্রমেই বেড়ে চলছে। এবছরের এই ১২ জুনেই হায়দরাবাদে একটি অলঙ্কারের দোকান থেকে ৬ জনশিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। এবং এর পরের দিনই রাজকোট থেকে ১৪ জন শিশুকে একটি অলঙ্কারের কর্মক্ষেত্র থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। যাদের মধ্যেব১২ জন শিশুই পশ্চিম বঙ্গের। রাজস্থানে সবচেয়ে বেশি শিশুশ্রম হচ্ছে। ১০ শতাংশ শিশুশ্রম এই রাজস্থানেই হচ্ছে। জয়পুরের ৫০,০০০ শিশুরা যাদের বয়স ৫-১৪ তারা শিশুশ্রমে লিপ্ত। উত্তরপ্রদেশ ও অন্ধ্রপ্রদেশের পরেই এই রাজ্যের স্থান। তাই ভারত সরকারের প্রয়োজন উপযুক্তপদ্ধতি গ্রহণ করা যাতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই ভয়াবহ সমস্যা থেকে ভারত মুক্তি পায়। এবং আমাদের সাধারণ জনসাধারণের প্রয়োজন এর দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা। 
            ৩. নারী নির্যাতনঃ- বর্তমান ভারতে নারী নির্যাতন এক ভয়াবহ রূপ। যেখানে নারীরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে ভয় পাচ্ছে। নারীদের সম্মানরক্ষা এখন বিপদে। কিছু মানুষেরা যাদের আকৃতিটাই শুধু মানুষের মতো কিন্তু মানবতা তাদের মধ্য থেকে অনেক আগেই লুপ্ত হয়ে গেছে, তারা শুধু নিজের লালসা পূরণ করতে জানে। অকারণেই নিজের অবমানবিক বাসনা পূর্ণ করছে। তাদের মা-বোনও যে নারী তারা কবেই ভুলে গেছে। তারা কোনোদিনও নারীদের সম্মান করতে শিখেনি। যার ফলে নারীরা আত্মরক্ষার ওভাবে ভুগছে।NCRB (National Crime Record Bureau)এর মতে বর্তমান ভারতে প্রতি মিনিতে ২২ টি ধর্ষণজনিত ঘটনা থানায় নথিভুক্ত হচ্ছে। এই ধর্ষণজনিত ঘটনা দিনে দিনে কেবল বেড়েই চলেছে। ২০১০ এএর সংখ্যা ছিল ১৪,২৬৩ এবং ২০১১ তে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫,৪২৩। আজকাল এই শ্বপদরা শিশুদেরকেও ছাড়েনি। তারাশিশুদের সরল অবুঝ মনের সু্যোগ নিয়ে তাদের উপরও নিজের অবমানবিক বাসনা পুর্ণ করছে। শিশু নির্যাতন, শিশুদের যৌনপীড়ন আজকের সমাজে এক জলন্ত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে । ২০০১ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ৪৮,৩৩৮ টি শিশুধর্ষণ জনিত ঘটনা থানায় নথুভুক্ত হয়েছে। আবার অনেক ঘটনা আছে যেগুলোথানায় নথিভুক্তই হচ্ছে না। আজকের ভারতে নারীদের বিভিন্ন সরকারি দফতরে, স্কুল-কলেজে, রাস্থাঘাটে যাতায়াত করতে গিয়ে অপমানিত হতে হচ্ছে। তাদের নানা প্রকারন্তরে নানাভাবে অপমানিত হতে হছে। আপরদিকে কিছু কিছু লোকের ধারণা যে মহিলাদের এরকম বিপত্তির জন্য নাকি মহিলারা নিজেই দায়ী তাদের পোষাক আশাকের জন্যে। কিন্তু একটি পোশাক কখোনই একটি নারির গঠন করে না। প্রয়োজন সেইসব লোকের ধারণার পরিবর্তন এবং সেই নরপিশাচদের হাত থেকে নারীদের রক্ষা করা। তাই নারীদের সম্মান রক্ষায় সারা দেশের জেগে উঠার সময়আসন্ন। বর্তমান ভারত এই সকল ভয়াবহ সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া আরও নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে যেমন বেকার সমস্যা, শিক্ষিতের হারের অভাব। তাই বর্তমান ভারত উন্নতিশীল হলেও তা অনুন্নতের সামিল।এখনও ভারত খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটছে। তাই আমাদের সাধারণ জনসাধারণের প্রয়োজন ভারত সরকারকে দোষারোপ না করে এই সকল সমস্যা দূরীকরণে ভারত সরকারকে উপযুক্ত সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। তাহলেই ভারত উন্নতির পথে আরও প্রগতিশীল হবে এবং একটি সুস্থ এবং সুশৃঙ্খল সমাজ গড়ে উঠবে।

বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই, ২০১৩

জয় বাংলা

!!সপ্তর্ষি বিশ্বাস !!

মহান এড্‌মিনের পদে করি নিবেদন

“আদর্শ” লিপির কথা কহিব এখন
ফেবুর চরণে করি শতেক প্রণাম
বিচিত্র কাহিনী এই আমি বর্ণিলাম।।


শুনেন শুনেন বন্ধুগণ শুনেন দিয়া মন
ভালো কথা এখান আমি করিব বর্ণন।

সারাদিন ফেবুহীন আছিলাম একা
গু্গুলের ক্রোমে ফেবু যাইলো না দেখা।

কি যে করি দুখে মরি নাহি পাই কূল
ফায়ারফক্স এ অবশেষে যাইলাম ব্যাকুল।

গুণী চাঁদা সুশান্তদা ছিলেন মাতিতে
তাঁরে দেখে আইল প্রান আবার ছাতিতে।

দুঃখের গাথা হইল পাতা, শুনলেন দিয়া মন
ফায়ারফক্সের গুন দিলেন বর্ণন।

লিপি হইলো ডাউনলোড “আদর্শ” যার নাম
বাংলাভাষা এমন খাসা দেখিতে তামাম।

বন্ধু যারা বাংলা ছাড়া চলে না জীবন
এই লিপিতে লিখুন সবে “ঈশানে” এখন!!

আমারে করেন দোয়া লাইক্‌ দিয়া পাতে
তারপরে নিদ্রা যান সুখে আজ রাতে।।

মঙ্গলবার, ২ জুলাই, ২০১৩