আর্চিস গ্যালারীতে অনেককাল ধরে নীরবে অপেক্ষা করছে দুটি লাল গোলাপ।
হাতে তৈরি কাগজে রাতের পর রাত জেগে এই গোলাপের জন্ম দিয়েছিল আর্ট কলেজের ছেলে ঋতু। তেল রঙ কিনবে, তাই একদিন নিজেই বিক্রী করে দিয়েছিল কালো রাবার মুড়ে গোলাপ আঁকা কার্ডগুলি।
সেই থেকে গোলাপ ঘিরে অন্ধকার।
এখন কি কাল কে জানে! কতকাল সূর্য দেখেনি, কুয়াশাদের সাথে খেলেনি, বাবুই পাখির কোলাহল শোনেনি। ভেবেছিল মিষ্টি প্রেমের উপহার সেজে মুক্তি পাবে এককালে এই কালো রাবারের ঘুম থেকে এই গোলাপ হৃদয়।
ঋতু বলেছিল, তানি কে ভরিয়ে দেবে কাগুজে গোলাপে। ভেবেছিল, হাতে তৈরি এই কাগজে ছড়িয়ে দেবে শেষ বার কোন জুঁই ফুলের পারফিউম।
কোন মিষ্টি প্রেমের উপহার সেজে খুনসুটি করবে ভ্যালেন্টাইন ডে'র সন্ধ্যায় দুই লাল গোলাপ।
সময় গেল, চরিত্রহীন এখনও বেষ্ট সেলার। গোলাপ এখনও বিক্রী হয়। শুধু বিক্রী হয়না ঋতুর হৃদয়। এখনও তানির কালো ফিতের বাঁধুনি আলগা হয়নি।
ঋতু এখন আর ছবি আঁকেনা।
আজ ১৬ই জানুয়ারি। আজই এমনি করে চলে গিয়েছিলেন রূপনারায়নের পারে শরৎবাবু। চরিত্রহীন এখনও বেষ্ট সেলার। কিন্তু কেউ মনে রাখেনি চরিত্রহীনের মৃত্যুর খবর।
কেউ মনে রাখেনি শরৎ ঋতুর নিরুদ্দেশ হওয়ার খবর। কেউ মনে রাখেনি কাল শেষবার আমার দেয়া গোলাপের শেষ পাপড়িটি ঝড়ে পড়েছিল তোমার ডায়েরির পাতা থেকে অজান্তেই।
কেউ মনে রাখেনি, এই দিনটিতে তুমি চলে গিয়েছিলে। কেউ মনে রাখেনি, রেখে গিয়েছিলে আমাকে।
ঋতুর আঁকা গোলাপ আর আমি, এখন কালো চুল বাঁধার রাবারে হাঁসফাঁস করছি, অন্ধকার এক ঘরে, এককোণে তোমারই জন্যে...
হে পিতা! স্বর্গ মর্ত্যের প্রভেদ আমি জানিনা। আমি জানি, তোমার প্রশস্ত দুই হাত আর সেই হৃদয়ের কথা। যা আমাকে দিয়েছিলে তুমি আমার প্রথম কৈশোরে, আমাকে। আমার মাকে, আমার প্রথম ভালোবাসাকে।
তুমিই ছিলে আমার কৈশোরের আর্চিস গ্যালারী...।
(C) ছবিঃPicture
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন