।। সপ্তর্ষি
বিশ্বাস ।।
১।
প্রকৃতির সঙ্গে সংগ্রাম ও আপোষের মূল্যে যার প্রতিষ্ঠা তা অবশ্যই গোষ্ঠী। আবার গোষ্ঠী গঠিত ‘ব্যক্তি’র দ্বারা। আর ব্যক্তি সমাজ নির্মাণ করে আবার সমাজের দ্বারাই সে’ও হয়, হতে থাকে নির্মিত। এই দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়াটি আজ ইতিহাসসিদ্ধ। তথাপি ‘ব্যক্তি’ মানুষের গহনের, বিস্তারের ঠিক কতোটুকু অনুধাবন করতে সক্ষম ইতিহাস? ঠিক কোনখানে মানুষের গোষ্ঠীযাপন হয়ে যায় ব্যক্তিজীবন থেকে একেবারেই আলাদা? না আদৌ হয়ে যায় কি আলাদা কখনোই? এই প্রশ্নেরই বা ঠিক কতোটুকু অনুধাবন করতে সক্ষম ইতিহাস? সমাজবিদ্যা? এমন কি ব্যক্তি মানুষটির আত্মজীবনীও?
এমন আত্মজীবনী অদ্যাবধি লিখিত হয়েছে কি যা প্রকৃতই আত্মজীবনীকারের প্রকৃত ছবি? এমন কি অতি নিভৃতে দিনলিপি লিখে রাখা কোনো ব্যক্তি যে মুহূর্তে টের পায়, যে তার এই লিপি, গোপনে অন্য কোনো ব্যক্তি, সে যেই হোক পাঠ করছে, তন্মাত্র তার দিনলিপির রেখাপথও বেঁকে যায় কাঁচের ভিতর দিয়ে বেঁকে যাওয়া আলোরেখার মতো। আর যে ব্যক্তি জানে, যে কখনো তার দিনলিপিটির প্রকাশিত, মুদ্রিত হয়ে পরবার সামান্যতম সম্ভাবনা আছে -- সেই ‘দিনলিপি’ তে আর যাই হোক ব্যক্তিটিকে আর পাওয়া যায়না।
আত্ম কাহনের গতি পথের এই যে ‘প্রতিসরণ’ তা নির্ভর করে, কাঁচটি বা যে বস্তুর ভিতর চিরে চলেছে আলোরেখাটি তার ‘প্রতিসরাংক’র উপরেই। যে আত্মজীবনী লিখিত লোকশিক্ষা দেওয়ার প্রয়োজনে এবং লিখতে বসবার আগেই যে লেখক জানে তার ‘আত্মজীবন’টি চলেছে মুদ্রিত বা পঠিত হতে তার প্রকৃত জীবন-গল্পের সঙ্গে ‘লিখিত’ জীবন-গল্পের মধ্যকার কোণটি, বেঁকে যাওয়াটির সঙ্গে যে আত্মজীবনী লিখতে বসেছে ‘কালো রুনু’ থেকে সাদা ‘রুনু’ সাজতে তার প্রতিসরণ-কোণ, হয় ভিন্ন। অর্থাৎ আমি নাকচ করে দিচ্ছি, দিতে চাইছি ব্যক্তির অন্তর্গত ইতিহাসকে জানার নিরিখে, এমন কি, তার দিনিলিপিও। দিচ্ছি কেননা একটি ‘ব্যক্তি’র গহনে ততোটুকুই আদত ‘ব্যক্তি’ যতোটুকু কে সে ঢেকে রাখে। বরং সে অনেক অনেক বেশি স্বচ্ছতায় আপনাকে প্রকাশ করে তার শিল্পে।
কিন্তু না তো প্রতিটি ব্যক্তি সক্ষম দিনলিপি কিংবা আত্মজীবনী লিখতে, শিল্প সৃষ্টি তো দূরস্থান। অতএব সমাজ,রাষ্ট্র,শ্রেণি যে কোনো কিছুরই ইতিহাসের সঙ্গে, তার গতির সঙ্গে সংগতি রেখে গোষ্ঠীর ইতিহাস ও দ্বন্দ্ব যায় যতোদূর অনুধাবন করা তার এক সহস্রাংশও যায়না ‘ব্যক্তি’র ইতিহাসকে অনুধাবন করা। ইতিহাস-ভিত্তিক সফলতম রচনাতেও যে সকল চরিত্র হয়ে ওঠে রক্ত মাংসের – তারাও আদতে তৎকালীন সমাজদের, রাষ্ট্রের ইসিহাসের ছাঁচে ঢেলে নিয়ে নির্মিত। এখানে এসেও আরেকবার ফিরে যেতে হয় সেই প্রশ্নেই যার ভিত্তিতে আমার এই অক্ষরযাত্রাঃ ঠিক কোনখানে মানুষের গোষ্ঠীযাপন হয়ে যায় ব্যক্তিজীবন থেকে একেবারেই আলাদা? না আদৌ হয়ে যায় কি আলাদা কখনোই?
এমত চিন্তা, ব্যক্তি আর গোষ্ঠীর সম্পর্ক নিয়ে নানা কালে নানাজনের মতো আমার মর্মে তরঙ্গ তুলেছে তোলে। মার্কসবাদের ছাত্র ও সাধ্যানুযায়ী অনুগামী হওয়ায় হয়তো একটু বেশিই ভাবিত করে বিষয়টি -- প্রায় প্রতিক্ষেত্রেই। মহাভারত প্রতিবার পাঠেই ভাবি ‘পঞ্চপাণ্ডব’ যূথটিকে যতোটা জানলাম ততোটা কি জানলাম প্রতিজন পাণ্ডব কে? কোনো কোনো দৃশ্যে এদের অন্তর্গত ব্যক্তিত্বের ভিন্নতা, তিক্ততা নিজ নিজ অবয়বে এসে দাঁড়ালেও অন্তিমে আবার মিশে গেছে তাদের পাণ্ডবত্বে। সহস্র বাধা সত্ত্বেও যুধিষ্ঠির নিরত হয়নি বার বার জুয়া খেলা থাকে। বিকর্ণসহ আরো অনেকের দ্বিমত সত্ত্বেও কৌরব পক্ষ অন্তিমে যুদ্ধেই নেমেছে। অর্থাৎ ‘কোয়ান্টিটি’ এখানেও নিয়ন্ত্রণ করেছে ‘কোয়ালিটি’কে। ঠিক তত পরিমাণ বাধা অন্য ভ্রাতারা দিতে পারেনি যুধিষ্ঠিরকে যাতে সে বিরত হয় জুয়াখেলা থেকে বা কৌরব পক্ষীয়দের অনেক ‘ব্যক্তি’ যুদ্ধের বিপক্ষে থাকলেও তাদের ‘কোয়ান্টিটি’ ছিলনা ততটা যতটা হলে যুদ্ধ হতনা। … এই এক উদাহরণ মাত্র। সমস্ত সাহিত্যে, ইতিহাসে, সমাজ বিজ্ঞানে আদতে মানুষের এই ‘ব্যক্তি’ আর ‘গোষ্ঠী’ চরিত্রের দ্বন্দ্ব আমাকে আকর্ষিত করে, ভাবিত করে।
বছর চার পাঁচ আগে Allianz Franceh এ সদস্য হয়েছিলাম আর সেখানেই একদিন উল্টে পাল্টে দেখতে দেখতে চোখে এলো এই পংক্তিগুলিঃ The boundaries of private life are not laid down once and for all; the division of human activity between public and private spheres is subject to change. Private life makes sense only in relation to public life; its history is first of all the history of its definition. ……. On one side of the protective barriers private life coincided more or less exactly with family life.
গ্রন্থটি নিয়ে বসে পড়লাম। গ্রন্থ পাঠ করে তথ্য – যা শতকরা ৯৯.৯৯ ভাগই অনর্থক – সংগ্রহ আমার গ্রন্থ পাঠের চালিকাশক্তি নয়। চালিকাশক্তি নয় জ্ঞান সংগ্রহ করাও। পড়তে ভালো লাগাই প্রথম শর্ত। দ্বিতীয় শর্ত বিষয়টি। বিষয়টি যদি মর্মকে স্পর্শ করে কোনোভাবে। ... অতএব এই পঙক্তিগুলি আমাকে বিদ্ধ করল। ওলটাতে ওলটাতে দেখি অন্যত্র রয়েছে লিখিত: Private and family life are not the same. Within the family group the individual continues to have a world of his own. But because there are few sources to tell us about individual experience, we …study private life as if it were synonymous with family life.গ্রন্থটি ‘রেন্ট’ এ নিয়ে এলাম। কিন্তু পড়তে গিয়ে দেখলাম এটি ঠিক একবারে ‘পড়ে ফেলবার’ গ্রন্থ নয়। অতএব কিনে রাখলাম গ্রন্থটি। ২০১৭ সালে। তারপর মাঝে মাঝেই উল্টে পাল্টে পড়েছি নানান সময়ে। এইবার বইটি খুলে বসেছিলাম একটি সম্পূর্ণ অন্য অনুষঙ্গে - প্রুস্তের ‘হৃত সময়ের অন্বেষা’র দ্বিতীয় খণ্ডটি পড়তে পড়তে আবার মনে এল গ্রন্থটির কথা যার পরিচয় এইরূপ:A History of Private Life, Volume V: Riddles of Identity in Modern Times by Antoine Prost (Editor), Gérard Vincent (Editor), Phillippe Ariès (Series Editor), Georges Duby (Series Editor), Arthur Goldhammer (Translator) । প্রুস্ত পাঠ করতে করতে গ্রন্থটির কথা মনে পড়বার সচেতন হেতুটি এই যে ৬ খণ্ডে রচিত ‘হৃত সময়ের অন্বেষা’ (In Search of Lost Time বা Remembrance of Things Past)-তে প্রুস্তের বহুমাত্রিক চেষ্টার মধ্যে একটি অবশ্যই ‘ব্যক্তি মানুষ’এর চেতনা-পরিধির বিস্তার-রেখাটির আবিষ্কার। এতদ্ভিন্ন A History of Private Life : Riddles of Identity in Modern Times -এর মূল ভূগোল ফরাসি দেশ এবং ফরাসি দেশের সেইসব স্থানেরও উল্লেখ রয়েছে যারা প্রুস্তের রচনাতেও হাজির। ...
আগে ‘খাবলা’ ‘খাবলা’ পড়েছিলাম তবে এবার গ্রন্থটিতে নিবিষ্ট হলাম অবলীলায়।ইতিহাসবিদ Eric Hobsbawm মানব ‘গোষ্ঠী’র ইতিহাসকে যে চারভাগে ভাগ করে চারটি অনন্য গ্রন্থ রচনা করেছেন সেগুলি এই:
The Age of Revolution: Europe 1789–1848
The Age of Capital: 1848–1875
The Age of Empire: 1875–1914
The Age of Extremes: The Short Twentieth Century, 1914–1991
আর Riddles of Identity in Modern Times যে কালক্রমকে ছুঁয়ে আছে তা’ও মোটামোটিভাবে The Age of Extremes এরই সমান্তরাল। প্রুস্তের মহা-উপন্যাস ২য় বিশ্বযুদ্ধ অবধি বিস্তারিত হরে পারেনা কেননা ১৯২২ সালেই গত হয়েছেন প্রুস্ত। প্রুস্তের মহা-উপন্যাস Hobsbawm এর The Age of Empire হয়ে The Age of Extremes এর প্রথমাংশ আর Riddles of Identity in Modern Times-এরও প্রথমাংশই ছুঁয়ে থাকে। ... তবে প্রুস্তের মহা-উপন্যাসের গ্রন্থি মোচনে না Hobsbawm , না তো Riddles of Identity in Modern Times কোনো সূত্র দেয়। বরং Hobsbawm এর The Age of Extremes আর Riddles of Identity in Modern Times, পড়তে পড়তে আমার মনে হয়েছে, পরিপূরক নানান প্রেক্ষিতে।
২।
মনেপড়ে ‘তওবা টেক্ সিং’ কে।
মনে আছে ‘তওবা টেক্ সিং’ কে? সাদাত মান্টো’র সেই ‘তবা টেক্ সিং’? কী ছিল তার অন্তর্গত ব্যক্তি পরিসর? ‘তবা টেক সিং’ নামক স্থান হিন্দুস্থানে নাকি পাকিস্তানে -- এই প্রশ্নটি ভিন্ন ছিল কি কিছু আদৌ? কি ছিল সেই ’৪৭সালে পাকিস্তান থেকে হিন্দুস্থানে, হিন্দুস্থান থেকে পাকিস্তানে উদ্বাস্তু হয়ে আসা সংখ্যাতীত ‘ব্যক্তি’র অন্তর্গত পরিসর ? এই মুহূর্তে, ‘ভারতবর্ষ’ নামক দেশে, এন আর সি-র নামে ডিটেনশন ক্যাম্পে পড়েথাকা, মুহুর্মুহু মরতে থাকা ‘ব্যক্তি’দের কি অবশিষ্ট আছে কোনো অন্তর্গত পরিসর? আসামের ‘বঙ্গালখেদা’ আন্দোলনের কথা ভাবি … ‘ব্যক্তি’র পরিসরের কাহিনি ফিরে যায় গোষ্ঠীর ইতিহাসে: Despite the traditional notion that France welcomes immigrants and has a long tradition of hospitality, all signs are that the bulk of the population was and is xenophobic. Take, for example, the hysterical proclamations of the extreme right in the 1930s and the almost universally accepted equation of unemployed with the number of immigrants. ... এই বা এই সকল equation এর universally accepted হয়ে যাওয়ার মর্মে নিহিত যে xenophobia তাও ব্যক্তির পরিসর থেকে উঠে এসে ক্রমে হয়ে ওঠে গোষ্ঠীর আর তাই কেড়ে নেয় অন্য অন্য ‘ব্যক্তি’র অন্তর্গত পরিসর। ‘দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে’র কবি-উচ্চারণের আবডালে এই সকল অন্ধকারই আদতে গিলে খায়, খাচ্ছে, খাবে শুধু ব্যক্তির নয়, গোষ্ঠী’রও অন্তর্গত পরিসরকে যেখানে আবাদ হওয়ার কথা ছিল ‘রামপ্রসাদী’ ‘সোনা’র।
সাদাত মান্টো’র ‘তবা টেক্ সিং’ হেন যাঁরা চেতনা আর অর্ধচেতনার মধ্য পরিসরে হয় গেলো হারিয়ে , তাঁদের সঙ্গে হারিয়ে গেলো একটি যুগ। এইবার তাকানো যাক তাঁদের দিকে যাঁরা ‘উদ্বাস্তু’র উল্কি নিয়ে টিকে গেলেন ‘স্থানে’ কিংবা ‘স্থানে’ তাঁদের, প্রত্যেকের, ব্যক্তি-পরিসরের দিকে, ব্যক্তি-পরিসরের সন্ধানে। যেহেতু Poverty eliminates differences and makes private life uniform. তাই ‘উদ্বাস্তু’ উল্কি দাগা ব্যক্তিরা স্থানে-স্থানে নিজেদেরকে দুমড়ে মুচড়ে মানিয়ে নিলেন দশ ফুট বাই দশ ফুট এর পরিসর তথা ব্যক্তি-পরিসরে। অর্থাৎ এঁদেরও থাকল না কোনো ব্যক্তি পরিসর। অদ্যকার ওলা-উবের ক্যাব আর হাজার হাজার হোম্ ডেলিভারি এপের চালচিত্রে দাঁড়িয়ে পাঠ করি: In the 1920s and 1930s many workers came to France without their families. Denounced as ‘lawless nomads’ they lived in conditions that made private life impossible. No bed ever went unoccupied in hotels for unmarried workers: while the night shift worked, they day shift slept on just-vacated sheets.
তখন আবারো নিশ্চিত হই যে আদতে পুঁজি ভিত্তিক ‘সভ্যতা’র স্থপতিরা চায়নি, চায়না তাদের নিজস্ব বৃত্তটির বাইরে আর কারোর থাকুক কোনো পরিসর। আশ্চর্য এই যে ১৯২০-৩০-এ ইতালি বা পোলদের যে অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়েছিল পরদেশ ফ্রান্সে, প্যারিসে, অদ্য ভারতবর্ষীয় ‘আচ্ছে দিন’-এ এই ‘দেশ’টিরই রাজ্য – আসাম, ত্রিপুরা, মনিপুর,নাগাল্যাণ্ডের বাসিন্দাদেরও ‘উদ্বাস্তু’ উল্কিটি দৃশ্যাতীত করোটিতে এঁকে নিয়ে এইভাবেই বোম্বে,বেঙ্গালোর,মাদ্রাজ,দিল্লিতে সম্মুখীন হতে হচ্ছে এই সর্বাত্মক ‘পরিসরহীনতা’র। ‘ব্যক্তি’ থেকে ‘প্রেত’ হয়ে যাওয়ার। মনে কি আসেন না জীবনানন্দ: “কাছে দূরে কেবলই গ্রাম পতনের শব্দ হয়...” ... আজকের এই সকল পরিসরহীন প্রেতেদের মর্মে উঁকি দিলেও কি আমরা দেখতে পাব না যে ‘কোনোদিন’ ব্যক্তি হয়ে তার স্বভূমিতে প্রত্যাবর্তনের স্বপ্নটিই তার একমাত্র ‘ব্যক্তিগত জীবন’ , ঠিক যেমন এখানে বলেছেন লেখকেরা: It is no exaggeration to say that such dreams were the extent of their private life, their only compensation for the long, tiring hours of work and the bleak conditions in which they lived.
৩।
এই একটি মাত্রা গ্রন্থটির যা আমাকে আলোড়িত, আন্দোলিত করেছে সর্বাধিক – পুঁজিবাদের এই ‘নিয়তি’ হয়ে ওঠা -- শুধুমাত্র কলে, কারখানায়,যুদ্ধ মাঠে নয়। ব্যক্তির অন্তর্গত ন্যূনতম পরিসরকেও কেড়ে নেওয়ার এই কাহন শোনা – একটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে, একটি ভিন্ন দেশের, ভিন্ন সময়ের ইতিহাস থেকে যা আমার দেশের শুধু নয় পৃথিবীর সব দেশেই এতাবৎ প্রাসঙ্গিক এবং যতদিন এই ‘পুঁজি’ তার লগ্নীর প্রয়োজনে জমে ওঠা অন্তর্গত পুঁজকে বলবে ‘সভ্যতা’ - থেকে যাবে প্রাসঙ্গিক ততদিনই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন