“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

মঙ্গলবার, ২১ জুলাই, ২০১৫

কবি রুচিরা শ্যাম স্মরণে



।। শিবানী দে।।

কবি রুচিরা শ্যাম চলে গেলেন ।
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের অনূদিত কবিতাগুচ্ছ 'ওমর খৈয়ামের রুবাই' (বিশ্ববাণী প্রকাশনী, প্রকাশকাল ১৯৭৮সাল)-এর উৎসর্গপত্রে প্রথম  রুচিরা শ্যামের নাম দেখেছিলাম । প্রথম রুবাই-এর অনুবাদটি এই রকম----

যৎসামান্য শুকনো রুটি,পাত্রভরা প্রাণমদিরা
পদ্যমাখা পুস্তিকাটির সঙ্গে তুমি সই রুচিরা
আর কী থাকে জবরদস্ত ; কুঞ্জবনে মত্ত হাতির ?
এই বিজনের গান করেছে স্বর্গ----- মিছে দিবসরাতির ।

উৎসর্গপত্রে এই রুবাই-এর দ্বিতীয় পঙক্তি উদ্ধৃত করে শক্তি লিখেছেন, 'রুচিরা শ্যাম প্রীতিভাজনেষু'। পড়ার পর মনে কৌতূহল হয়েছিল, এত কাব্যিক ওঁ অসাধারণ নামের এই মহিলাটি কে, যাকে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের মত কবি নিজের কাব্য উৎসর্গ করেন ? এর পরে দেশ/আনন্দবাজারে কখনো সকনো রুচিরা শ্যামের কবিতা পড়েছি । আরো পরে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী মীনাক্ষী চট্টোপাধ্যায়-কৃত তাঁদের কম বয়সের স্মৃতিচারণে রুচিরা শ্যামের প্রসঙ্গ পেয়েছিলাম ----- বান্ধবী রুচিরা শ্যাম শিলচর চলে যাচ্ছেন । মনে প্রশ্ন জেগেছিলকেন শিলচর ? কোলকাতার মেয়ে হয়ে শিলচর চলে যাচ্ছেন কেন ? তিনি যে বরাক উপত্যকারই মেয়ে, সেটা জানতে আরো অনেক দিন লেগে গিয়েছিল ।(পরে অবশ্য তিনি স্থায়িভাবেই কলকাতায় বসবাস করতেন )।

কিছুদিন আগে বইমেলা থেকে 'বরাক উপত্যকার বাংলা কবিতা' (প্রকাশক উবুদশসম্পাদনা তমোজিত সাহা অমিতাভ দেবচৌধুরী) বলে একটা সঙ্কলন পেলাম । সঙ্কলনে রুচিরা শ্যাম ও আছেনআর সব কবির মত তাঁর ও তিনটে কবিতা নেওয়া হয়েছে । সেখানেই জানলাম রুচিরা শ্যামের পরিচয় ।বড় আফসোস হল, নিজ ভূমির অনেক কবিরই পরিচয় জানতাম না, এত ভাল এঁদের কবিতা, তবুও এত কম এঁদের প্রচার । আমাদের কবিরা যাঁরা ওখানকার পত্রপত্রিকায় স্থান পান, তাঁদের নাম জানলেও ধাম জানা যায় না । ধরে নিই ওঁরা ওদিককার লোক । উক্ত সঙ্কলনে প্রকাশিত রুচিরা শ্যামের দুটো কবিতা এখানে তুলে দিচ্ছি  আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি হিসেবে ।

হৈমন্তী
ক্ষীণ জল, উইপোকা,ধুলো, কুয়াশায় বর্ণাঢ্য পশম
এই নাকি উৎসবের মাস, উদ্বাহের সফল সময়,
বহমান শোলার টোপর, গিলে করা প্রাচীন পোশাক
রংচটা ক্ষয়িষ্ণু দেয়ালে পিঠ ঘষে বিবর্ণ শহর ।
শিলচরে ধোঁয়াটে বিকেল অতর্কিতে অসম্ভব ডাক
কবে এলে,আসো না এখন, ভালো আছো, কতদিন পর!
হেমন্তে শহরে এত ধুলো, কিছু দেখি আসলে দেখি না
এই বুঝি আয়েসের দিন, উনুনের আমেজী আঁতাত।
জমাট পশম বেচাকেনা সে মেলা কোথায় আজকাল
কতদূর উড়ে ঘুরে আসা, খুঁজে ফেরা বাল্যের আলাপ।
চাবিগুলো হারিয়ে ফেলেছি মনে হয় অলৌকিক কথা
উইপোকা কুরে খেয়ে গেছে জমানো চিঠির যত পাতা।
তবু এই উৎসবের মাস অলিগলি ঘুরে ফিরে আসে
আমি খুঁজি কিছু আত্মীয়তা চলে আসি রবাহূত হয়ে।


শৈশব
ডাকিবে না বউ কথা কও
এ বাগানে ফোটে না মালতী
ঘুমায় ঘুমায়ে পড়ে মেয়ে
মুখে তার সুখের চাঁদিনী।
ঘুম ঘুম ভোমরার পাখা
মাগো, তুমি কোন কথা কও?

উড়াল শেখেনি টলোমলো
এ মেয়ে সরল যেন পাখি
সে জানে না কপালে আগুন
কারে কয় জনমদুখিনি
পিতা নীল ঘনছায়া রাখো
তুমি জানো ফোটে না মালতী।

ডাকিবে না বউ কথা কও
তোমার আঙনে গাঢ় ছায়া
ছায়ায় ঘুমায়ে পড়ে মেয়ে
ঢলো ঢলো সুখের চাঁদিনি
জানেনা সে ললাট লিখন
কারে কয় যোগিয়া বিবাগী
উড়াল জানে না টলোমলো
এখনো সরল যেন পাখি ।









কোন মন্তব্য নেই: