কবিতা পড়ছেন নীলদীপ |
(নীলদীপ চক্রবর্তী পেশায় তিনসুকিয়ার একটি ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয়ের শিক্ষক। কিন্তু ছাত্রজীবন থেকে বাংলা ভাষা সাহিত্যের সেবক। গল্পও লেখেন। তিনসুকিয়ার একটি স্থানীয় টিভি চ্যানেলে সংবাদও পড়েন বাংলায়। কবিতা লেখেন বহুদিন ধরে। ইতিমধ্যে একটি কবিতার বইও বেরিয়েছে। কিন্তু চাপা স্বভাবের এই কবিকে তিনসুকিয়ার বাইরে কেউ চিনতেন না, জানতেন না বিশেষ । এই সেদিনও। এই বছর খানিক ধরে যুগশঙ্খের 'রবিবারের বৈঠকে' কিছু কবিতা পাঠিয়েছেন ছাপাতে। এই মাত্র।
তিনসুকিয়াতে কবিতা লেখনে অনেকে কবি হবার জন্যে। কিন্তু কবিতাকে ভালোবেসে কবিতা লেখেন, লিখতে জানার চেষ্টা করেন যে গুটি কয় , তার মধ্যে নীলদীপ অন্যতম। তিনসুকিয়াতেও তাঁকে ধরা খুব সহজ কর্ম নয়। আজ ৭ আগষ্ট 'উজান সাহিত্য গোষ্ঠী'র ১০ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে আয়োজিত হয়েছিল এক বহুভাষিক কবিতা পড়ার অনুষ্ঠান। সেখানে এলেন , পড়লেন। যথারীতি শ্রোতামন জয় করলেন। তারই একটি নিয়ে নিলাম, ঈশানে তুলে দেবো বলে। আশা করি আপনাদেরও ভালো লাগবে।)
আমার কথা মনে পড়লেই
বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস
বুক,
মাথা আর পেট থেকে
বেরিয়ে আসে
দীর্ঘশ্বাস—
সোনারঙের দিনগুলো-শুয়োপোকার মতো
বেরিয়ে আসে চেতনার আকাশে!
আমি মাঠে খেলতাম, নদীতে নাইতাম
কাশেমচাচার বাড়ি যেতাম—
আমার বাড়ি নবীগঞ্জে
আমার বাড়ি আখাউড়ায়
আমার বাড়ি ছুটতে ছুটতে...ব্রাহ্মণবেড়িয়ায়!
রেজানুর, আমিনা, রুকুদের সাথে
ছুটতে ছুটতে হঠাৎ টুকরো টুকরো
তুলোর
মতো ছড়িয়ে যেতাম পাবনায়, খুলনায়!
ঐখানে একটা ডোবা ছিল, ঐখানে রেলপথ
ঐখানে বিশালাক্ষ্মীর মন্দির, এইতো
ঈদ, এইতো নবান্ন...এখানে কাশেম
ওখানে নবারুণ। ঐখানে বাঁকা চাঁদ
ডুবে যাওয়া, জংলাঝোপ---শালডুংরি
ওখানেই খুব আবেগে আমিনাকে জড়িয়ে ধরা!
সেসব কথা মনে পড়লেই , বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস।
ফিঙে পাখিদের গা ডোবানো বুড়িগঙ্গায়
চিত সাঁতারে হারিয়ে যেতাম
আর বাঁশিতে হলুদ আকাশে ছড়িয়ে দিতাম বিষাদসুর
আমার বাড়ি তখন ঢাকায়! আমার বাড়ি বিক্রমপুর!
হঠাৎ দেখি মানুষগুলো কেমন যেন টুকরো মেঘে
হারিয়ে যাচ্ছে মাটির মানুষ, কান্না চাপায় ক্ষিদের বেগে।
ছড়িয়ে পড়ে মাটির মানুষ, টুকরো হয়ে রক্ত আকাশ
সেসব কথা মনে পড়লেই---
আর
কিছু নয়, দীর্ঘশ্বাস!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন