“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

রবিবার, ৯ মার্চ, ২০১৪

মমতার চিঠি




কবি রমানাথ ভট্টাচার্য
 (গেল শতকের অসমিয়া কবিতার অন্যতম বিখ্যাত, বহু পঠিত কবিতা হেম বরুয়ার এই মমতার চিঠি। মূল অসমিয়া শুরু হয়েছিল এভাবে...

মৰমৰ,
এয়া মম এডাল জ্বলাই লৈছোঁ। আজি বহুত দিনৰ
মূৰত তোমালৈ চিঠি লিখোঁ বুলি। বাহিৰৰ উৰুঙা বতাহ  জাকে
মমডাল আহি কোবাইছেহি...চাওঁ খিৰিকিখন জপাই
দিওঁ...।


এমন বেশ কিছু খ্যাতিমান অসমিয়া কবিতার অনুবাদ করেছিলেন অসম তথা পূর্বোত্তরের বাংলা ভাষার অন্যতম কবি রমানাথ ভট্টাচার্য। আধুনিক অসমীয়া কবিতা নামে অনুবাদ গ্রন্থটি প্রকাশ করে গুয়াহাটির অসম প্রকাশন পরিষদ,  ১৯৯২তে। তারই প্রথম অনুবাদ কবিতাটি ঈশানের পুঞ্জমেঘের পাঠকদের জন্যে তুলে দিলাম। কবি রমানাথ এখন থাকেন মুম্বাইতে। কিন্তু অসমকে তিনি ভোলেন নি। অসমের প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতার চিহ্নস্বরূপ সম্প্রতি সেখানে গড়ে তোলেছেন রমানাথ ভট্টাচার্য ফাউণ্ডেশন। সেই সংস্থা প্রতিবছর গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠান করে সম্মান জানিয়ে থাকে অসম তথা পূর্বোত্তরের দুই সাহিত্যিক প্রতিভাকে। একজন তার অসমিয়া হন তো আর জন বাঙালি। এবারে যেমন ৯ মার্চ, ২০১৪ সম্মান জানাবেন অসমিয়া কবি হীরেন্দ্রনাথ দত্ত এবং ত্রিপুরার অন্যতম প্রবীন কবি স্বপন সেনগুপ্তকে। সেই নিয়ে সংবাদও এই কবিতার সঙ্গে রইল। সেই সঙ্গে দৈনিক যুগশঙ্খে প্রকাশিত রমানাথের একটিসাক্ষাৎকার। সাক্ষাৎকার পড়লেই বোঝা যাবে কোন পরিবেশে তাঁর বাংলা কবিতাগুলো অসমে তেমন পরিচিত নয়, অথচ অসমিয়া অনুবাদ কবিতাগুলোর সঙ্গে বর্তমান ব্লগারের পরিচয় ঘটেছিল সেই নব্বুইতেই। সেখান থেকে তাই কবিতাটি তুলে দেয়া। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। --সুশান্ত কর )



If you are coming down through the narrows of the river Kiang
Please let me know beforehand,
And I will come out to meet you
            As far as Cho-fu sa.
                                    Ezra Paound

প্রিয়তম,
একটি মোমবাতি জ্বালিয়ে নিলাম। আজ অনেক দিন পর তোমাকে
চিঠি লিখছি। বাইরের দমকা হাওয়া মোমবাতি নিবিয়ে দিতে
চাইছে। ...যাক গে, জানালাটা বন্ধ করে দিই। ...
সাত বছর আগের কথা তোমার মনে
পড়ে? আমরা যে নতুন জীবন
শুরু করেছিলাম। ...সেই অজানা নেশা আমাকে খুব করে
পেয়ে বসেছিল।
সেদিন ছিল কার্তিকের কুয়াশা ছড়ানো কোমল সকাল।
উঠোন আবৃত ছিল ঝরে-পড়া শেফালি ফুলে। আর সন্ধে বেলা,
তোমাদের বাড়িতে প্রথম আসার দিনে, আকাশের
মেঘের মোহনা থেকে হলদে রঙের চাঁদ নৌকা হ’য়ে আমাকে যে
ডেকেছিল তারার দেশে। ...
আমার পরনে লাল শাড়ি দেখে তুমি
কেন অমন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছিলে?
আমার কীরকম লেগেছিল, জানো? তুমি যেন কোন দূর
বিদেশের স্বপ্নাতুর আলোর মানুষ। আর আমি? আমি যেন
ঝরে-পড়া এক শেফালি ফুল।
সেদিন মনের সাগরে ভেঙে-পড়া ঢেউ আর
জেগে ওঠা ঢেউ অসংখ্য কম্পন তুলেছিল। তোমার বুঝি
ওসব কথা মনে নেই?
বাবা যে চিঠিতে লিখেছিলেনঃ “মা, তুই নতুন
বাড়িতে হেসে খেলে থাকিস।”
ওসব সাত বছর আগের কথা। আমার যে সব কিছুই
 পুরানের গল্প মনে হয়। ... জৈষ্ঠ মাসে বাবার
বাৎসরিক হয়ে গেল। বাবুল এখন বড় হয়েছে।
ওর উপর পাটীতে ডালিমদানার মতো ছোট ছোট
দাঁত উঠেছে। ও আমাকে ছেড়ে একটুও
থাকতে পারে না। ( এক এক সময় ওমন রাগ হয়,
তুমি না নেই, তাই।)

ও আমার সাদা থানপরা বেশ এরকম বিস্মিত হয়ে
দেখে কেন? জন্ম থেকেই এই বেশ ওর
পরিচিত, --সে জন্যই কি? শোনো , বাবুল এখন বড়
হয়েছে? ( আরেকটু বড় হলে ইস্কুলে
দেবো। ও ইস্কুলে চলে গেলে
আমার বুকটা খাঁ খাঁ করবে, প্রিয়!)
আর কি লিখবো। বিশেষ কিছু বলার নেই। প্রতিশ্রুতি দাও,
তুমি যেদিন ফিরে আসবে, আমাকে আগে থেকেই জানিয়ে দেবে।
আমি ভোগদৈ নদী-দিয়ে ভেসে গিয়ে লুইতের বুক থেকে তোমাকে
ডাকবো,--তুমি যেদিন
ফিরে আসবে। আমাকে আগের থেকে জানাতে ভুলো না।
ভালোবাসা নিও। ইতি
           তোমার মমতা

পুনঃ এবার মাঘ বিহুর ‘মেজি’র আগুন খুব
লাল হয়ে জ্বলেছিল। ...আমাদের বুড়িমার নতুন ছাগলী
দুটি বাচ্চা দিয়েছে। একটি নিখুঁত সাদা।
অন্যটি চিতল। 
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
দৈনিক যুগশঙ্খ
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
দৈনিক যুগশঙ্খ, রবিবারের বৈঠক













কোন মন্তব্য নেই: