(বিজয়কুমার ভট্টাচার্য তিন দশকের বেশি সময় জুড়ে কবিতা লেখেন। থাকেন শিলচরে। বাংলাসাহিত্যে স্নাতকোত্তর এই কবি শিলচরের সুপরিচিত সাংবাদিকও। মূলত ১৯শে মের ভাষা আন্দোলন এবং অসমে বাঙালি অস্মিতার বৃত্তে ঘোরে বলে এই কবির কবিতা বরাক উপত্যকার বাইরে খুব একটা পরিচিতি পেতে পারে নি। পাঁচালির ছন্দে তাঁর অনায়াস দখল। এই কবিতাটি আশা করছি সবার ভালো লাগবে। নিয়েছি তিন দশক আগে প্রকাশিত তাঁর প্রথম কবিতার বই 'পুড়ে পুড়ে স্বর্ণ হোক সম্মিলিত পাপ' থেকে। কবিতাটি বাছাই করা হয়েছিল ২১শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে তিনসুকিয়া আসামে 'উজান সাহিত্য গোষ্ঠী' আয়োজিত আবৃত্তি প্রতিযোগিতার জন্যে। সেখানে যে ক'জন আবৃত্তি করেছেন প্রত্যেকটি শোনা যাবে নিচের ভিডিও তালিকাতে একের পরে এক অন্য আরো কিছু কবিতার সঙ্গে)
সারাদিন খোয়া গেল সূর্য অস্তাচলে
একটি পাখিও নেই শিকারের জালে
ঘরে আছে প্রিয়তমা ফুল্লরা রমণী
উনানে চাপায় হাঁড়ি পদশব্দ শুনি,
কোথায় মুকুন্দরাম মন্বন্তর দেখে
তোমার আখ্যান আজো পড়ে থাকে লোকে
বর্ষণমুখর ঝড় রাতের আন্ধারে
মানুষ অজ্ঞাতে যায় ভিটে মাটি ছেড়ে
তবুও তরুণ রক্তে ডিহিং লোহিত
জল ঝড় নাহি মানে খর হাওয়া শীত
ডেরা বাধেঃ রুটি রুজি, তারো ঘরে বউ
ফুল্লরার দুঃখকষ্ট জেনেছে কি কেউ
আমার ধনুক ভাঙ্গা গুণীনের গুণ
অরণ্য জুড়িয়া ক্রোধে জ্বালায় আগুন
পশুপাখি মৃতপ্রায় অথবা বিলীন
রিক্ত হস্তে ফিরি ঘরে এভাবেই দিন
যায় মাস, বর্ষ, যায় বর্ষান্তরে
সহস্র ফুল্লরা কাঁদে লাচাড়ী পয়ারে
কে বিদেশী যাও নায়ে পূর্বস্রোতমুখী
আমারে তুলিয়া লও আজন্মের দুখী
পিদিম নেভানো রাত, ভোরে সূর্য ওঠে
দুশ্চিন্তার রেখাচিত্র অংকিত ললাটে
অমঙ্গলে সন্ধ্যা নামে পাখি ঘরে আসে
ফুল্লরার শবদেহ নদীজলে ভাসে
ডেরা বাঁধা মানুষের ঘরবাড়ী পোড়া
অঘোর শাওনে দেখো গাঙে ভাসে মরা
কোথায় মুকুন্দরাম চারণের কবি
অকাল সন্ধ্যায় আঁকো কবিতায় ছবি
আহা, এই ভিটে মাটি ধন ধান্যে ভরা
বাঁচতে চেয়েছে এক দুঃখিনী ফুল্লরা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন