“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

রবিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১৪

সাহিত্যে আকাদেমিতে সম্মানিত কবি রবীন্দ্র সরকারের পাঁচটি কবিতা



(
রবীন্দ্র সরকার
'ধূলিয়ৰি ভৰিৰ সাঁচ'লৈ কবিতা গ্রন্থের জন্যে এবারে অসমিয়া সাহিত্যে আকাদেমি পেলেন বাঙালি কবি রবীন্দ্র সরকার। অসমিয়া বাংলাতে তিনি নিরন্তর লেখেন। কবিতা ছাড়াও প্রবন্ধ লেখেন। এক সময় হেমাঙ্গ বিশ্বাসের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ছিলেন। এখন যদিও কলকাতা থাকেন অসমে ‘নতুন পদাতিক’ , ‘নতুন পৃথিবী’ ইত্যাদি ‘বাম’ ঘরানার কাগজের তিনি নিয়মিত লেখক। আমাদের কাছে এই মুহূর্তে পুরস্কৃত বইটিতো নেই। তবে বিচ্ছিন্নভাবে এখানে ওখানে প্রকাশিত কবিতা আছে বেশ। তারই কয়েকটি এখানে তোলে দিলাম। অসমিয়া কবিতা দু’টি সংকলিত হয়েছিল অসম প্রকাশন পরিষদের প্রকাশিত হোমেন বরগোহাঞি সম্পাদিত ‘এশ বছৰৰ অসমীয়া কবিতা’ সংকলনে। আর বাংলা কবিতাগুলো নেয়া হয়েছে, নাইন্থ কলামের সম্পাদিত ‘অসমের বাংলা কবিতা সংকলন থেকে। প্রসূন বর্মণের সঙ্গে সেই সংখ্যার আমন্ত্রিত সম্পাদক ছিলেন অমিতাভ দেব চৌধুরী।)

নৰকত বসন্ত

টা নষ্ট ৰঙালাউৰ বাবে ডাস্টবিনত
অন্তহীন টনা-আজোঁৰা—
হিংস্রতাত ইজনে –সিজনৰ নেলু চেপি ধৰে
গেলা আবর্জনাত বাগৰ খায় নিৰন্নৰ স্বাধীনতা
বাইশ বছৰীয়া চফল ডেকাই
ৰঙীন চশমাৰ ফাঁকেদি ৰঙ চায়।
হঠাতে ক’ৰবাত যেন কাঁচ ভঙাৰ শব্দই
ৰজনজনাই যায় ঘৰ ---দুৱাৰ-বিশ্ব সংসাৰ......
ভৰিৰ তলৰ পৰা মূৰলৈকে তাৰ ৰক্তপ্রবাহ
চিৰিককৈ জঁপিয়াই উঠে,
কিবা এটা যেন উল্কাপিণ্ডৰ দৰে প্রচণ্ড বেগেৰে বুকুৰ পৰা ওলাই আহিব খোজে।

ডাস্টবিনত ৰঙালাউৰ স্থূলতাত
নাগৰিক যন্ত্রণাই চক খায়,
গোলাপৰ সুৰভিত মুর্ছা যোৱা মানুহজনে হাঁহে।
তথাপি বহাগ আহে
কৃষ্ণচূড়া ৰঙে ৰঙে আৰু ৰঙা হয়,
বাটৰ কাষৰ নঙঠা ল’ৰাটোৱে
লঘোনৰ মাকজনী মৰাৰ পিছত
বাছস্টপত থিয় হৈ
ৰৈ ৰৈ সুহুৰি দি কুলিৰ মাত মাতে।
আঃ নৰকত এতিয়া বসন্ত।
~~~~000~~~~



















এজন কবিৰ কবিতা পঢ়ি

কাৰণ তেওঁ এজন মানুহ।
কাৰণ তেওঁ এজন কবি।
তেওঁ
বেলিটো বুকুত লৈ
আকাশলৈ
মেলি দিয়ে হাত
দৃষ্টি
নক্ষত্রৰ ফালে স্থিৰ।
তেওঁ
জোনটোকো
নমাই আনিব বিচাৰে
চহোৱা মাটিত
আৰু জাৰকালিত
উলঙ্গ শিশুটিৰ বাবে
চিলায়
এটি গৰম কামিজ।
আজন্ম
তেওঁ যুঁজে
নিজৰ বিৰুদ্ধে
শত্রুৰ বিৰুদ্ধে
আৰু জৰাজীর্ণ
প্রাচীৰখনক
ভাঙি গুৰিয়াই
ধাতৱ ঝঙ্কাৰেৰে আনে
মুক্তিৰ দিন।
কাৰণ তেওঁ এজন স্বাধীনতাকামী মানুহ।
কাৰণ তেওঁ এজন শান্তিকামী মানুহ।
~~~~000~~~~

আত্মপ্রতিকৃতি


তকাল একটু সহজ হব বলে
বাঁকা পথে হাঁটতে হাঁটতে,
তোমার কাছে এসেছি জটিল
ভাঙাচোরা মুখ নিয়ে---
মুখ না মুখোশ, কে জানে;
সুন্দরকে করে তুলেছি বীভৎস।

কতকাল লোকের মুখের খুঁত ধরতে গিয়ে
নিজের মুখের পোড়া দাগটা দেখা হয়নি
আয়নায়। পাথরে মাথা ঠুকতে ঠুকতে
ভুলে গেছি মানুষের মুখ।
নিজের সুখটুকু কেড়ে আনতে
অন্যকে ছুঁড়েছি দুঃখের আগুনে। আমার
ভাঙা কাচের মতো হাসির শব্দে চাপা পড়েছে
অনেক কান্নার শব্দ আর রক্তপাত।

কতকাল আমি রাতের তারা-জ্বলা আকাশ দেখিনি,
শুনিনি ফুল ফোটার শব্দ , ভোরের পাখির ডাক---
জানালা খুলিনি, খুলিনি দুয়ার।

কতকাল আমি মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে
রক্তের ভিতরে টের পাইনি
প্রতিবাদের একটা জ্বলন্ত অক্ষর।

কতকাল আমি সহজ হতে ভুলে গেছি।

~~~~000~~~~






















বৃষ্টি বিষয়ক

তকাল আমরা বৃষ্টির জন্যে বসে আছি
খররৌদ্রে মেলেছে তার পশমের হাত;
চরম তাপ চিবিয়ে খাচ্ছে হাড়গোড় মানুষের
শরীরের লবণ গড়িয়ে সাগর।

কোথাও জলাধার নেই—কাঁটা ঝোপ---
সবুজ-বিছানো স্টেশন ভুবনমোহিনী;
অলিন্দে গোলাপায়রার বকবকম পেখমবাহার---
রাশিরাশি পাথরের ভুর, দিকচিহ্নহীন
সজারুর পিঠের মতো মাঠ আর আগুন বাতাস
ভগ্নস্তূপে শিস দেয় লুপ্তপ্রায় কঙ্কাল-করোটি।

কতকাল আমরা বৃষ্টির জন্যে বসে আছি
ফোটায় ফোটায় ঘুঙুরের শব্দ, লোকউৎসব---
বাগাড়ুম্বার তালে তালে পাখা মেলে প্রজাপতি
বুকের ফাটল ভরে জল;বীজতলা থেকে
সাদা হাড় ফুঁড়ে এবার জাগবে অঙ্কুর
মেঘেরা সব নেমে আসবে চেরার খাসিয়াপুঞ্জিতে—
সারিবদ্ধ তীরন্দাজ, শবের আঘাতে
কুম্ভ ভেঙে মাটিতে গড়াবে সেই জল।
~~~~000~~~~

ব্যতিক্রম

বকিছু আগেরই মতো
গাছে গাছে পাখির ডাক
ঝুমঝুমি বাজিয়ে দৌড়ে-যাওয়া
জলজলি নদী
বসন্তের রং অথবা
বৃষ্টির জন্যে ব্যাকুলতা
সব কিছু আগেরই মতো
খেত-ভরা ধান
প্রেমে উত্তাপ আর কবিতায় শব্দ
ঝাঁ ঝাঁ দুপুরের নিঝুম সেই পথ
চোখের জল অথবা আগুন
মুখোমুখি বসে- থাকা নীরবতা

শুধু তোমার গলার স্বর ছাড়া।
~~~~000~~~~



কোন মন্তব্য নেই: