“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

বৃহস্পতিবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৪

প্রলাপ : এক গুচ্ছ কবিতা...



(C)ছবি



















 প্রলাপের প্রলাপ


ত্য  কথাগুলো  কথাগুলো প্রবঞ্চনা,

নিপীড়ন আর শোষণের জগতে
বার বার ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হতে হতে
কখন জানি প্রলাপ হয়ে যায়।

প্রলাপ - ১


শুধু জামা পরলেই লজ্জা ঢাকা যায় না

অন্তরবাসটাও জরুরী।

প্রলাপ - ২


একটির পর একটি বসন্ত এসেছে

চলেও গেছে চুপিসারে
বুঝিনি কোকিলের কণ্ঠস্বর এত মধুর।

প্রলাপ - ৩

চারদিকে শুধু বিচ্ছিন্নতাবাদের অপলাপ।
আমরা একত্রিত কখন ছিলাম?

প্রলাপ - ৪

অমাবস্যার জ্যোৎস্না গায়ে মেখে
বসে আছি অস্তিত্বের অভ্যর্থনায়
ডুমুর ফুলের ডালি হাতে নিয়ে।

প্রলাপ -৫

কুকুর বেড়ালের লালায় ঠোঁট ভিজে আছে
মানুষ মানুষের চুম্বন ভালোবাসে না।


প্রলাপ -৬


বিদ্যুৎ চমকের পর অন্ধকার যেভাবে পৃথিবীকে দ্রুত গ্রাস করে

তেমনি তার হাত
যখন  অন্য আরেকটি হাত ধরে চলে যায়
আমার হৃদয়ের অলিগলিতে আঁধার নমে আসে
আর আমি ঠিক বুঝে নেই
পুঁজিবাদের পৃথিবীতে ভালোবাসাটাও
টাকা দিয়ে কিনে নিতে হয়।

প্রলাপ -৭


প্রতিদিন নিষিদ্ধ প্রেমিকারা ভিড় করে রাস্তায়

একটু প্রেমের আশায়
খেলা করে প্রেম রাতের আঁধারে
'অশ্লীল' বাস্তবতায়
জন্ম দেয় মূষল ধ্বংসের হাতছানি নিয়ে।

প্রলাপ - ৮


রাজনীতির (নাকি নীতিহীন) বিষাক্ত ছোবলে

নীল হয়ে যায় রোজদিন কত অজগর
মৃত্যু নিশ্চিত তবু শেষবারের মত
সবকিছু গ্রাস করে নিতে চায়।

প্রলাপ - ৯


ওরা  অমাবস্যার  আকাশেও  চাঁদ ওঠাবে কথা দিয়েছিল

অমাবস্যা এসেছে ঠিকই চাঁদের আলোটাই শুধু চোখে পড়েনি।
  
প্রলাপ -১০

প্রেম মধুর তবে অমৃত নয়

এ যে বিষ, পানে অমরত্ব লাভ হয়।

প্রলাপ - ১১


বিদায়ই যদি দেবে তবে চোখে জল কেন

হৃদয়ে আগুন জ্বালো, আগুন
অগ্নি স্ফুলিঙ্গে একটু স্নান করি আজ।

প্রলাপ - ১২


প্রেম প্রেম খেলা তো অনেক হল

এবার নাহয় ঝগড়ার ছলে ঝগড়া করি।

প্রলাপ - ১৩


স্বর্গের নয়, পৃথিবীর কথা বল বন্ধু

চাইনা অপ্সরাদের উত্তপ্ত শরীরী স্পর্শ; মায়া মদিরা
একটু ঐহিক যন্ত্রণা পারোতো দাও
দুটি ঘর্মাক্ত দিন সৃষ্টি  সৃষ্টি খেলায়।

প্রলাপ - ১৪


বিশুদ্ধ জল, বিশুদ্ধ বাতাস, বিশুদ্ধ আহারের মত

আজ বিশুদ্ধ হৃদয়ের বড় অভাব পড়ে গেছে।

প্রলাপ - ১৫



তুমি মানবী; মায়াবী বলেই

তোমার ফেসবুক স্ট্যাটাস
ক্ষণিকে শতকের ফোয়ারা ছুটায়
আর আমি  নিজের স্ট্যাটাস নিজেই আওড়ে যাই বারবার।

প্রলাপ - ১৬


গুণতে গুণতে একশ তো হবেই

শিশুপাল যত খুশি পাপ করে যাও।

প্রলাপ - ১৭


দোকানের পাশে ফেলা

শিখরের প্যাকেটের টুকরোর মত
কতদিন বল ছেড়া হৃদয় নিয়ে বেঁচে থাকা যায়
বরঞ্চ হৃদয়হীন লম্পট হব
কোনদিন সুযোগ পেলে ।

প্রলাপ - ১৮


সব সময় ভলো হওয়াটা জরুরি নয়

মাঝে মাঝে মন্দও হতে হয় ভালোর জন্য।

প্রলাপ - ১৯


বিজ্ঞদের পাশ গলিয়ে একটু এগিয়ে যেতে গিয়ে দেখি

এ যে সব রুক্ষ ছন্দ ছন্দ খেলা
আমার ভাবনার শব্দেরা বুঝি এবার
ফিরতি ট্রেনে পাড়ি দেবে অজানায়।

প্রলাপ - ২০

আজকাল লিখতে গেলেই হোচট খাচ্ছি
ভাবতে গেলেই ধপাশ্
শোতে গেলে ঘুম আসে না
মনে হা-হুতাশ।

প্রলাপ - ২১


আমি মার্কস্ বুঝি না

বুঝি না লেনিন, স্টেলিন, মাও সে তুং
আমি বুঝি না বুদ্ধ, জিশু, কৃষ্ণ
বুঝি না হজরত মহম্মদ
আমি আমার মত করে গেয়ে যাব গান
গান মানুষের।

প্রলাপ - ২২


আমার স্বাস্থ্যবতী ফোনবুকটার দিকে খেয়াল করিনি অনেকদিন

তাই তার মেদ ঝরাতে হিমশিম খাচ্ছি আজকাল।

প্রলাপ - ২৩


শহুরে ফুটবল

ঝুল বারান্দার মাঠ পেরোয় না কখনো


প্রলাপ - ২৪


সুন্দরী যাত্রীর পাশে বসা কুৎসিত পুরুষটিও

নিজেকে সুপুরুষ ভাবে
উল্টোটাও হয় মাঝে মাঝে।

প্রলাপ - ২৫


রাম শ্যামের সাধ্য নেই দূর্নীতি হটাবার

আমরা মায়ের আঁচলও বেচতে পারি
টু-পাইস কামাতে।

প্রলাপ - ২৬


নবান্নের শীতেই বোধহয় জমে গেছে

বন্ধুত্বের সম্পর্কগুলো
তাইতো 'বন্ধু'র পাতা আজকাল
কেমন যেন একাকীত্বের বিষন্নতায় মূক।

প্রলাপ - ২৭


প্রতিনিয়ত সাম্প্রদায়িকতার সুড়সুড়ি দিয়ে যতই আমাকে উত্তেজিত করো

ধর্মাস্ত্রের খোচায় ক্ষতবিক্ষত করো বিবেককে, -
আমি আমৃত্যু 'অমানুষ' থেকে যাবো তোমাদের চোখে তবু ধর্মচাড়াল নয়।

প্রলাপ - ২৮



কত দিন আঁধারে ঢাকা পড়ে যায়

কত রাত হয় আলোকজ্জোল
অবিরত কোলাহল শুনি চারপাশে শুধু
কেঊ নেই; কেউ নেই পাশাপাশি
বড় একা এ দীর্ঘ পথ
যেন ফুরোবার নয় কখনো।

প্রলাপ - ২৯


এ পথ বড় ধূসর

পথে মানুষ মেলা ভার।
এ পথ বড় ধূসর
যে পথে মানুষ পাওয়া যায়।

প্রলাপ - ৩০


প্রেম দূর থেকে যতই মিষ্টি দেখাক না কেনো

কাছে গেলে ঠিক গোসাপের মত বিষাক্ত থুতু ছুড়ে দেয়
তাই নিরাপদ দূরত্বে থেকে আমার কবিতা লেখা।

প্রলাপ - ৩১


শিউলি ফোটা রাতে

শিশিরের ফাঁক দিয়ে যেই নাক বাড়িয়েছি
বারুদ আর মানুষ পোড়া গন্ধ
নাক ঝালাপালা করে দিলো।

প্রলাপ - ৩২


শ্মশানপুরীর স্তব্ধতা ভেদ করে কিছুক্ষণ আগেই বাড়ি ফিরেছি

শরীরে এখনো অশরীরি আত্মার গন্ধ।

প্রলাপ - ৩৩


পাছে ভোরের সূর্যটা না জোটে

আমি গভীর রাতেও ঘুমন্ত চোখ দুটো টেনে জেগে থাকি;
ঘুমিয়ে পড়লে স্বপ্নে বেঁচে থাকার আনন্দে মাতি।

 প্রলাপ - ৩৪


 শুভরাত্রি বলতে বলতে

বিদায় নেয় প্রতিটি মুহুর্ত
বিদায় নেয় ভালোলাগা প্রতিটি সময়

আমি অবসন্ন,

তবু জেগে থাকি অনন্তকাল ধরে
তোমার অপেক্ষায়।

প্রলাপ - ৩৫


নেতা শব্দের একটি প্রতিশব্দ হতে পারত গিরগিটি

অথবা গিরগিটির একটি প্রতিশব্দ নেতা।

প্রলাপ - ৩৬


আজ প্রতিবাদ মিছিল, হরতাল

রক্তচক্ষুর হুঙ্কারে থরথর কাঁপে রাজপথ।
আজকের প্রতিবাদী পুরুষের হাত
একদিন ঠিক কেড়ে নেবে কোন নারীর সম্ভ্রম।

প্রলাপ - ৩৭


আজ আমার মৃত্যুদিন তাই

সারা রাত ধরে প্রলাপ বকে যাবে
শোকার্ত আত্মা।

প্রলাপ - ৩৮


ভালোবাসা’র যাঁতাকলে শ্বাসরুদ্ধ 

হয়ে যাচ্ছি ক্রমশ।
খানিকটা বিশুদ্ধ ঘৃণা, বিদ্রূপ ছুঁড়ে দাও
আমি অতেই লুটপুটি খাব
যত্নে মাখাবো গায়।

প্রলাপ - ৩৯


যুগ যুগ ধরে দামিনীরা নিজেদের জীবন দিয়ে

পুরুষের চেতনায় কিছুটা আঁচড় কেটে যান শুধুমাত্র
এরচেয়ে বেশি কিছু নয়।
আঁধার নামবে রাজপথে আবারো কোনদিন
আবারো কোন এক দামিনীর শরীর
ছিড়ে খাবে মানুষখেকো হায়নার দল।


প্রলাপ - ৪০


ভোট উৎসবের প্রাক্কালে যুবারা ক্রীড়ামোদি আর

প্রৌঢ়রা হয়ে উঠেন ধর্মাসক্ত।

 প্রলাপ - ৪১


মানুষের সম্পর্কের মত

আজ পৃথিবী জুড়ে শীতলতা
ধ্বংসের মুখ দেখেই তবে উত্তাপ নেবে।

প্রলাপ - ৪২


ভয়ে জড়সড়

চলি জনতার উৎসবে
ভয়ে জড়সড় জনতা
কাঁদে গণতন্ত্র ত্রাসে।

প্রলাপ - ৪৩


শিক্ষিত সব ডিগ্রীধারী ভোটের খেলায় বিরত

দেশের ভার গাধার পিঠে
তাই পিছড়ে পড়ি অবিরত।

প্রলাপ - ৪৪


একটি মধ্যরাত থেকে আরেকটি মধ্যরাত

হাজারো মনের অলিগলি ঘুরেফিরে যখন
হিসেব কষার পালা
দূর দূর পর্যন্ত কোথাও ভালোবাসা বলে কিছু নেই আর
তাই কবিতা তোমায় নিয়েই আমার পথ চলা
ভালোবাসা উজাড় করে দেবো তোমায়
কথা দাও তুমি ভালোবাসা হয়ে ধরা দেবে
শুধু ভালোবাসা হয়ে আমার ডাইরির পাতায় পাতায়।

প্রলাপ - ৪৫


আষ্টেপৃষ্ঠে জঞ্জাল জড়ো হয় প্রতিদিন

হয়তো নিজের অজান্তেই কোনদিন ডুব দেব তাতে
আমি অসহায় চেয়ে থাকি শুধু।


প্রলাপ - ৪৬


আমার মা'ও বাংলায় কথা বলেন

আর তাই ৫২, ৬১, ৭১, ৭২, কিংবা ৮৬
সব মিশে একাকার আমার ধমনীতে।
শাহবাগ তুমি আমাকে খুঁজে নিও
দামাল প্রজন্মের ভিড়ে।

প্রলাপ - ৪৭


ছুঁবো না ছুঁবো না বলে তারে যত দূরে ঠেলে দেই

তত বেগে সে কাছে ছুটে আসে
তার পর জীবন হয়ে যায়।

 প্রলাপ - ৪৮


দেশ, সীমান্ত বদলায় শুধু

বদলায় কখনো মুখোশ
রক্তচক্ষুর শাসানিতে নাভিশ্বাস ওঠে সর্বত্র
আমি তুমি সংখ্যালঘু হয়ে 'বেঁচে' থাকি
মৃত্যুর সাথে লুকোচুরি খেলতে খেলতে।

 প্রলাপ - ৪৯


গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে চলে সময়;

তুফানী মিছিল মৃত মানুষের।
পৃথিবীর সব সুখ নিংড়ে নিয়ে
ঘরে ফেরে ফিরতি মৌসুমি হাওয়া,
অসুখ অসুখ সর্বত্র মিছিল অসূখের।
স্বপ্ন তবু ঠিক বেঁচে আছে এখনো
একমুঠো তরতাজা শাহবাগে।

 প্রলাপ -৫০


নিষিদ্ধপল্লী, নিষিদ্ধ বই, নিষিদ্ধ খাবার;

নিষিদ্ধ ব্যপারগুলোতে আমাদের বড্ড ঝোক
তাই নিষিদ্ধ নয় শুধু
উপড়ে ফেলে দিতে হবে শেকড়সুদ্ধ বিষবৃক্ষ
ধুয়েমুছে সাফ করে দিতে হবে হৃদয়।

প্রলাপ -৫১


বিয়ে হল চুইঙ্গামের মত

প্রথমে ভীষণ মিষ্টি তারপর .........।

প্রলাপ - ৫২



ভাবনায় ভাব গদ্গদ বক্তৃতায়, না জানি কত টাকার ফোয়ারা ছুটিয়ে

তোমরা নারী দিবস পালন করো;
শুধু নারীকে মানুষ বল না।

প্রলাপ - ৫৩


সুখগুলো সব আড়ি দিয়ে বাড়ি ফিরে গেছে তবু

আমি অসুখ অসুখ চোখে প্রেমের কবিতা পড়ে যাব।
 
প্রলাপ - ৫৪

নীরব বন্ধুর চেয়ে ঘোর শত্রু ভালো

অন্তত বুঝে নিতে পারি যে বেঁচে আছি।

প্রলাপ - ৫৫


এই তো আছি দিব্যি সুখে হেসেখেলে

কি লাভ বল ভালোবেসে জ্বলেপুড়ে।

প্রলাপ - ৫৬


কবিতারা প্রেমের মত

চাইলেই ধরা দেয় না,
আবার না চাইলেই কখনো ধরা দেয় ভালোবাসা হয়ে।

প্রলাপ - ৫৭


মাঝে মাঝে বুকের ভেতর যেন

অনেকগুলো হৃদয়ের অস্তিত্ব টের পাই।
মনে হয় একটি অন্যটির থেকে পুরোপুরি আলাদা।
একটি হৃদয় ভাবে সে মুসলমান;
একটি ভাবে হিন্দু; আরেকটি...।
এভাবে এক একটি হৃদয় যেন এক একটি ধর্ম
ভালোবেসে বসে আছে।
তবে আরো একটি হৃদয় আছে আমার
সে সম্পূর্ণ আলাদা
যে কিনা প্রতিনিয়ত ভালোবাসা ঢেলে দেয় সর্বত্র
তাই আমার হৃদয়ে কোন ঘৃণা নেই।


প্রলাপ - ৫৮


আমি নিশ্চিত

আমৃত্যু তোমার কাছাকাছি থেকে গেলে
একদিন ক্রম ধাবমান মৃত্যুজাল
ছিড়ে  ঠিক বেরিয়ে আসব।  


প্রলাপ - ৫৯


আগুন নিয়ে কেই বা খেলতে চায়

তবু আগুন নিয়ে খেলতে গিয়েই
রোজ হাত পোড়ায়।


প্রলাপ - ৬০


স্বাধীনতা ঈশ্বরের মত

জানি ওটা নেই,
জানি ওটা হয় না
তবু নির্দিষ্ট দিনে ঠিক ধুপ-ধুনা জ্বেলে দেই
তারপর স্বাধীন বলে গাজন গাই।

প্রলাপ - ৬১



ভাবছি কালির দোয়াতটা ঝেড়ে

ধুয়ে মুছে তাকে তুলে রাখবো,
কলম খাতায় দেবো চাবি
চৌর্যবৃত্তির দায় মাথায় উঠার আগেই
ছুটি দেব কবিতা তোমায়।


প্রলাপ - ৬২


সমাজটা টুকরো আয়নার মত
সামনে থেকে মনে হয় হাজারটা চেহারা সাথে আছে
পেছনে ফিরলেই ধু ধু
শুধু একা আমি দাঁড়িয়ে।

প্রলাপ - ৬৩


বড় ভীতু ঈশ্বর চেলারা
যুক্তির বদলে খঞ্জর উঁচিয়ে ধরেন
বুলেটে ঝাঁজরা করে দেন বিরুদ্ধ পাঁজর।

প্রলাপ - ৬৪

প্রতিরোজ, প্রতিমুহূর্ত যে কথাগুলো আমি ভাবি
তা সব মনের গভীরে চাপা পড়ে যায় অহরহ
যে কটা মনের ফুটো দিয়ে বেরিয়ে পড়ে
তা তো প্রলাপ হয়ে যায়।

আর যা কিছু বলি সে তো তোমাদেরই কথা

যে কথাগুলো তোমরা শুনতে চাও

প্রলাপ - ৬৫

বাতাসে কান পাতলেই আজকাল
ধর্মাসুরের পদধ্বনি শুনি
নাক নিলেই ঝাঝালো সাম্প্রদায়িক গন্ধ।
আমি শুধু চেয়ে দেখি রোজ
মানচিত্র ভেঙ্গে চৌচির হয়ে যায়;
ডুবে কাদায় মানুষ অহরহ। 

প্রলাপ - ৬৬

নির্দল করে করে
চলেই তো যাচ্ছিল বেশ,
একদিন চোখ মেলতেই দেখি
অজান্তেই ঢুকে গেছি
কোন এক দলে আমিও।

প্রলাপ - ৬৭

হাত পিঠে রাখলেই মরম স্পর্শ
পা ঠেকালেই লাথি,
ডান হাত দিলে চল হ্যান্ডশেক করি
বাম দিলে, হাতটা সরাও
ছিঃ নোংরা তুমি
এভাবেই প্রতিদিন নিজের সাথেই
করে যাই হেলাফেলা!
কখনো ভাবি সাম্যবাদ;
সমতা, এগুলো নিছক কয়টি বর্ণ সমষ্টি মাত্র
এরচেয়ে আর বেশি কিছু নয়।

প্রলাপ - ৬৮

কোন এক অজ পাড়া গায়
নেতা, পাতিনেতার পায়ের ধূলো পড়লেই
বুঝে নিতে হবে ভোট উৎসব আসন্ন।

প্রলাপ - ৬৯

ঈশ্বর ঈশ্বর বলে যতই চেঁচামেচি করি
আমরা আসলেই এক একটা আস্তো নাস্তিক।


প্রলাপ - ৭০

কেজরিওয়াল কেজরিওয়াল কেজরিওয়াল
আম জনতার চোখের মণি
ভ্রষ্টাচারের বক্ষভেদী তীব্র আলোক মশাল।

প্রলাপ - ৭১

আমার দুটো দেশ,
আমার দুটো স্বাধীনতা দিবস,
আমার একটি হৃদয়
ভালোবেসে যাবো নিরন্তর।

প্রলাপ - ৭২

কাউকে জন্মদিন জীজ্ঞেস করলে
যদি উত্তর আসে
ইংরেজি বর্ষের প্রথম দিন,
আপনি ধরে নিতেই পারেন
লোকটি মিথ্যেবাদী।

প্রলাপ - ৭৩

ক্ষমতার দম্ভে সব মমতাও
একদিন ঠিক ফিকে হয়ে যায়।
অন্ধ মমতা দেখেনা
সেও তো প্রতিরোজ ধর্ষিতা
প্রতিটি দলবদ্ধ ধর্ষণে।

প্রলাপ - ৭৪

অন্ধকারের বুক চিরে দুঃস্বপ্ন রাত যত গাঢ় হয়
আর আমি ভাবি একাই ডুব দেব বিষণ্ণতায়।
দেখি আরো অসংখ্য বিষণ্ণ হৃদয়
ঠিক বসে আছে সহযাত্রীর অপেক্ষায়।

প্রলাপ - ৭৫

তোরা একটুকু চুপ কর
গোসাপের মুখে বিষাক্ত থুতু
তফাতে সরে পড়।

প্রলাপ - ৭৬

এখন মরশুম ভোট উৎসবের
তাই 'নেতা' 'পাতিনেতা'রা
শারদীয়া কুকুর-কুকুরীর মত।

প্রলাপ - ৭৭

অভিষেক হবে পিশাচের
তাই চারিদিকে হই হোল্লোড় নগ্ন নৃত্য;
দৈত্য-দানব আর যত অমানুষী আত্মার।

প্রলাপ - ৭৮

রোজগেরে ভোটের দিনগুলো
দ্রুত ফুরিয়ে যায়,
নির্বাচন শেষে আমরা তো সেই -
"পুনর মূষিক ভবঃ"

প্রলাপ - ৭৯

মন বিষাক্ত সব পোকার ঘর
ভাদ্র মাসের রোদে দাও।

প্রলাপ - ৮০


সমালোচনার খোঁচা যারা সহ্য করতে পারেন না
তারা কেউই আসলে মানুষ নয়।


প্রলাপ - ৮১


নিজের অস্তিত্ব বিসর্জন দিতে পারলে
ঠিক 'বেঁচে' থাকা যায়।

প্রলাপ - ৮২


বাজারে ফেয়ারনেস ক্রিমের কাটতি চড়া
তবু পৃথিবীটা বড় কুৎসিত।


প্রলাপ - ৮৩

শত শত শায়িত স্বপ্ন কবর খোঁজে আজ
শত শত রাক্ষুসে মুখে আজ বিকৃত হাসি। 3.5.14


প্রলাপ - ৮৪

দুঃস্বপ্নের রাত পাড়ি দিয়ে কবে তুমি
শান্ত কলি ফুল হয়ে ফুটবে......! 4.5.14

প্রলাপ - ৮৫

প্রাতঃরাশ থেকে নৈশভোজ 
থোকা থোকা ফরমালিন
ভাবছি এখানেই পিরামিড বানাব 
তারপর হব মমি।

প্রলাপ - ৮৬


দুর্বল ঈশ্বর খোঁজে
সবল চালায় হাতুড়ি।

প্রলাপ - ৮৭


ষোড়শীরা কখনো কুৎসিত হয় না।


প্রলাপ - ৮৮


কিছু মৃতদেহ রোজ চুপিসারে চিটি রেখে যায়
আমার ইনবক্সে
কিছু মৃতদেহ আজও ভীড় করে
আমার কনটাক্ট লিষ্টে
শুধু মৃত চোখ দিয়ে চিঠি পড়িনি কখনো
কখনো খুজিনি মৃত বন্ধুদের।

প্রলাপ - ৮৯

এক একটা মর্টার সেল
প্রতিদিন আমাদের বিদ্ধ করে
এক একটা রকেট লঞ্চার
ধ্বংস করে মানবতা। 

প্রলাপ - ৯০


আজাকাল ছারপোকা, আঠালি, জোকের
বড় বাড় বেড়েছে, 
মাথায় মাথায় ঘুরছে সবার; 
সুযোটা পেলেই চড়ে বসবে সিংহাসন
তারপর তোমার আমার চুষে নেবে সব রক্ত।

প্রলাপ - ৯১

গোপালের গন্ধ নেব বলে
যেই নাকের কাছে নিয়েছি
একটি গোলাপী কীট 
ভেঙ্গে চুরমার করে দিল সব রঙ্গিন স্বপ্ন ।

প্রলাপ - ৯২


জন্মান্ধ সব বেড়াজাল টপকে একদিন ঠিক গন্তব্যে পৌঁছে যায়। আর ধর্মান্ধ চলার পথে অহরহ আষ্টেপৃষ্টে কাদায় জড়িয়ে ফেলে নিজেকে...।


প্রলাপ - ৯৩


বুকের ভেতর আগলে রাখা
গোলাপগুলো প্রতিদিন
তিলে তিলে শুকোয়
তোমার প্রতীক্ষায়...।


প্রলাপ - ৯৪
বিখ্যাত কিংবা কোন এক কুখ্যাত
প্রতিবেশি হলে সাহিতা চর্চাটা দারুণ গতি পায়।



প্রলাপ - ৯৫

মোবাইল ফোনটা সাইলেন্ট মুডে রেখে
প্রেমিকেরা নিসঙ্গ ঘুরে রাস্তায়



প্রলাপ - ৯৬
একদম হঠাৎ করেই যদি বাড়ির লোকেরা বলতে শুরু করেন
রোগা হয়ে যাচ্ছি
ধরে নিতে হবে স্বাস্থ্যটা ভালো হচ্ছে।



প্রলাপ - ৯৭

দারুচিনির কৌটায় অসংখ্য পিঁপড়ের ডিম।



প্রলাপ - ৯৮


অপ্রিয় মুখগুলোর মৃত্যু
কামনা করতে করতে
একদিন চেয়ে দেখি হারিয়ে ফেলেছি সব প্রিয় মুখ।



প্রলাপ - ৯৯



বিবেকহীন দেহটাকে আর কতকাল বয়ে বেড়াব
তার চেয়ে চল পুড়িয়ে ফেলি, পুড়িয়ে ফেলি দেহটাকে।




প্রলাপ - ১০০

প্রথমে সাম্প্রদায়িকতার
তারপর রাজনীতিটা শান্তি কমিটির
'আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে...।'



প্রলাপ - ১০১



সব সূখ তারল্যে 
তারল্যেই সব শক্তি
পাড়ায় পাড়ায় অলিতে গলিতে সর্বত্র 
ব্যস্ত যুবা কিশোর সব শক্তির আরাধনায় 22/10/14



প্রলাপ ১০২


উত্তরে ছিল যারা 
তারা আরেকটু উত্তরে সরে গেছে 
দক্ষিণমেরুতে যারা তারা আরো দক্ষিণে মাঝখানে আমি রোজ 
শুধু টুকরো টুকরো হই 
নিজের অজান্তে। 28.10.14



প্রলাপ - ১০৩

মোল্লা পুরুত যাজক সবগুলাই
এক একটা আস্ত নাস্তিক
ধর্মটা তো শুধু তোমার আমার।


প্রলাপ - ১০৪

তক্কিটা আমি আগেই পকেটে পুরেছি
আজ দাড়িটার সাথেও দিলাম আড়ি
তবুও ভয়ে ভয়ে দিন যায়
জেহাদির লিস্টে নাম না উঠে যায়।


প্রলাপ - ১০৫

সদ্য ধর্মচ্যুত আর পুরোনো কমিউনিস্ট 
দুজনেই অদ্ভুত
প্রথমজন পুরোনো ধর্মকে
যাচ্ছেতাই গালি দেন আর
অন্যজন ব্রহ্মভোজ্যির পর
হাত পাতেন ভোজন দক্ষিণার জন্যে ।

প্রলাপ - ১০৬

কবিদের হাজারটা প্রেমিক প্রেমিকা
বড্ড সাধ ছিলো কবি হব
পারলাম কই...!!!

প্রলাপ - ১০৭


ক্রিকেট হউক বা না হউক
কিস্যু আসে যায় না
বেটিংটা তো চলবে ইচ্ছেখুশি,
চলুন শুভ্র নিশান উড়িয়ে
বলি জয় শ্রী বিসিসিআই।


প্রলাপ - ১০৮

নিশিকুটুম্বেরাও আইনজীবীদের মত
কর্মস্থলে কালো পোশাক পরে।


প্রলাপ - ১০৯

চৌরাস্তার মোড়ে অথবা বাসস্টপের পাশে
যে ছেলেটি রোজ পেঁয়াজী,
পোকড়া, গরম চাট বিক্রি করে
সে কখনই ক্রেতাদের মন যোগাতে পারে না।


প্রলাপ - ১১০

পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ মিথ্যা
দুষ্কৃতির প্রতি পুলিশের আশ্বাস
সব স্বীকার করে নিলে ছেড়ে দেওয়া হবে।


প্রলাপ  ১১১

যতখুশি গালাগাল দাও
নীরবে সহ্য করে যাব;
আর না হয়
দূরে সরে যাব ভালোবাসা ভেবে,
আর আমার প্রতিবিম্বটাকে
ভালোবেসে যদি তোমার এই বিষোদ্গার;
তবে জেনে রেখো একদিন
আয়নার সামনে তোমাকে দাড়াতে হবে।


প্রলাপ  ১১২

আমার প্রিয় তিনটি জায়গা
রান্নাঘর, পায়খানা আর 
তোমার আঁচলের এক কোণ।


প্রলাপ  ১১৩

...... ঈশ্বরেচ্ছা ছাড়া একটি ধূলার কণাও নড়ে না...
ঈশ্বরের মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা
তাইতো রোজ
এত এত খুন,
এত এত ধর্ষণ। 


প্রলাপ - ১১৪


প্রতি মুহূর্তে অজান্তেই 
পরিচিতি হারিয়ে ফেলছি ,
পরিচয়হীনেরা আদৌ মানুষ থাকে ...!!!
(১০/০২/১৫)



প্রলাপ - ১১৫ 

যখন যখন এক একটি দম্ভস্তম্ভ ধ্বসে পড়ে
আমি ভেতরটায় লক্ষ হৃদয়ের উল্লাস টের পাই
ইচ্ছে হয় ময়ূরের মত নাচি। 
(১০/০২/১৫)





প্রলাপ ১১৬

মরলেই শুধু অমর হওয়া যায়।


প্রলাপ - ১১৭

গাদা গাদা বই গিলেও
গ্রন্থকীটেরাই তো সাম্প্রদায়িক গন্ধ ছড়ায়।



প্রলাপ - ১১৮



আমরা সবার প্রিয় হতে হতে একদিন
নিজের কাছে অপ্রিয় হয়ে যাই। 


প্রলাপ - ১১৯


যত পারো তিক্ততা দাও
আমি হৃদয় পেতে নেব,
মিষ্টিতে মধুমেহের ভয়
তেতো স্বাদ দীর্ঘজীবি


প্রলাপ -১২০



পরীক্ষায় বারবার ফেল করা
ছেলেটির বাহুতে সরস্বতী কবচম্ ছিল 
একটু আগে গাড়ির চাকায় পিষ্ট লোকটির 
অনামিকায় ছিল সংকট মোচন আংটি।


প্রলাপ - ১২১


কমিশন মানে 
জনতার কন্ঠরোধী সাইলেন্সার, 
কমিশন মানে ধামাচাপা দেয়া 
শত্রুর হাতিয়ার।



প্রলাপ- ১২২



বুকের পাজরগুলো 
আরো কোমল করে তুলো
চাপাতি ভোতা হয়ে যাবে আপনি, 
চলুক ব্লগিং.....।



জলপাই রঙা পোশাক আর
হাতে রাইফেল নিয়েই শুধু
সৈনিক হওয়া যায় না
আমরাও তো সৈনিক জীবন যুদ্ধের
বিন্দু বিন্দু রক্ত দিয়ে
হাসি ফোটাই সহস্র প্রাণে।

কোন মন্তব্য নেই: