“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

রবিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১৪

সাহিত্যে আকাদেমিতে সম্মানিত কবি রবীন্দ্র সরকারের পাঁচটি কবিতা



(
রবীন্দ্র সরকার
'ধূলিয়ৰি ভৰিৰ সাঁচ'লৈ কবিতা গ্রন্থের জন্যে এবারে অসমিয়া সাহিত্যে আকাদেমি পেলেন বাঙালি কবি রবীন্দ্র সরকার। অসমিয়া বাংলাতে তিনি নিরন্তর লেখেন। কবিতা ছাড়াও প্রবন্ধ লেখেন। এক সময় হেমাঙ্গ বিশ্বাসের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ছিলেন। এখন যদিও কলকাতা থাকেন অসমে ‘নতুন পদাতিক’ , ‘নতুন পৃথিবী’ ইত্যাদি ‘বাম’ ঘরানার কাগজের তিনি নিয়মিত লেখক। আমাদের কাছে এই মুহূর্তে পুরস্কৃত বইটিতো নেই। তবে বিচ্ছিন্নভাবে এখানে ওখানে প্রকাশিত কবিতা আছে বেশ। তারই কয়েকটি এখানে তোলে দিলাম। অসমিয়া কবিতা দু’টি সংকলিত হয়েছিল অসম প্রকাশন পরিষদের প্রকাশিত হোমেন বরগোহাঞি সম্পাদিত ‘এশ বছৰৰ অসমীয়া কবিতা’ সংকলনে। আর বাংলা কবিতাগুলো নেয়া হয়েছে, নাইন্থ কলামের সম্পাদিত ‘অসমের বাংলা কবিতা সংকলন থেকে। প্রসূন বর্মণের সঙ্গে সেই সংখ্যার আমন্ত্রিত সম্পাদক ছিলেন অমিতাভ দেব চৌধুরী।)

নৰকত বসন্ত

টা নষ্ট ৰঙালাউৰ বাবে ডাস্টবিনত
অন্তহীন টনা-আজোঁৰা—
হিংস্রতাত ইজনে –সিজনৰ নেলু চেপি ধৰে
গেলা আবর্জনাত বাগৰ খায় নিৰন্নৰ স্বাধীনতা
বাইশ বছৰীয়া চফল ডেকাই
ৰঙীন চশমাৰ ফাঁকেদি ৰঙ চায়।
হঠাতে ক’ৰবাত যেন কাঁচ ভঙাৰ শব্দই
ৰজনজনাই যায় ঘৰ ---দুৱাৰ-বিশ্ব সংসাৰ......
ভৰিৰ তলৰ পৰা মূৰলৈকে তাৰ ৰক্তপ্রবাহ
চিৰিককৈ জঁপিয়াই উঠে,
কিবা এটা যেন উল্কাপিণ্ডৰ দৰে প্রচণ্ড বেগেৰে বুকুৰ পৰা ওলাই আহিব খোজে।

ডাস্টবিনত ৰঙালাউৰ স্থূলতাত
নাগৰিক যন্ত্রণাই চক খায়,
গোলাপৰ সুৰভিত মুর্ছা যোৱা মানুহজনে হাঁহে।
তথাপি বহাগ আহে
কৃষ্ণচূড়া ৰঙে ৰঙে আৰু ৰঙা হয়,
বাটৰ কাষৰ নঙঠা ল’ৰাটোৱে
লঘোনৰ মাকজনী মৰাৰ পিছত
বাছস্টপত থিয় হৈ
ৰৈ ৰৈ সুহুৰি দি কুলিৰ মাত মাতে।
আঃ নৰকত এতিয়া বসন্ত।
~~~~000~~~~



















এজন কবিৰ কবিতা পঢ়ি

কাৰণ তেওঁ এজন মানুহ।
কাৰণ তেওঁ এজন কবি।
তেওঁ
বেলিটো বুকুত লৈ
আকাশলৈ
মেলি দিয়ে হাত
দৃষ্টি
নক্ষত্রৰ ফালে স্থিৰ।
তেওঁ
জোনটোকো
নমাই আনিব বিচাৰে
চহোৱা মাটিত
আৰু জাৰকালিত
উলঙ্গ শিশুটিৰ বাবে
চিলায়
এটি গৰম কামিজ।
আজন্ম
তেওঁ যুঁজে
নিজৰ বিৰুদ্ধে
শত্রুৰ বিৰুদ্ধে
আৰু জৰাজীর্ণ
প্রাচীৰখনক
ভাঙি গুৰিয়াই
ধাতৱ ঝঙ্কাৰেৰে আনে
মুক্তিৰ দিন।
কাৰণ তেওঁ এজন স্বাধীনতাকামী মানুহ।
কাৰণ তেওঁ এজন শান্তিকামী মানুহ।
~~~~000~~~~

আত্মপ্রতিকৃতি


তকাল একটু সহজ হব বলে
বাঁকা পথে হাঁটতে হাঁটতে,
তোমার কাছে এসেছি জটিল
ভাঙাচোরা মুখ নিয়ে---
মুখ না মুখোশ, কে জানে;
সুন্দরকে করে তুলেছি বীভৎস।

কতকাল লোকের মুখের খুঁত ধরতে গিয়ে
নিজের মুখের পোড়া দাগটা দেখা হয়নি
আয়নায়। পাথরে মাথা ঠুকতে ঠুকতে
ভুলে গেছি মানুষের মুখ।
নিজের সুখটুকু কেড়ে আনতে
অন্যকে ছুঁড়েছি দুঃখের আগুনে। আমার
ভাঙা কাচের মতো হাসির শব্দে চাপা পড়েছে
অনেক কান্নার শব্দ আর রক্তপাত।

কতকাল আমি রাতের তারা-জ্বলা আকাশ দেখিনি,
শুনিনি ফুল ফোটার শব্দ , ভোরের পাখির ডাক---
জানালা খুলিনি, খুলিনি দুয়ার।

কতকাল আমি মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে
রক্তের ভিতরে টের পাইনি
প্রতিবাদের একটা জ্বলন্ত অক্ষর।

কতকাল আমি সহজ হতে ভুলে গেছি।

~~~~000~~~~






















বৃষ্টি বিষয়ক

তকাল আমরা বৃষ্টির জন্যে বসে আছি
খররৌদ্রে মেলেছে তার পশমের হাত;
চরম তাপ চিবিয়ে খাচ্ছে হাড়গোড় মানুষের
শরীরের লবণ গড়িয়ে সাগর।

কোথাও জলাধার নেই—কাঁটা ঝোপ---
সবুজ-বিছানো স্টেশন ভুবনমোহিনী;
অলিন্দে গোলাপায়রার বকবকম পেখমবাহার---
রাশিরাশি পাথরের ভুর, দিকচিহ্নহীন
সজারুর পিঠের মতো মাঠ আর আগুন বাতাস
ভগ্নস্তূপে শিস দেয় লুপ্তপ্রায় কঙ্কাল-করোটি।

কতকাল আমরা বৃষ্টির জন্যে বসে আছি
ফোটায় ফোটায় ঘুঙুরের শব্দ, লোকউৎসব---
বাগাড়ুম্বার তালে তালে পাখা মেলে প্রজাপতি
বুকের ফাটল ভরে জল;বীজতলা থেকে
সাদা হাড় ফুঁড়ে এবার জাগবে অঙ্কুর
মেঘেরা সব নেমে আসবে চেরার খাসিয়াপুঞ্জিতে—
সারিবদ্ধ তীরন্দাজ, শবের আঘাতে
কুম্ভ ভেঙে মাটিতে গড়াবে সেই জল।
~~~~000~~~~

ব্যতিক্রম

বকিছু আগেরই মতো
গাছে গাছে পাখির ডাক
ঝুমঝুমি বাজিয়ে দৌড়ে-যাওয়া
জলজলি নদী
বসন্তের রং অথবা
বৃষ্টির জন্যে ব্যাকুলতা
সব কিছু আগেরই মতো
খেত-ভরা ধান
প্রেমে উত্তাপ আর কবিতায় শব্দ
ঝাঁ ঝাঁ দুপুরের নিঝুম সেই পথ
চোখের জল অথবা আগুন
মুখোমুখি বসে- থাকা নীরবতা

শুধু তোমার গলার স্বর ছাড়া।
~~~~000~~~~



মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১৪

উদ্বাস্তুর ডায়েরি




(শক্তিপদ ব্রহ্মচারীর বহু পঠিত কবিতাগুলোর একটি এই। ইচ্ছে হলো, এখানেও তুলে রাখা গেল)























যে কেড়েছে বাস্তুভিটে সে-ই কেড়েছে ভয় ,
আকাশ জুড়ে লেখা আমার আত্মপরিচয়।
হিংসাজয়ী যুদ্ধে যাব, আর হবে না ভুল
মেখলা- পরা বোন দিয়েছে একখানা তাম্বুল
এবার আমি পাঠ নিয়েছি—আর কিছুতে নয়,
ভাষাবিহীন ভালোবাসার বিশ্ববিদ্যালয়।
বাংলা আমার আই- ভাষাগো, বিশ্ব আমার ঠাঁই
প্রফুল্ল ও ভৃগু আমার খুল্লতাত ভাই!  

সোমবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০১৪

বাঙালিয়ানা : বর্হিবঙ্গ বা বৃহৎবঙ্গ

                                      ।। পল্লব ভট্টাচার্য।।

   
সাগ্নিক সম্পাদক , আমাদের মিলন দত্ত মশাই যে বাঙালি , নাম-উপাধি দেখে , তা কি বোঝার কোনও উপায় আছে ? চিত্রাভিনেতা সুনীল দত্ত , সঞ্জয় দত্ত বা গুরু দত্তের সঙ্গে যে তাঁর আত্মীয়তা নেই , বুঝবো কীভাবে ? কিংবা অসমীয়া কবি হীরেন ভট্টাচার্যের ছবির পাশে এই অধম ভট্টাচার্যের ছবি রাখলে , চেহারা দেখে কি এই অধমকে বাঙালি বলে চেনা যাবে ? যায় না যে , সেটা অনেক আগেই শ্রদ্ধেয় অতুল সুর মশাই , বলে গেছেন । বাঙালির একটা নৃতাত্বিক পরিচয় দিতে গিয়ে , বিভিন্ন সমীক্ষার উপর ভর করে , শেষ অব্দি তাঁকে এমন একটা সিদ্ধান্তেই পৌঁছুতে হয়েছিল যে দেহ গঠনে অনেকটা আদি অস্ট্রাল বা অস্ট্রিক জনদের চিহ্ন থাকলেও , কোনও একটি বিশেষ নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠির পুরোপুরি ছাপ নেই বাঙালিদের মধ্যে । নৃতাত্বিকভাবে বাঙালি একটি সংকর জাতি ।

    তবু , এই জাতিটি যে খুব একটা নতুন নয় ,ঐতরেয় আরণ্যকের উল্লেখ থেকেই একথা বলা যায় । সেই কবে , মহাকবি কালিদাস জানিয়ে ছিলেন , এদের বসতি যেখানে , সেই দেশটা “গঙ্গাস্রোতহন্তরেষু” । গঙ্গার বিভিন্ন স্রোতের মধ্যে অবস্থিত । আবার দ্বিতীয় শতকের ভুগোলবিদ টলেমিও বলেছেন , গঙ্গার সব মোহনাগুলোই গঙ্গারিদাই বা গঙ্গারিদ নামের অধিবাসীদের দেশভুক্ত ।  সুতরাং আজকের বাংলাদেশের সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলগুলোও এই দেশের মধ্যে ছিল বলা যায় । যদিও ভুখন্ডের সীমা বারবার পাল্টেছে রাজনৈতিক কারণে ।  যেমন পাল ও সেন আমলে বঙ্গ ছিল পুন্ড্রবর্ধনভুক্তির অন্তর্ভুক্ত , আবার গুপ্ত আমলে  বঙ্গ ও পুন্ড্রবর্ধন আলাদা রাষ্ট্রবিভাগ । কিন্তু বঙ্গ , বঙ্গাল বা বাংলা বলে একটা সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক ভুখন্ড তো মুসলমানদের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার আগে আমরা দেখতে পাই না । বিভিন্ন সময়ের ইতিহাসে রাঢ় , সমতট , হরিকেল , তাম্রলিপ্তি , পুন্ড্রবর্ধন এরকম অজস্র জনপদের উল্লেখ পাচ্ছি । ত্রিপুরাকেও পাচ্ছি কখনও হরিকেল সীমার মধ্যে , তো কখনও সমতটের প্রধান কেন্দ্র হিসাবে । আবুল ফজলের আইনই আকবরীতে পাচ্ছি , সুবা বঙ্গালের উত্তরে কুচ(বিহার)রাজ্য , দক্ষিণে সমুদ্র ও সুন্দরবন (ভাটি) পূর্বে ত্রিপুরা (বর্তমানের কুমিল্লা ও পার্বত্য ত্রিপুরা সহ)ও আসাম , পশ্চিমে বিহার ।

    এই সীমারেখার মধ্যবর্তী অঞ্চলটি , মোগল আমল থেকে যা সুবা বঙ্গাল হয়ে উঠেছে বিভিন্ন জনপদ মিলে , তাও তো কোনও স্থির ভুগোল নয় । ইংরেজ আমলে এই প্রদেশ তো আরও প্রসারিত হয়েছিল । তাহলে কোন ভূ-সীমাটিকে আমরা বলবো , বঙ্গ বা বাংলা ? কোন ভূ-সীমার বাইরের সমস্ত ভুগোলকে বলবো বর্হিবঙ্গ ? আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন থেকে যায় , এই নির্দিষ্ট ভূখন্ড যাকে বঙ্গ বা বাংলা বলা হচ্ছে , সেখানকার অধিবাসীরাই কি বাঙালি ? ১৪৩২ য়ে মা হুয়ান যে ভূখন্ড ভ্রমন করে তাঁর ইং য়াই শেন লান গ্রন্থে লিখেছিলেন ,-“দেশের ভাষা হিসাবে লোকেরা ব্যবহার করতো পঙ্গ-কো(গো)-লি , যা একটি স্বাধীন ভাষা , যদিও লোকে পা-এরহ-সি ভাষাতেও কথা বলেন ।“ প্রথম ভাষা বোঝাতে মা হুয়ান যে তিনটি চীনা লিপি ব্যবহার করেছেন , ব্রতীন্দ্রকুমার মুখোপাধ্যায়ের মতে , তৎসাময়িক উচ্চারণ অনুযায়ী তা হবে বঙ্গালি বা বাঙ্গালি । এই বঙ্গালি বা বাংলা ভাষায় যারা কথা বলেন , তাদের স্বাভাবিকভাবে বঙ্গালি বলা হবে । যে ভাষায় কথা বলে বা লিখে চর্যাপদের কবি ভুসুক বঙ্গালি হয়েছিলেন , সেই ভাষাভাষী মানুষের প্রধান বাসভূমিটিকে তো স্বাভাবিক কারণেই বঙ্গালি -বঙ্গাল-বঙ্গ বা বাংলা বলা হবে । যদি এই যুক্তি গ্রাহ্য করা যায় , তবে বলতে হয় , বাঙালি নৃতাত্বিকভাবে কোনও বিশুদ্ধ নরগোষ্ঠি না হলেও ভাষাভিত্তিক জাতিতে বা গোষ্ঠিতে পর্যবসিত হয়েছিল বহুবছর আগেই । আর এই ভাষাভিত্তিক জাতিটি , আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে ,” দেশের জলবায়ু ও তাহার আনুষাঙ্গিক ফলস্বরূপ এই দেশের উপযোগী বিশেষ জীবনযাত্রার পদ্ধতিকে অবলম্বন করিয়া….গত সহস্র বৎসর ধরিয়া যে বাস্তব , মানসিক ও আধ্যাত্মিক সংস্কৃতি “ গড়ে তুলছেন , “তাহাই বাঙ্গালী সংস্কৃতি “।

    আজকে যখন সেই বিশেষ ভূ-খন্ডটি রাজনৈতিক কারণে বিভক্ত ; যখন সেই বিভাজিত বাংলার একটি অংশ ভাষা রক্ষার তাগিদে সংগ্রাম করে , বাংলাদেশ নামে এক স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছে , তখন ভারতের একটি প্রদেশ , পশ্চিমবঙ্গ কীভাবে ‌'বর্হিবঙ্গ‌ শব্দটি ব্যবহার করবে ? বর্হিবঙ্গ বলতে কি তাহলে , ভারত রাষ্ট্রের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশটির বাইরের অঞ্চলগুলোকেই বোঝাবে ? তবে তো , বাংলাভাষী মানুষের মূল ভূ-খন্ডটির অস্তিত্বকেই এই বঙ্গ চিন্তার বাইরে রাখতে হয় । আবার বৃহৎবঙ্গ শব্দটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয়  কাঠামো , এবং রাজনৈতিক ভূগোল নিশ্চিতভাবেই বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় ।

    অথচ কলকাতাকেন্দ্রিক পশ্চিমবঙ্গীয় বুদ্ধিজীবিগণ , পশ্চিমবঙ্গের বাইরের বিভিন্ন প্রদেশ বসবাসকারী বাঙালিদের নির্দ্বিধায় বর্হিবঙ্গীয় বলে চিহ্নিত করে চলছেন বিগত কয়েক দশক ধরে । সে জন্যই প্রথম যে প্রশ্নটা দিয়ে আমরা কথা বলা শুরু করেছি , তা এই যে বাঙালিকে বাঙালি বলে চিনবো কীভাবে ? উপাধি , নাম বা চেহারায় ভারতবর্ষে বাঙালিকে আলাদা ভাবে চেনার খুব একটা সুযোগ নেই । আমি যে রাজ্যের বাসিন্দা , সেই ত্রিপুরায় ককবরকভাষী জনজাতির মানুষ বাঙালিদের বলেন ,-ওয়ানছা । কথাটির শব্দগত অর্থ অদ্ভুত বা আশ্চর্য মানুষের ছেলে । এবং এই মোঙ্গলয়েড জনগোষ্ঠির মানুষদের মধ্যে দাঁড়ালে , আমার আলাদা চেহারাটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে । যাতে করে আমি বা যে কোনও দর্শকই চেহারা দেখেই বুঝতে পারে আমার আলাদা জাতিসত্তাটি । যা কলকাতার বড়বাজার অঞ্চলে দাঁড়ালে কিন্তু হবে না । এখানেই পশ্চিমবঙ্গীয় দৃষ্টিতে বর্হিবঙ্গীয় আমার সুবিধা । আমার আত্মপরিচয়ের প্রশ্নটি  এখানে অন্তত কোনও দ্বিধার সৃষ্টি করে না । উপরন্তু যে ভাষার কারণে আমার জাতিসত্তাটি চিহ্নিত , তাও কোনও প্রশ্নচিহ্নের মুখোমুখি হয় না । কারণ , মোগল আমলে গৌড়বঙ্গ যখন ফারসীকে রাজভাষা হিসাবে মেনে নিয়ে , ফারসী শিখে চাকরির উমেদারীতে ব্যস্ত , তখন থেকে এই রাজ্যের রাজভাষা হিসাবে বাংলা স্বীকৃত এবং রাজকীয় আদেশগুলো বাংলাতেই বেরুতো ।

    কলকাতাকেন্দ্রিক যে পশ্চিমবঙ্গীয় মেধা আজ , ভিন্ন প্রদেশে বসবাসকারী বাঙালিদের বর্হিবঙ্গীয় বলে চিহ্নিত করছেন , তার পেছনে রয়ে গেছে নিজেকে কেন্দ্র ভাবার সেই প্রচল অভ্যাস এবং কলোনির ঘোর । এটা এমন নয় যে , একটা শব্দমাত্র । এই শব্দ ব্যবহারের মনোভঙ্গিটি দীর্ঘদিন ধরে তৈরি হয়েছে । আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে সুবিধা পাওয়া সেই মন , প্রতিপত্তিপ্রবণ হয়ে নিজেকে ক্ষমতাকেন্দ্র ভাবতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল । ক্ষমতার স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ীই তা সার্বিক কর্তৃত্ব চায় । তার ইচ্ছা ও রুচির চেয়ে আলাদা সমস্ত কিছুকেই সে হয় তাচ্ছিল্যে হীন বানিয়ে তোলে , নয়তো অবহেলায় ‘বাহির’ করে রাখে । একটা সময় অব্দি অন্যান্য অঞ্চলে বসবাসকারী বাঙালিদের মধ্যে নিজেদের রুচি চারিয়ে দেয়া গেলেও , কলকাতা আজ আর তার সত্তায় বাঙালিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করার অবস্থায় নেই । দেশ বিভাগ তার আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিপত্তির হানি ঘটিয়েছে । আর হয়তো তাই , আপ্রাণ সে তার বাঙালিয়ানাকে বিসর্জন দিয়ে , কোনওক্রমে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক হয়ে উঠতে চাইছে । তার পোষাকে এখন আর বাঙালিত্বের চিহ্ন নেই । আন্তর্জাতিকতা স্পষ্ট । এমন কি সামাজিক অমুষ্ঠানেও এই পোষাক তাকে বিড়ম্বিত করে । খাদ্যাভাসে সে এখন কসমোপলিটান । এমন কি , দুর্গাপূজা ছাড়া একটি উৎসবও তার নেই , যাকে সে বাঙালির উৎসব বলে চালাতে পারে । তারপরও , যে বাংলাভাষায় তার আত্মপরিচয় নিহিত , সেই বাংলাভাষাটিও সে হারিয়ে ফেলছে অবহেলায় । এখন সে যদি কথা বলে তাও বাংলায় নয় , বাংলা হিন্দি ইংরাজির এক জগাখিচুরি ভাষায় , আর এই খিচুরি ভাষাটাকেই সে চলমান বাংলা বলে চারিয়ে দিতে চাইছে চারপাশে । এটা নতুন কোনও প্রবণতাও নয় , যখন আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক সুবিধার সুযোগে কৃষ্ণনাগরিক বুলিটিকে মান্যভাষা ধরে নিয়ে , বৃহত্তর অংশের বাংলাটিকে উপভাষা বানিয়েই ক্ষ্যান্ত হয় নি , সেই উপভাষাভাষী মানুষগুলোকেও অবজ্ঞা ও ঠাট্টার পাত্র করে তুলেছিল , সেই তখনই , মহেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর আত্মকথায় জানিয়েছিলেন ,” বাঙাল দেখিলে আমরা ঠাট্টা করিতাম ও উৎপাত করিতাম ।“ তখন থেকে বাঙালি ও বাংলাভাষাকে ক্রমাগত বিচ্ছিন্নতার দিকে ঠেলে দেওয়া শুরু হয়েছিল । তবুও সেই সময় অবিভক্ত বাংলার রাজধানীর মর্যাদা ছিল বলে , অনেকেই কলকাত্তাইয়া হতে চাইতো । না পারলে সধবার একাদশীর রামমানিক্যের মতো ভাবতো , “এত কইরাও কলকত্বার মত হবার পারলাম না , তবে এ পাপ দেহেতে আর কাজ কি , আমি জলে জাপ দিই ।“

    আজ যখন বাংলাদেশ নামে এক আলাদা রাজনৈতিক সীমারেখা তৈরি হয়ে গেছে ভাষার ভুগোলেও , তখন ঠাট্টা উৎপাত সহ্য করা বাঙাল ভাষাও কবি আল মাহমুদ , সৈয়দ শামসুল হক , মজনু শাহ , ব্রাত্য রাসু বা মুজিব ইরমদের হাতে হয়ে উঠেছে নান্দনিকতার অস্ত্র । কলকাতা যখন ৩১ ডিসেম্বরের রাতে নববর্ষ পালনের হুজুগে আন্তর্জাতিক হয়ে উঠতে ব্যস্ত , তখন ১লা বৈশাখকে ঘিরে বাংলাদেশ গড়ে নিয়েছে বাংলার এক ধর্মনিরপেক্ষ উৎসবের রূপ । আর এভাবেই পশ্চিমবঙ্গীয় মূলস্রোতের ধারণাটি আজ আর কোনওভাবেই বাংলাভাষা বা বাঙালিয়ানাকে প্রভাবিত করার অবস্থায় থাকে না ।

    তবুও ‘বর্হিবঙ্গ’ শব্দটি ব্যবহার করে সে তার পুরনো প্রতিপত্তির ঘোরটিকেই জানান দিতে চায় হয়তো , কিন্তু এই শব্দটি যাদের প্রতি ব্যবহার করা হচ্ছে , তাদের অবস্থান থেকে এই শব্দটি যে কতদূর অবমাননাকর , তা না ভাবলে , ক্ষতি কিন্তু বাঙালির এবং বাংলাভাষারই ।

    মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর সময় থেকে বা তারও আগে , ক্ষমতার নির্যাতন আর অপমানের যন্ত্রণা নিয়ে বাংলার বহু মানুষ এক বসতি থেকে অন্য কোথাও বসতি গড়ে নেওয়ার জন্য বাধ্য হয়েই ভেসে গেছেন । বহু আকাঙ্খিত স্বাদহীন স্বাধীনতা , বাংলার বহু মানুষকে ভাসিয়ে নিয়েছে এখানে সেখানে । তাদের ভুগোল পাল্টেছে । অভ্যাস পাল্টেছে , তবুও তারা ধরে রেখেছেন তাদের ভাষা । কোথাও এই ভাষাটিকে ধরে রাখার জন্য প্রাণও দিয়েছেন আর আপ্রাণ যুদ্ধ করে চলেছেন প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে । স্বাধীন ভারতবর্ষে তাদের ব্যাক্তি পরিচয় মুছে , হীনমন্যতাসূচক এক গোষ্ঠি পরিচয় দেওয়া হয়েছে ,-উদ্বাস্তু ।

    আজ যাদের বর্হিবঙ্গীয় বলে পরিচয় দিয়ে আলাদা করা হচ্ছে , তাদের একটা বড় অংশ এই শিকড় উপড়ানো মানুষ বা তাদের উত্তরপুরুষ । তাদের ধারণ করার মতো স্থান পশ্চিমবঙ্গের ছিল না বলেই , তাদের ছড়িয়ে পড়তে হয়েছিল ভারতবর্ষের বিভিন্ন  প্রদেশে । বহুভাষিক সমাজের বাসিন্দা হয়েও , তারা বাংলাভাষাকে ভুলেন নি । ভাষা রক্ষার প্রশ্নে আসামের বরাক উপত্যকায় তাদেরই ১১ জন শহীদ হলেও , একমাত্র মনীষ ঘটক ছাড়া পশ্চিমবঙ্গীয় উন্নাসিকতা ১৯শে মে’কে স্মরণ করার প্রয়োজন বহুদিন অনুভব করে নি । আজ যখন খোদ পশ্চিমবঙ্গেই বাংলাভাষার অস্তিত্ব বিপন্ন , তখন কোনও কোনও সংগঠন বিচ্ছিন্নভাবে দিনটিকে স্মরণ করছেন সত্য , কিন্তু বৃহত্তর পরিসরে কতদূর অনুভব করতে পারছেন , এ নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায় ।

    পশ্চিমবঙ্গীয় পরিসরে আজ বাংলা বলা ক্রমশই লজ্জাস্কর হয়ে উঠছে । টিকে থাকার জন্য সে ভুলভাল হিন্দি আর মুখ বাঁকানো ইংরেজির দিকে ছুটিয়ে নিয়ে চলছে তার উত্তরপুরুষকে । আমার ছেলেটা না একদম বাংলা পড়তে পারে না ,-বলে আত্মশ্লাঘা বোধ করছেন যে মা-বাবা , তাদেরই কেউ কেউ , উত্তরপূর্বের বাঙালিকে বাংলা বলতে শুনে , অবাক হয়ে বলেন , বাব্বা , আপনি এত ভাল বাংলা জানেন ! আসলে পশ্চিমবঙ্গের বাইরে যে বাঙালি রয়েছে , তারা জীবনযাপনে অনেকদূর অবাঙালি হয়েও , বাংলাভাষাটিকে ঘিরে যে তাদের বাঙালিয়ানাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন , এই সামান্য আত্মীয়তাসূচক খোঁজখবরটিও তারা এতদিন রাখেন নি । রাখার প্রয়োজনও বোধ করেন নি । আজ হঠাৎ তারা বর্হিবঙ্গীয় খোঁজার চেষ্টা করছেন , কিছুটা প্রয়োজনের তাগিদে । ভাষা ও সাহিত্যের বাজারটি খোদ পশ্চিমবঙ্গেই সংকুচিত হয়ে পড়েছে । সীমান্ত পেরুনোয় আরোপ হয়েছে বিধিনিষেধ । তাই ভারত বর্ষের বিভিন্ন প্রদেশে বসবাসকারী বাঙালিদের বর্হিবঙ্গীয় বলে নিজেকে প্রসারণের এই চেষ্টা , অনেকটাই দায়ে পড়া গোছের ।

    জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে , রাজনৈতিক বা রাষ্ট্রনৈতিক বাধ্যবাধকতায় বাঙালি যখন আজ বিশ্বময় ভ্রাম্যমান , বহুভাষিক জগতের বাসিন্দা ; ঐতিহাসিক কারণেই বাংলার ভুগোল তখন বহুধাবিস্তৃত , বহু দ্বীপ সমন্বিত । এই সময়ে , কোনও একটি অঞ্চলকে  বাংলার কেন্দ্র ধরে নিয়ে , বর্হিবঙ্গ বা বৃহৎ বঙ্গের ধারণাটি প্রসারিত করার ইচ্ছা কোনও অর্থেই গ্রহনযোগ্য হতে পারে না ।

    আজ যদি বাংলাকে বাঁচতে হয় , বাঙালিয়ানাকে বাঁচিয়ে রাখতে হয় , তবে মেনে নিতে হবে তার বহু দ্বীপ সমন্বিত চরিত্রকে । কোনও কেন্দ্রীয়তার বাঁধনে নয় , তাকে বাঁধতে হবে বাংলাভাষার বন্ধনে । যেখানে দাঁড়িয়ে কোনও তরুণ কবিকে যেন বলতে না হয় ,-‘ঢাকা আর কোলকাতা , পার্বত্য ত্রিপুরা থেকে ভৌগোলিকভাবে দুটোই পশ্চিমবঙ্গ !’ ‘হায় আত্মবীর্য , হায় বখরাসর্বস্ব চেকপোস্ট , বাংলাভাষা….’!

    কলকাতার কেন্দ্রিক চরিত্র এই বাংলাভাষাটিকেই হারিয়ে ফেলছে । তাই ইদানিংকালে বইয়ের দেশ পত্রিকায় কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তকে এক সাক্ষাৎকারে বলতে হয় ,-“কলকাতার মানুষ তার ভাষা ভুলে গিয়েছে । আমার তো ভাষাগত আত্মপরিচয় । তাই ভয় হয় , কলকাতায় এলে বাংলা ভুলে যাব ।“

    বাংলাভাষা এখন আর কলকাতায় নয় , বেঁচে আছে গ্রামে গঞ্জে , বিশ্বের বিভিন্ন কোণে , কিছু ব্যাক্তিগত ও গোষ্ঠিগত প্রচেষ্টায় ।ভাষাভুগোলের এইসব খন্ড খন্ড অঞ্চলগুলো , যাকে মূলস্রোতের বাইরের করে রাখা হয়েছে , গ্লানি ও বেদনায় এই অঞ্চলগুলো যদি হারিয়ে যায় ভাষার ভুগোল থেকে , তা কি সেই ভাষাভুগোলেরই ক্ষতি নয় ? পশ্চিমবঙ্গীয় মেধাকে আজ ভাবতে হবে , বাহির বা বৃহৎ ধারণার বাইরে গিয়ে , ভাষার প্রশ্নে একটি নতুন ভুগোল গড়ে নেয়ার ভাবনা । যেখানে অন্তত ভাষাগত আত্মপরিচয়ের সূত্রে গড়ে উঠবে নতুন বাঙালিয়ানা ।

রবিবার, ১২ জানুয়ারী, ২০১৪

যান দুর্ঘটনা এড়ানোর পদ্ধতি

                                                                    ।।  সুদীপ নাথ ।।

পর্ব-১
*যান দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে পথচারীর করণীয়*
মূল কথা= শহরের ব্যস্ত রাস্তায় দুর্ঘটনা হয়না, হলেও মাঝরাতে বা ভোরে

১। রাস্তা আড়াআড়ি ভাবে পার হওয়া উচিত
২। রাস্তা কখনো কোণাকুণি ভাবে পার হতে নেই
৩। মনে রাখতে হবে, নির্জন রাস্তাই সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক
৪। একসাথে একাধিক পথচারী পাশাপাশি হাঁটা বিপদের মাত্রা বাড়িয়ে তুলে
৫। একাধিক পথচারী সামনে পিছনে হাঁটতে হয়
৬। বাঁকহীন রাস্তা পার হবার ক্ষণে প্রথমে বাঁ দিকে ও পরে ডান দিক দেখে নিয়ে, তারপর বাঁ দিকে তাকিয়ে রাস্তা আড়াআড়ি ভাবে পার হতে হয়
৭। থেমে থাকা ও চলমান গাড়ি পথচারীর দৃষ্টি মারাত্মক ভাবে ব্যহত করে, যা সব সময় মনে রাখতে হবে; এতেই সব থেকে বেশি বিপদ হয়।
৮। রাস্তায় থেমে থাকা গাড়ির ইঞ্জিন চালু থাকলে, গাড়িটাকে স্থানত্যাগ করতে দিন, তারপর রাস্তা আড়াআড়ি ভাবে পার হোন
৯। বাঁকা রাস্তা, মোড়, তেমাথা বা চৌমাথা পার হবার সময়, প্রথমে বাঁ দিকে, তারপর ডান দিকে, তারপর বাঁ দিকে তাকিয়ে রাস্তা আড়াআড়ি ভাবে পার হতে হয়
১০। ড্রাইভার আপনাকে হর্ন দিয়ে সতর্ক করবে, এই আশায় নিজের জীবনের ঝুঁকি নেবেন না
১১। যাদের ‘হঠাৎ মাথাঘোরা’ রোগ আছে,বা কিছু ওষুধ খেয়ে, রাস্তা পার হবার সময় অন্যের সাহায্য নিতে হয়
১২। বাচ্চা নিয়ে মা-বাবা একসাথে থাকতে হয়। নয়ত বাচ্চা হঠাৎ মা থেকে বাবা, বা মাবা থেকে মায়ের দিকে ছুটে যায়। আমি অনেক বাচ্চার পরিবার থেকে শুধু মাত্র এই কারণেই মৃত্যু হতে শুনেছি এবং ঘটনাস্থলেও গিয়েছি। মা রাস্তার একপাশে বাবা ও মেয়েকে দাঁড়াতে বলে রাস্তার অপর পাশে দোকানে গেলে, বাচ্চারা মাকে লক্ষ্য করে ছুটে গিয়ে কিছু কিনে দিতে চাওয়া অতি স্বাভাবিক ঘটনা। আর এমন সময়, গাড়ি এলে বাচ্চারা তাদের বাবা এবং মাকেই নিরাপদ ভেবে রাস্তার মধ্য থেকে দৌড়োতে গিয়েই গাড়ি চাপা পড়ে।
১৩। যেকোন যানবাহন আপনার দিকে এগিয়ে আসতে থাকলে, যদি আপনার কোন পাশে, গাড়ি চলে যাবার পরিমান মত যায়গা থাকে, তাহলে আপনি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকুন। গাড়ি চালক তাঁর সুবিধা মত বেরিয়ে যাবে। একবার বাঁ দিকে, একবার ডান দিকে চলার দেহভঙ্গি, গাড়ি চালককে বিভ্রান্তিতে ফেলে দেয় এবং বিভ্রান্ত হয়ে আপনার উপরেই এসে পড়ার সম্ভাবনা, এভাবে আপনিই তৈরি করে দিতে পারেন।

 পর্ব-২
*সন্তানের যান দুর্ঘটনা এড়াতে পিতা-মাতার কর্তব্য*
  
যখন ছেলেমেয়েরা ঘর থেকে বেরোয়, তখন কোন্ মা-বাবা বলেন না যে, সাবধানে রাস্তায় চলবি। কিন্তু কি কি সাবধানতা তাদের নিতে হবে কখনো শিখিয়ে দেন কেউ। আমাদের  ছেলেমেয়েরা নিজের বুদ্ধিতেই পথ  চলতে শুরু করে, আর উদ্বেগে ঘরে ছটফট করেন মা-বাবারা।

আমাদের সন্তান নিজে থেকেই রাস্তায় চলার অভ্যাস ও নিয়ম রপ্ত করে নেবে, এমনটা আমাদের আশা করা অনুচিত। যথা সম্ভব অল্প বয়স থেকেই তাকে রাস্তার দুর্ঘটনা সম্পর্কে সচেতন করে তোলা উচিত। আমাদের সন্তানের স্কুলে পার্কে খেলার মাঠে আত্মীয় বন্ধুদের বাড়িতে বা দোকানে যাওয়ার পথে, যে সমস্ত বাধা বিপত্তি রয়েছে, তা আগে থেকেই বিশ্লেষণ করে বোঝাতে হবে।

এখানে কেবল কথা বললে, ব্যাখ্যা করলে ও তথ্য জোগালেই কোন কাজ হবেনা। এমন কি সবচেয়ে বোধগম্য তথ্য আর বিপদ আলোচনাও প্রয়োজনীয় ফল দেয়না।

দুর্ঘটনা এড়ানো তখনই একমাত্র সম্ভব, যখন পর্যবেক্ষণ ও চলাফেরার অভ্যাস স্বয়ংক্রিয়তা অর্জন করে। আর তা সম্ভব হয় একমাত্র নিরবিচ্ছিন্ন অনুশীলনের মাধ্যমেই। এইরূপ অনুশীলন বহুবার পুনরাবৃত্তি করা আবশ্যিক।

লুকনো বিপদ অনুমান করার অক্ষমতাঃ- আমরা অনেক সময় রাস্তার মাঝখানে চলে যাই, সামনের দৃশ্য আড়াল করে থাকা গাড়ি বা অন্য কিছুর পেছন থেকে। অদৃশ্য জায়গাটাকে বলা হয় ব্ল্যাক পয়েন্ট। এই কারনেই প্রায় এক তৃতীয়াংশ  দুর্ঘটনা ঘটে।

এই যে সামনের দৃশ্য আড়াল করে থাকা,কোন কিছুর পেছন থেকে হঠাৎ চলে যাওয়া,সেই অভ্যাসটি কিন্তু গড়ে উঠে সবার অলক্ষে, একেবারে ছোটবেলা থেকেই।

ছোটবেলায় আমরা বাড়িতে, দরজার পেছন থেকে, আলমারি আসবাব পত্রের পেছন থেকে, নিশ্চিন্ত মনে ছুটে বের হই। তখন এমন কিছুই ঘটেনা। এই ভাবেই আমাদের মনে গড়ে উঠে বাজে একটি নেতিবাচক অভ্যাস। এই অভ্যাস দিনে দিনে শর্তাধীন পরাবর্তের সহায়তায়, বদভ্যাসে পরিনত হয়। এই নেতিবাচক তথা বদ অভ্যাসটি নিয়েই আমাদের ছেলেমেয়েরা পথচারী হিসেবে চলতে শুরু করে গ্রাম-শহরের নির্জন ও ব্যস্ত রাস্তায় আর হাইওয়েতে। রাস্তায় যে গারিটা এগিয়ে আসছে, সেটা তত বিপদজনক  নয়, যতটা বিপদজনক সেই থেমে থাকা গাড়িটা, যা এগিয়ে আসা গাড়ীটাকে আড়াল করে রাখে। শুধুমাত্র থেমেথাকা গারিই নয়, চলন্ত গাড়িও ব্ল্যাক পয়েন্ট সৃষ্টি করে বিপদ ঘটায়।

অনুরূপ পরিস্থিতিকে একটা নির্দিষ্ট মনস্তাত্ত্বিক ফ্যাক্টরের দ্বারা সূত্রায়িত করা যায়। আর তা হচ্ছে, “ পথচারী লুকানো বিপদটি আগে থেকে আঁচ পড়তে পারেনি”।

উল্লেখযোগ্য যে, অনেকেই মনে করেন, শিশুরা গাড়ী চাপা পড়ে এই জন্য যে, রাস্তায় তারা অমনোযোগী, অবাধ্য ও নিয়ম শৃঙ্খলার প্রতি উদাসীন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ব্যাপারটি তা নয়। আসল কারণ হচ্ছে, তারা তালিম পায়নি, তাদেরকে সতর্কতা গুলো শেখানো হয়নি।
আর, আগে থেকেই আনুমান করার ক্ষমতা অর্জনের মধ্যেই আছে টিপিক্যাল পরিস্থিতিতে দুর্ঘটনা এড়ানোর চাবিকাঠি।

পর্ব-৩
*সতর্কতার আদৌ কোন প্রয়োজন আছে কি ?*
মনে রাখবেন অপ্রত্যাশিত কারণে খুব কম সংখ্যক দুর্ঘটনাই ঘটে। প্রায় সমস্ত দুর্ঘটনাই ঘটে কতগুলি সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে। এই সমস্ত দুর্ঘটনা গুলোকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, দুর্ঘটনা গুলো এড়ানো যেতো। আর তার থেকেই আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, প্রায় সমস্ত দুর্ঘটনাই এড়ানো যায়।
অনেকে মনে করেন যে, ট্র্যাফিক রুল মেনে চললেই সব সময় বিপদমুক্ত থাকা যায়। এটা সঠিক নয় এই কারণে যে, এটা আশা করা উচিত নয় যে, গাড়ি চালকেরা ট্র্যাফিক রুলে ভাঙ্গবে না। আপনার সতর্কতা, আপনারই জীবন বাঁচানোর স্বার্থে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, ট্র্যাফিক পয়েন্টে দুর্ঘটনা হয়না বললেই চলে।
রাস্তার অন্য একটি বিশেষ বিপদজনক পরিস্থিতি হচ্ছে নির্জন রাস্তা। এখানে একটি বিশেষ মনস্তাত্ত্বিক কারণ কার্যকরী থাকে। এখানে মন থেকে সতর্কতা মুছে গিয়ে, কল্পিত নিরাপদ অনুভুতির সৃষ্টি হয়। নির্জন রাস্তা লোকে পার হয় কোণাকুণি ভাবে এবং কোন দিকে না তাকিয়ে। অনেক সময় দুজনে কথা বলতে বলতে হাঁটে রাস্তার মাঝ বরাবর। আর বাচ্চারা খেলতে খেলতে রাস্তার মাঝখানে চলে আসে। আর গাড়িগুলো কত গতিতে চলে আর কিসব মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটায় তা সবারই জানা।
এটা অবশ্যই স্বীকার করতে হয় যে, রাস্তায় সম্ভাব্য বিপদের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই সমস্ত বিপদ, দেখা দিচ্ছে প্রকৃতি থেকে নয়, আমাদের নিজেদের ক্রিয়াকলাপ থেকেই। এই সব বিপদ বহুবিচিত্র ও খুবই দ্রুত পরিবর্তনশীল। পরিস্থিতি পরিবর্তনের ফলে, সময়ে সময়ে কিছু কিছু বিপদের কারণ অবলুপ্ত হয়ে যায়,  আর নতুন ধরণের বিপদের আবির্ভাব ঘটে। কতগুলি সমস্যার পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায়। বিপদের কারণ পরিবর্তিত হয়, যানবাহনের যান্ত্রিক ও আকার- আকৃতিগত বিকাশ তথা পরিবর্তনের সঙ্গে, রাস্তাঘাটের উন্নতি বা অবনতির সঙ্গে।
বৈজ্ঞানিক তথা প্রযুক্তিগত বিপ্লবের যুগে, আমাদের মত আধুনিক মানুষের অর্জন করতে হবে, পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে গতিক বুঝে চলার দক্ষতা, প্রতিক্রিয়ার দ্রুততা (to promptly react) এবং পরিস্থিতির সঙ্গে  নিজেকে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা।
একটা কথা যতই অদ্ভুত শোনাক না কেন, আপনি যখন পথচারী, তখন কোন চালকের শুভবুদ্ধি বা আগত যানবাহনের ত্রুটিহীনতার উপর বিশ্বাস আপনার বিপদ ডেকে আনতে পারে। সেই ভাবেই আপনার মন তৈরি রাখুন। রাস্তার মুহুরমুহু পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে চলতে হলে, পূর্বানুমানের কৌশলটি আয়ত্ব করা ছাড়া বিকল্প কোন কিছুই নেই। তা সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

পর্ব-৪
*আমরা যখন যানবাহনে চড়ি*
মূল কথা= মাথা বাঁচাতে পারলেই প্রায় সব মৃত্যু ঠেকানো যায়
 
আমাদের শিশুর জীবনের  নিরাপত্তার স্বার্থে, নিজেদের বা সঙ্গী-সাথীদের, স্বার্থে আমরা দুচাকা, তিনচাকা, চার চাকা, যে যানবাহনেরই আরোহী হই না কেন, আমাদের করনীয় অনেক কিছুই থাকে। কারণ, ২০০৫ সালে ভারতে, এক লক্ষ দশ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে, পঁচিশ লক্ষ মানুষ হাসপাতালে গেছে এবং বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ২০১৫ সালে দুই লক্ষ মানুষের মৃত্যু হবে ও পঁয়ত্রিশ লক্ষ মানুষ হাসপাতালে যাবে।
একথা অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে, প্রায় সব যাত্রীকেই চলমান যানবাহনে সম্পূর্ণ উদাসীন থাকতেই দেখা যায়। অনেকেই চলন্ত গাড়িতে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সময় কাটান। আর চালকের অসভ্যতা, যেমন রেষারেষি, মোবাইলে কথা বলা এসব দেখলে দুয়েকজন সাহসী যাত্রী হয়ত প্রতিবাদ করেন সময়ে সময়ে, কিন্তু সহযাত্রীদের সহায়তা তেমন একটা পান না বললেই চলে। যাইহোক, চলুন এই উদাসীনতা কিভাবে আমাদের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে, মানে বিপদের দিকে নিয়ে যেতে পারে, তা খতিয়ে দেখা যাক।
দুর্ঘটনায়, যাত্রীদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ কিন্তু মাথায় আঘাত লাগা।  মাথা ছাড়া শরীরের অন্য কোন অঙ্গে আঘাত লাগলে মৃত্যু হয়না, যদিও অল্প সংখ্যক মারাত্মক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে বেশি রক্তপাত বা দেরিতে চিকিৎসার কারণেই মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে।
তাছাড়া, মাথায় আঘাত থেকে বহুবিচিত্র স্থায়ী অস্থায়ী গুরুতর মানসিক ও স্নায়বিক রোগ দেখা দেয়। এই ধরণের কত  রোগী যে, পরিবার সহ পথে বসে যায়, কে তার খোঁজ রাখে। এসবের আমরা খোঁজ পাইনা কারণ, তারা জীবন্মৃত হয়েই থাকে, থাকে সাধারণের দৃষ্টির বাইরে। মিডিয়া দুর্ঘটনার খবর ছেপে দিয়ে, সরকারকে দোষারোপ করেই, বিষয়টা থেকে দূরে চলে যায়। আমরা কেউ পেছনের দিকে তাকাই না।
অথচ আমরা একটু সতর্ক হলে, সব না হলেও, প্রায় সব ক্ষেত্রেই অন্তত মাথাটা বাঁচাতে পারি। চলন্ত গাড়িতে, উদাসীন না থেকে, যে গাড়িতে আছি ও যেসব গাড়ি এগিয়ে আসছে, সেগুলোর গতি-প্রকৃতির উপর অত্যন্ত তীক্ষ্ণ ও সজাগ দৃষ্টি রাখতে পারি, যেন অন্তত মাথাটা বাঁচানোর চেষ্টা করতে কয়েক সেকেন্ড সময় পাই। মনে রাখতে হবে, মাথায় অল্প-স্বল্প আঘাতেও ভিতরে রক্ত ক্ষরণ হয়ে মৃত্যু হতে পারে, যাকে ইংরাজিতে বলে ইনটারনেল হেমারেজ হয়ে মৃত্যু।
চলন্ত গাড়িতে সবসময় সীট বেল্ট বাধতে হয়। মোটর সাইকেলে শুধু চালকই নয়, সবাইকেই হেলমেট পরতে হবে। যারা লজ্জায় এসব মানবেনা, তাদের মনকে তৈরি রাখতে হবে, দুঃখ জয় করে রাখতে হবে। তাহলে, নিজের শিশুকে হা্রালেও কোন অসুবিধা হবেনা। আর যারা লজ্জাকে জয় করতে পারবেন, তারা গাড়িতেও হেলমেট পরবেন। এটা মোটেই হাসি ঠাট্টার কথা নয়, এটা আমাদের মত লক্ষ লক্ষ মানুষ ও শিশুর জীবন মরণের প্রশ্ন। আমরা না হয় মরতে রাজি, কিন্তু শিশুরা কী দোষ করেছে? ওরা কেন বড়দের ইচ্ছা-অনিচ্ছায় তাদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার পুতুল হয়ে থাকবে। আমাদের কোন অধিকার নেই তাদেরকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দেবার। ছোট বেলায়, যাদবপুরে রাস্তায় একটা ছবি সহ কার্টুন দেখেছিলাম, যাতে বাবার পেছনে বসা হেলমেট ছাড়া বাচ্চাটা বলছেঃ- “বাবার মাথার দাম আছে, আমার মাথার নেই”।
প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, ৭/৮ বছর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভারত সরকারকে গাড়িতে হেলমেট পরার জন্য সাহায্যের হাত বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু তা কতদূর এগিয়েছে জানা যায়নি। এদিকে, মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। আর নেতাবাবুরা, আমলারা যার যার ঘর গোছানোর ব্যস্ততায়, নামকে ওয়াস্তে দায়সারা দুঃখ প্রকাশ, প্রতীকী সভা করে, উপদেশ ও নির্দেশ দিয়ে জনসাধারণকে আশ্বস্ত করে দিব্যি পার পেয়ে যাচ্ছেন।

পর্ব-৫
*যান দুর্ঘটনা এড়াতে চালকের করণীয়*

১। আমরা যত ভাল চালকই হই না কেন, মনে রাখতে হয়, বিপরীত দিক থেকে যেসব গাড়ি আসছে, সেই চালকের উপর, আমাদের কোন নিয়ন্ত্রন নেই
২। আমরা যদি চাকুরিরত চালক হই তাহলে, আমাদের গাড়ির মালিক যতই চাপাচাপি করুক না কেন, আমরা কোন পরিস্থিতিতেই গাড়িতে ত্রুটি থাকলে, তা সারাই না করে গাড়ি চালাবো না।
৩। আমরা যেন কোন পরিস্থিতিতেই ভাগ্যের দোহাই দিয়ে গাড়ি না চালাই।
৪। কোন পরিস্থিতিতেই, যেমন “হয়তোবা সামনের বিপদজনক যায়গাটা কোনরকম পেরিয়ে যাব” ভেবে, নিজের ও আরোহীদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলব না।
৫। মারাত্মক দুর্ঘটনা চালক জীবনে একবারই ঘটায়। কিন্তু এখনও যারা মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটায়নি, সেইসমস্ত সব চালকরাই ভাবে, “কোনদিন তো দুর্ঘটনা ঘটল না, আমি তো ওস্তাদ, আমার কিছুই হবেনা”। এই ভাবনা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখবো।
৬। মনে রাখতে হয়, সামনের অজানা পরিস্থিতি আর গাড়ির ইঞ্জিন,  আমাদের ইচ্ছাধীন নয়, এবং তা আমাদের  বিপদ-আপদের তোয়াক্কা করেনা।
৭। আমাদের নিজের জন্য, আমাদের সন্তান আর পরিবারের জন্যই আমরা গাড়ি চালাই।
৮। গাড়িতে ঝালর, ফটো, পর্দা, খেলনা ইত্যাদি লাগিয়ে, নিজের এবং আরোহীদের দৃশ্যমানতা কোনভাবেই কমানো উচিত নয়। চালক ও আরোহীরা যেন সামনে, পিছনে, ডানদিকে ও বাঁদিকে, বাইরের সবকিছু ভাল ভাবে দেখতে পায় তা সুনিশ্চিত রাখতে হয়।
৯। বাইরের দৃশ্যমানতা কমানো আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এই আইন কঠোর ভাবে পালন করতে হবে।
১০।। বিপরীত দিক থেকে যে গাড়ি গুলো আসছে, তার কোনও চালক যেসব বিষয়ে জড়িত থাকতে পারেঃ-
ক) সে হয়তো কুসংস্কার বসে, ফাঁড়া কাটাতে মাদুলি, রত্ন ধারন করে নিশ্চিন্তে এক্সেলেটার চাপতে দুঃসাহসী
খ) তার হয়তবা কোনদিন দুর্ঘটনা ঘটেনি, তাই নিজেকে মাত্রাতিরিক্ত সাহসী মনে করে
গ) তার হয়তবা বিশেষ কোনও ওষুধ খেতে হয়েছে, যা খেয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী যান চালনা নিষিদ্ধ
ঘ) তার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোথাও হয়ত যেতে হবে, যেমন- হাসপাতাল, ইন্টারভিউ, পরীক্ষা কেন্দ্র
ঙ) সে হয়ত মদ খেয়ে মাত্রাতিরিক্ত কর্তব্য বোধহীন
চ) সে হয়ত বাড়ি থেকে ঝগড়া করে বেরিয়েছে
ছ) তার সন্তান,স্ত্রী বা আপনজন হয়ত গুরুতর অসুস্থ
জ) তার গাড়িতে হয়ত কোন রোগী, অপরাধী বা বিপদজনক বস্তু আছে
ঝ) সে হয়ত আরোহীর সাথে গল্পে মগ্ন
ঞ) সে মদ খেয়ে হয়তবা দ্বিধাগ্রস্ত তথা কিংকর্তব্যবিমুর
ট) তার হয়ত আরেকটা ট্রীপ ধরতে হবে
ঠ) সে হয়ত অসুস্থ
ড) সে হয়ত ক্ষীণদৃষ্টির রোগী বা তার শ্রবণ শক্তি কম
ঢ) সে হয়ত মদ খেয়ে হাত পা টলমল অবস্থায় আছে
ণ) সে মদ হয়ত খেয়ে মাত্রাতিরিক্ত সাহসী বোধে আচ্ছন্ন