“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

তমসা সিরিজ

 


অভিজিৎ চক্রবর্তী

তমসা সিরিজ



এক


একা নিরক্ষরা রাত। ওড়ে বাঘছাল। 

মা মা বলে ডাকে মনোহর। ভয় পেয়ে ডাকে। 

বিষাদ। পংক্তির কাটা মাঠ। ফাঁকে ফাঁকে 

সরোবর। তোর লীলা অবাধ। অক্ষর-শিস নাভি থেকে ওঠে 

ধ্বনি তো প্রহরের প্রমাদ। লুঠ হবে গ্রহ-তারা

পরমায়ু, যতি। কারক ও ক্রিয়াপদ।







দুই


কপালে আলোর ছিঁটে লাগে। দূর গোধূলি-মায়ার। যাও ছুটে যাও। 

ছবি। স্মৃতি। দেহ ভেসে যায় কোলাহলে। 

একা জলযান আসে–

গোপন। লোকালয়ের। লাল নীল আলো চোখে মুখে।

মাঠেই দাঁড়ালো। তমসা। নিকষ কালো–

কালো তো মা-ই আমার।

কান্না শুকিয়ে পাথর। পাথর তো মা-ই।

পাথরের স্তন। চুষতে চুষতে স্ফূরণ





তিন


জলের ভিতর আর বাইর। রাস্তায় 

পানের দোকানে– সব কথা জমে ক্ষীর। 

নিরক্ষর চাঁদ। উদার জোছনা। 

জোছনা না কাচ। পায়ে বিঁধে যায় অনুগত দিন। 

দিনের ভেতর না বাহির। পাত 

এই সংশয়ে বাজে বীণ 

                      বাড়ে ঋণ 







চার


রাত-সরোবর। চাঁদ নেই। তাই অন্ধ।

দেখে না। কবি দেখে। কবিরা নিশাচর।

নেশাচোর। হাতে পায়ে পাথর– ঝুনঝুনি। মল। 

 ধরতে চাইলেই মাছেরা নড়ে খলবল





পাঁচ


এরপর ক্ষুধা। এরপর খাড়া 

সবার চোখের সামনে দাঁড়া 

কাঁদা লেগে রক্ত লেগে ঘাম– 

জন্মের মাটি দিলাম। তবে 

এবার দ্বিগুণ বেগে খাড়া 

শীর্ষচূড়া তারায় ভরা 

রাত্রিটা দু’দিক থেকে নাড়া





ছয়


তুমি মাটি। কাল ছিলে শিরে 

কাল তোমাকে ঘিরে ধূপ-ধূনা-উল্লাস 

মন্ত্র ছুঁইয়ে দিয়েছি কপালে। এখন রোদ– 

এখন সত্যের বোধ। দায়ভার। গাছের তলায় 

মেলেছে ক্লোধ। । অথচ কাল মুদ্রা, নৃত্য- বিভঙ্গে। ধ্বনি সর্বাঙ্গে। মেঘ ও বাদলা– হাওয়া ও যতিচিহ্নের। এখন করুণ 

একফোঁটা জলের রেখায়। লক্ষ্যে স্থির 

যত গুণ, ডুবে যায়–





সাত


ভেদ করো। তবে তুমি–

ঝলসে পড়ো ছুঁয়ে ভূমি 

শিরস্নান খোলো ত্রিনয়নী 

মারো মারো মারো। জ্বালো ধুনি। 

জাগে জাগাও। ভেতরে 

আপাদ বিস্তৃত ভূমি। তারপর 

ঊর্ধ্বগামী। আঁকাবাঁকা। ওঠো 

তুলে ধরো। তুলে ধরো 

দেখাও অ-যোনি






আট


কেঁপে কেঁপে ওঠো। বাজে তারা 

মুণ্ডে মালা গাঁথা। গলে তারা 

কেঁপে কেঁপে ওঠো। হাড়ের গয়না 

বাজো রণে। অক্ষরে নাচাও 

ডম্বরু দোলে। শিখায় শিখায় দিহন 

শিরায় শিরায় সুনামী। অকারণ 

বেজে যায় ঘর হতে শ্মশানভূমি






নয়


এরপর কাব্য বলে দিলাম ঊরু। ঊরু নয় ঊরুসন্ধি

এরপর কাব্য বলে দিলাম ক্ষত

চুইয়ে পড়া জল। জলের ভাঁড়ার একা বন্দী।

নগ্নপদে  চ্যাংদোলা হয়ে– 

জ্বালো চিতা। হাড়ের ভেতর ঘুমিয়ে পিতা।

বাজুক শয়তানি। ব্রহ্মখুলি ফাটুক। 

ঝরুক। বৃষ্টি পড়ুক।

এরপর কাব্য বলে দিলাম ধরিয়ে মধ্যমণি।

ঘি-এর বাজার। যজ্ঞথলি।

ঝরুক জোছনা। জোয়ারে ফাটুক সোনার খনি






দশ


ডুবছিনা তো ভেসে উঠছি বন্ধ দুয়ার 

মাথার ভেতর একের পর একের জোয়ার 

নীলের কথা শুনবে বলে মনের গতি 

বিষের বড়ি আহামরি আবার যতি 

ধন্দ নিয়ে একাই একা বসত গড়ি 

দু’খানা দু'দিকে লাগিয়ে নিজেই লড়ি





এগারো



তোমার কাছেই ভয়। ভয় মানে বটের ঝুরি– অতিকায়। 

জঙ্গল নিবিড়। ভেদ করে যাবে ধড়। 

পৌঁছুবে– খোলা মাঠ। বৃষ্টিতে ঝাপসা। ধড় আর কী 

মুণ্ড খুজে পাবে। শুধু যাবে। একা। চেনা পথ 

পেরিয়ে। অচেনা। সারি সারি ঘর– 

দরজার ধড় টোকা দিয়ে যায়। 

মুণ্ড নাই। মুণ্ড কী আর পাবে! মুণ্ড তো তোমার হাতের মুঠিতে 

চোখ বুজেই আছে







বারো


অথচ তেমনি নীল। ঝড়। 

তেমনি উড়ো টিন। ভয়াল। ক্ষুরধার। 

হত্যাকাণ্ড ফোঁটা ফোঁটা

চাপ চাপ। জনসভা। মিছিল। তরুণ

কবির লাশ মাড়িয়ে। পলাশ না শিমূল

কাটা হাত-পা আড়াআড়ি। ৪৪০ ভোল্ট–

বিদ্যুৎ প্রবাহ। বিষে জর্জর। নীলাভ।

অসুরেরা সারি সারি মাথানত দাঁড়িয়েছে

একটাই অপরাধ– কবির বই পুড়িয়েছে






তেরো


ফোঁটা ফোঁটা ঠোঁটে। কাটা পথ। প্রুফ দেখা 

হল না আবারো। ফাঁকে দেখা যায় ঝড়। 

বাতি নেই। অন্ধকার। বেগ পায়। মাথা বলি 

না ব্রহ্মতালু। ব্রহ্ম বুঝিনি যদিও। শব্দ 

পাইনি এখনো। ধ্বনিজন্ম 

কাটে না আর। প্রুফের তলায় চাপা–

মাঝে রাস্তা। টেরিকাটা। নানা রঙের আলোয়।

আলো না পানীয়, দোলে সামনে পেছনে।

ফোঁটা ফোঁটা। বই বেরিয়ে যায় আবারো

অপ্রকাশিত। ভুলে ঠাসা। এর মাথা ওর

জুতা। দেব দেবারি হয়। রাক্ষস জনতা।





চৌদ্দ


চাঁদ আসিয়াছে। থার্ড ডিগ্রি লাগাও— 

বোঁ বোঁ মাথা। মাথা তো নেই, মস্তক। 

পুস্তকের মত। আপ্রাণ। অযোনিসম্ভূত।

জবা ফুল ফুটিয়াছে।



কোন মন্তব্য নেই: