মজুমদার বাড়ির পিছন দিকের আম গাছটার তলায় আনমনে একা বসে আছে সামিরা মজুমদার। কাতর দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ওই টিলার পানে। মাঝে মাঝে মাথার ওড়নার আঁচল দিয়ে ভেজা চোখ দুটো মুছে নিচ্ছে! বিকেলের পড়ন্ত সূর্যের আলো ও মেঘেরা মিলে মিশে পশ্চিমের আকাশে কী যে মনোরম রং এঁকেছে! কিন্তু সামিরাকে এই মুহূর্তে কোনো মনভোলানো দৃশ্যই টানছে না! তার বুকের ভিতরে উথাল পাথাল ঝড় বইছে! কত সুখ দুঃখের স্মৃতি মনে পড়ছে! এই মাঠ- ঘাট, এই আম গাছ, কাঁঠাল গাছ, এই পথের দুপাশের বাঁশ ঝাড়, ওই টিলা, ওই ধান ক্ষেতের মাঠ, ওই সূর্যাস্তের রং; সবই জড়িয়ে আছে তার শৈশব কৈশোরের স্মৃতির পাতায়!
এক সময়ের এই দুষ্টু-মিষ্টি, আনন্দ উল্লাসের স্থান পরিবর্তন হয়নি, এখনও সেই বিদ্বানপুর গ্রাম ঠিকই আছে, সেই মাঠ ঘাট আছে, অবশ্য কিছু কাঁচা রাস্তা পাকা হয়েছে, কিছু কাঁচা ঘর পাকা হয়ে গেছে। কিন্তু সামিরা অনুভব করছে কোথাও যেন কিছু একটা পরিবর্তন ঘটেছে! পরিবর্তনের সেই উপাদানটি হচ্ছে মানুষ! মানুষের আবেগ, অনুভূতি ও মন মানসিকতার পরিবর্তন ঘটেছে! সামিরার আনন্দ উল্লাস পরিবর্তিত হয়েছে বুক ফাটা কান্নায়! হুক হুকিয়ে কাঁদে সামিরা! ওড়না দিয়ে চোখ মুছে নেয় সে! বাচ্চা দুটো এসে যদি তার কান্না দেখে তবে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়বে; যেভাবে একদা এক সময় ওই টিলার কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত তার মা বাবা অস্থির হতো! আজ মা বাবার স্থান দখল করেছে তার এই সন্তান দুটো ! নিজের সন্তানের চেহারা মনে পড়তে একটু শান্ত হয় সামিরার মন।
সামিরা স্বামী-সন্তানদের নিয়ে ব্যাঙ্গালোর থাকে। সেখানে তার স্বামী আরিফ বড়ভূইয়া একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে উচ্চপদস্থ কর্মচারী। সেই সুবাদে তারা ব্যাঙ্গালোর থাকে। সামিরা এক কৃষিপ্রধান গ্রামের এক কৃষকের মেয়ে। সে ছোটবেলা থেকেই খুব মেধাবী! তার শ্বশুর আব্দুল আলিম বড়ভূইয়া সে যে উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছে সেই বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ছিলেন। তিনি সামিরার বাবা ইলিয়াস আহমাদ মজুমদারের বন্ধু। তার বাবা ও শ্বশুর একই কলেজে একসাথে পড়াশুনা করেছেন। সামিরার বাবার প্রচুর পৈতৃক কৃষি জমি ছিল। এখনও আছে। তার বাবা দাদার সঙ্গে কৃষি কাজ করতেন, পড়াশোনাও করতেন প্রচুর। বিজ্ঞান ও অংকে তার বাবা খুব প্রখর ছিলেন।নিজ গ্রামেই একটি হাইস্কুলে শিক্ষকতা করতেন। স্কুলটি ভেনচার ছিল।কত বছর কাটালেন কিন্তু স্কুলটি সরকারিকরণ হচ্ছিল না। তাই বাবা স্কুলের শিক্ষকতা ছেড়ে পুরোপুরি কৃষি কাজে মনোনিবেশ করেন। তিনি ভাবলেন ভেঞ্চার স্কুল নিয়ে পড়ে থাকলে আমার ভাত-পানির যোগাড়, আমার পাঁচটা সন্তানের ভরণপোষণ, পড়ালেখার খরচ কোথা থেকে আসবে।তাই নিজের শ্রম ও বুদ্ধি দিয়ে বাবা একজন দক্ষ কৃষক হয়ে উঠলেন। তারা বেশ সচ্ছল জীবন যাপন করতে লাগল। পড়াশোনার ক্ষতি হবে ভেবে বাবা তার কোনো ছেলেকেই কৃষি কাজে লাগালেন না। তারা এক একজন উচ্চ শিক্ষিত, প্রতিষ্ঠিত হয়ে উঠেছে।
সামিরার জ্ঞান পিপাসু মন, আচার-ব্যবহার, চরিত্র ইত্যাদি গুনাবলী দেখে তার গ্রেজুয়েশন সম্পূর্ণ হওয়ার পর পরই ছেলের বউ করে ঘরে তুললেন আব্দুল আলীম। মাস দুয়েক শ্বশুর বাড়ি থাকার পর তাকে স্বামীর সঙ্গে ব্যাঙ্গালোর পাঠিয়ে দেন শ্বশুর।
ব্যাঙ্গালোর যাওয়ার পর প্রথম প্রথম খুব কাঁদত সামিরা! তার গাভী মনি আর ছাগল ননির জন্য মন কেমন করত! কিছু স্মৃতি মনে পড়তে এই মন খারাপের মুহূর্তেও হাসি পায় সামিরার । সে নাকি সাংঘাতিক গাঁইয়া মেয়ে ছিল! সেখানকার খাওয়া দাওয়ার সঙ্গে প্রথম প্রথম মানিয়ে নিতে তার সময় লেগেছিল বেশ কয়েকদিন। দেশী চাউলের ভাত নেই, দেশী শাক- সবজি নেই, দেশী গাভীর দুধ নেই, পুকুরের মাছ নেই, মুখে সেই সাধ নেই ইত্যাদি নিয়ে তার আক্ষেপ ছিল খুব! এখন কিন্তু নেই ওগুলো। ধীরে ধীরে সে পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। স্বামী তাকে চটানোর উদ্দেশ্যে মাঝে মাঝে ছেলে মেয়েকে এইসব পুরনো কথা বলে জ্বালাতন করে। সে কিন্তু আজকাল চটে না বরং ছেলে মেয়ের সামনে গর্ববোধ করে কত তাজা প্রাকৃতিক পুষ্টিকর খাবার খেয়েছে, খোলামেলা প্রকৃতির বুক থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করেছে! এখন যে কৃত্রিমতার মাঝে তারা এসবকিছু থেকে বঞ্চিত তাই নিয়ে কত আক্ষেপ করে সামিরা!
স্বামী বেশিরভাগ সময় অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকেন তাই বাচ্চা দুটোকে সামলাতেই তার দিন- রাত -মাস - বছর কেটে যায়। নবম শ্রেণী পড়ুয়া মেয়ে আদিবা প্রায়ই বলে ' মা তোমার স্মৃতি শক্তি কত প্রখর! নিজের ছোটবেলার কথা আমাদের সাথে যখন শেয়ার কর তখন মনে হয় কোনো গল্পের বই থেকে নেওয়া কাহিনি শুনছি, যেন ইতিহাসের পাতা থেকে কুড়িয়ে আনা কোনো এক সময়, সেই সময়ের ঘটনা, সামাজিক পটভূমি, অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি ইত্যাদি তুমি কত সাবলীল ভাবে তুলে ধর!'
সামিরার দুই সন্তান তার এই আবেগ, ভালোবাসা সর্বোপরি তার নিজস্বতা আর তার এই নস্টালজিক হওয়াকে কদর করে, সঙ্গ দেয়, আবেগিক কথাবার্তায় আপ্লুত হয়ে উঠে, এটা তাদের দুই ভাই-বোনের মায়ের প্রতি থাকা সহমর্মিতা। যে সামিরা এক রাতের জন্যও নিজের বাড়ি ছেড়ে কোথাও থাকতে পারেনি, বিয়ের পর থেকে সে বছরের পর বছর দিব্যি কাটিয়ে দিচ্ছে বাড়ি থেকে বহু দূরে! এক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে সামিরা বুক থেকে!
'মা! মা! আমাদের মাঠ ঘাট দেখা শেষ চল ঘরে যাই!' আসিফের ডাকে বাস্তবে ফিরে সামিরা। অতীতের সেই রঙিন স্মৃতির টানে বেঁচে আছে এই বাবার বাড়ির সাথে ভাঙাচোরা সম্পর্ক! এই বাড়ি, এই গ্রাম, এই পথ-ঘাট-মাঠ তাকে হাতছানি দেয় তাইতো সে চলে আসে এই ভগ্নাবশেষ দেখতে! ওই নীল আকাশের সীমাহীন বিস্তৃতির মতো বিস্তৃত সামিরার কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে এখানে! সাগরের গভীরতার মতো গভীর সেগুলো! সেই গভীরতায় শৈশব কৈশোরের মুক্তর খোঁজ করে সামিরা!
'আমি একটু পরে আসছি তোরা গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে বিশ্রাম কর। বিকাল ছয়টা থেকে সাতটার মধ্যে গাড়ি আসতে বলেছি! রেডি হয়ে থাকবে তোমরা।'
'মা কোথায় যাব? বলে ছিলে না এক রাত থাকবে এখানে!' আদিবা বলল।
' তোদের দাদার বাড়িতে ফিরে যাব! তোদের দাদাজীর শরীর বেশি ভালো নেই যে।'
বাচ্চাদের কাছে শ্বশুরের শরীর খারাপের বাহানা দেখিয়ে চলে যেতে চায় সামিরা! এক রাত কেন? তিন রাত এখানে কাটালেও তার শ্বশুর কিছু বলবেন না! আসলে সামিরার মন চাইছে না নিজের বাড়িতেই অতিথি হয়ে থাকতে!
পাঁচ বছর আগে বড়দা নিজে ব্যাঙ্গালোর গিয়ে তাকে আদরের সাথে নিয়ে এসেছিলেন। সেই দাদার প্রথম ও শেষবারের মতো সামিরার ব্যাঙ্গালোর ফ্ল্যাটে যাওয়া। খুব খুশি হয়ে সামিরা তার সাথে এসেছিল। পর পর বাবা মা মারা যাওয়ার পর সামিরা নিজের বাড়িতে আসা কমে যায়। এখন আর কেউ পথ চেয়ে থাকে না! কেউ ফোন করে জিজ্ঞেস করে না 'তুই আমাদের আব্বু ও নাতি নাতনী দুটোকে নিয়ে কবে আসবি?' মা বাবা কোনদিন তার স্বামীকে নাম ধরে ডাকেননি, আব্বু বলে ডাকতেন।
বড়ো ভাইয়ের সঙ্গে বাড়িতে আসার দুদিন পর ভাইয়েরা সবাই বাড়িতে এসে জমা হয়েছিল । যেহেতু নিজেদের কর্ম সুত্রে তারা বাড়ির বাইরে থাকেন তাই ঈদে-পর্বে একত্রিত হয় সবাই। ছোটখাটো একটা অনুষ্ঠানের মতো আয়োজন করা হয়েছিল সেদিন। সামিরা খুব খুশি ছিল। সামিরার খুশিতে ছাই পড়েছিল আছরের নামাজের পর! তার জন্য যে অপেক্ষা করছিল এক বিস্ময়! বড়দা হাতে একটা কাগজ নিয়ে তার সামনে এসে শুরু করলেন, ' সামিরা আয়! বস্ এখানে! একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনায় বসেছি! তোর থাকা দরকার! আমরা চারজনের মধ্যে তুই একমাত্র আদরের বোন! তোকে ছাড়া কি আমরা কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারি।'
উৎসুক সামিরা অধৈর্য্য হয়ে বলল, 'কী বলবে? বলোনা বড়দা! এতো ভনিতা করছো কেন?'
মেজদা চেয়ার থেকে উঠে বড়দার হাত থেকে কাগজটা নিতে নিতে বললেন, 'আরে বড়দা তুমি সোজাসুজি বলতে পারোনা! সামিরা আসলে তোর এখানে একটা সই লাগবে! আমাদের সম্পত্তি গুলো এখনও সব বাবার নামে রয়ে গেছে। এগুলো সব আমাদের চারজনের নামে বাটোয়ারা করে নেব। শরিয়ত মোতাবেক তুইও অংশীদার কিন্তু তুই এসব দিয়ে কি করবি? তাই তুই তোর বাবার সম্পত্তির কিছু লাগবে না বলে সই করে দিলে ভাগ বাটোয়ারা সহজ হয়ে যাবে!'
বিস্মিত সামিরা বলল, ' আমি বাবার কিছু চাইনা; একথা কে বলল?'
সেজদা বলে উঠলেন, ' তুই বাবার সম্পত্তি দিয়ে কী করবি? মেয়েমানুষের সম্পত্তির কী দরকার? তোর শ্বশুর বাড়িতে প্রচুর সম্পত্তি আছে তো।'
সামিরার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল! ভাইয়েরা আরও কী কী যেন বলছে! তার মাথায় কিছুই ঢুকছে না! সব যেন বিস্ময়কর লাগছে! চোখে অন্ধকার দেখছে! মরহুম বাবার পালঙ্কের খুঁটিতে ধরে বিছানায় বসে পড়ল সে!
বিড় বিড় করে বলল, ' না! সই করবনা!'
বড়দা বললেন, 'কেন করবে না? এতো ধুমধাম করে তোমায় বিয়ে দিলাম! পাঁচশত মানুষ খাওয়ালাম! আট- দশ লাখ টাকার আসবাবপত্র দিলাম! বাইক দিলাম!'
'বড়দা কেন দিয়েছিলে ওগুলো! আমার জানা মতে শ্বশুর বাড়ি থেকে এসব কিছুই চায় নি! বাইকে তো আমার স্বামী কোনদিন হাতই দেয় নি! বলেছিল শ্বশুর বাড়ি থেকে দেওয়া বাইকে চড়লে তাঁর আত্মসম্মানে লাগবে। তাদের বাড়ির কাজের ছেলেটাকে দিয়ে দিয়েছিলাম!' সামিরার মুখ থেকে আপনাআপনিই বেরিয়ে আসল।
ছোড়দা বললেন, ' সামিরা! কিছু না বুঝে তর্ক করেছিস কেন? আমাদের কাছে তোর সম্পত্তি থাকলে তোর আপদ বিপদে কাজে আসবে - একথা তোর মাথায় ঢুকছে না নাকি! নাকি আমাদের অবিশ্বাস করিস!'
হতভম্ব সামিরার দুই গাল বেয়ে শুধু গরম নোনা জল গড়িয়ে পড়ল!
সেজদা বললেন, ' তুমি সব ভুলে গেলে সামিরা! আমরা তোমার জন্য কী না করেছি? খুঁটা দিচ্ছি মনে করে ভুল বুঝিসনা বোন। তোর দুটো বাচ্চার জন্মের সময় আমরাই তো সব দেখাশুনা - খরচাপাতি করলাম! ভবিষ্যতে আমরাই তো তোর খবরাখবর রাখবো।'
'সেজদা! আদিবার আব্বার তো এখানে পাঠানোর ইচ্ছে ছিল না। মা-ই জোর করে আনিয়ে ছিলেন; তাঁর একমাত্র মেয়েকে নিজের পাশে রাখবেন, নাতি নাতনীর দেখাশুনা করবে বলে!' সামিরার গলা শুকিয়ে গেছে, শব্দ গুলো দলা পাকিয়ে গলায় আটকে গেছে তাই কান্না বিজড়িত কণ্ঠে শুধু এতটুকুই বলল।
' সই করবি কি না বল! এতো কথা বাড়াস্ না তো! আমরা তোকে জোর করছি না! তুই ইচ্ছে হলে কর নাহলে করিস না।' মেজদা স্নেহ ভরা অভিমান জড়িত কণ্ঠে বললেন।
'দাদা! তোমরা সবাই উচ্চশিক্ষিত, প্রতিষ্ঠিত! তোমরা যা বুঝবে, যা করবে ভালোই করবে!' ওড়নার আঁচল দিয়ে চোখ মুছে কলম হাতে নিতে নিতে সামিরা বলল । সে তার 'পৈতৃক সম্পত্তির অংশ থেকে কিছুই চাই না, সবটুকু স্বেচ্ছায় ভাইদের দান করে দিলাম .......' সই করে দিল।
এখন কেউই সামিরার খবর প্রায় নে-ই না। 'এত দূর ব্যাঙ্গালোর! কেমনে যাব ! এত খরচ হবে! যাওয়ার এত সময়ই বা কোথায়?' যাওয়া তো দূরের কথা একটা ফোন করে বোনের খবর নেওয়ার সময় পর্যন্ত নেই ভাইদের!এই তো কদিন আগে এক ভাইপো হোয়াটসঅ্যাপ এ ম্যাসেজ করল, 'পিসিমনি! আমাদের বাড়িতে কালকে দাদা দাদির রূহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া আছে। খানা-পিনা হবে। তোমার দাওয়াত রইলো। সবাইকে নিয়া আসলে ভালো হতো। আত্মীয় স্বজন সবাইকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। প্রোগ্রামের ডিসিশন হঠাৎ করে নেওয়া হয়েছে তাই হয়তো তোমাকে বলতে ভুলে গেছিলাম । এখন আসতে নাপারলে আমাদের বাড়িতে পরে আসিও কিন্তু। দাওয়াত রইলো।' ম্যাসেজটা দেখে সামিরা পড়ে আর মনে মনে হাসে; 'নিজের বাড়িতে দাওয়াত!' ' আমাদের বাড়িতে তোমার দাওয়াত!' প্রোগ্রামটার জন্য নিশ্চয়ই চার ভাইয়ের মধ্যে মিটিং হয়েছে তখন তো মিটিং এ ডাকেনি! সেদিন তো অন্তত একটা ফোন করতে পারত ভাইয়েরা !' কেন ডাকবে ? সামিরা তো এখন এ বাড়ির সদস্য নয়! সামিরার নিজের বাড়ি যে আজ তার অংশীদারি ভাইদের দখলে! বাচ্চা ছেলেটার হয়তো পিসিকে ডাকা হয়নি বলে খারাপ লেগেছিল তাই হয়তো একটা ম্যাসেজ পাঠিয়েছে।
কয়েক দিন থেকে নিজের বাড়ির জন্য মনটা খুব কাঁদছিল তাই সামিরা বাচ্চা দুটোকে নিয়ে চলে আসল। জন্মভূমিতে এসে অনুভব করল এখানে তার স্থান শূন্য! এখন সে শুধু এ বাড়ির এক গায়ে পড়া অতিথি! বড়ো ভাবির আজ বাবার বাড়িতে নিমন্ত্রণ আছে; তাই তিনি চলে গেলেন। মেজ ভাবির কাছে শুনল তাদের সংসারের অভাব অনটনের যত গল্প। অবশ্য মেজদা সরকারি স্কুলের শিক্ষক। সেজ ভাবি বাচ্চাদের পড়াশোনা নিয়ে এতটা সচেতন যে পিসির সঙ্গে বা পিসতুতো ভাই-বোনের সঙ্গে দশ-পনেরো মিনিট কথা বলার সময় পর্যন্ত দিলেন না বাচ্চাদের। ছোট ভাবি নিজেই সারাদিন রিল ভিডিও বানানো নিয়ে ব্যস্ত। নিজের স্বামী সন্তানকেই সময় দিতে পারছেন না । অবশ্য তাদের নিয়ে ভিডিও করেছেন, ফটো তুলেছেন। হঠাৎ গুড়ুম করে মেঘের শব্দ হলো। শিহরিত হয়ে ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসল সামিরা! উঠে দাঁড়াল।এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে মা-বাবার কবরের পানে চেয়ে নিল শেষ বারের মত। কী জানি আর কবে আসা হবে, কতদিন পরে!