“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

সোমবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০১৭

সড়ক সুরক্ষায় ব্যর্থ ত্রিপুরা রাজ্য



।।  সুদীপ নাথ।।
(দৈনিক সংবাদের ১৫ জানুয়ারি, ১৭তে ছেপেছে।)


গত  ৫.১.২০১৭ তারিখের ঘটনা। ঘটনাস্থল ত্রিপুরা জুটমিলের কাছে জাতীয় সড়ক। একটি তরতাজা যুবক হেলমেট মাথায় দিয়েই মোটর সাইকেলে তার সঙ্গী করে নিয়েছিল একটি তরতাজা কিশোরকে। ষোল বছর বয়েসী কিশোরের মাথায় হেলমেট ছিল না। যুবকটি একটা লড়ির পেছনে ছিল। সে তার সামনের লড়িটিকে ওভারটেক করতে যেয়ে, মাঝ রাস্তায় ঢুকে পড়ে। তৎক্ষণাৎ উল্টো দিক থেকে অতি দ্রুত আসছিল একটি যাত্রী বাহী টাটা ম্যাজিক গাড়ী। কিন্তু সে ম্যাজিক গাড়িটিকে লড়িটির জন্যে দেখতে পায় নি। আর এখানেই ঘটে যায় বিপত্তি। এমনটা অপ্রত্যাশিত নয়। তরুনটি বেঁচে যেত, যদি যুবকটিকে সে বাঁচাতে চেষ্টা না করত। প্রত্যক্ষদর্শির বিবরণে জানা যায়, কিশোরটি এই কারণেই নিজের জীবন বলি দিয়েছে।

এখানে কিন্তু একটা কথা আমাদের বুঝতে হবে যে, অপ্রত্যাশিত কারণে খুব কম সংখ্যক দুর্ঘটনাই ঘটে। প্রায় সমস্ত দুর্ঘটনাই ঘটে কতগুলি সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে। এই সমস্ত দুর্ঘটনা গুলোকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, প্রায় সবগুলো দুর্ঘটনাই এড়ানো যেতো। আর তার থেকেই আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, প্রায় সমস্ত দুর্ঘটনাই এড়ানো যায়। এইসব পরিস্থিতিগুলোকে কতগুলো সুনির্দিষ্ট ফ্যাক্টর দিয়ে সূত্রায়িত করা যায়। 

আমরা অনেক সময় রাস্তার মাঝখানে চলে যাই, সামনের দৃশ্য আড়াল করে থাকা গাড়ি বা অন্য কিছুর পেছন থেকে। অদৃশ্য জায়গাটাকে বলা হয় ব্ল্যাক পয়েন্ট। এই কারনেই প্রায় এক তৃতীয়াংশ দুর্ঘটনা ঘটে। এই যে সামনের দৃশ্য আড়াল করে থাকা, কোন কিছুর পেছন থেকে হঠাৎ চলে যাওয়া, সেই অভ্যাসটি কিন্তু গড়ে উঠে সবার অলক্ষে, একেবারে ছোটবেলা থেকেই। ছোটবেলায় আমরা বাড়িতে, দরজার পেছন থেকে, আলমারি আসবাব পত্রের পেছন থেকে, নিশ্চিন্ত মনে ছুটে বের হই। তখন এমন কিছুই ঘটেনা। এই ভাবেই আমাদের মনে গড়ে উঠে বাজে একটি নেতিবাচক অভ্যাস। এই অভ্যাস দিনে দিনে শর্তাধীন পরাবর্তের সহায়তায়, বদভ্যাসে পরিনত হয়। এই নেতিবাচক তথা বদ অভ্যাসটি নিয়েই আমাদের ছেলেমেয়েরা পথচারী চালক হিসেবে চলতে শুরু করে গ্রাম-শহরের নির্জন ও ব্যস্ত রাস্তায় আর হাইওয়েতে। রাস্তায় যে গারিটা এগিয়ে আসছে, সেটা তত বিপদজনক  নয়, যতটা বিপদজনক সেই থেমে থাকা গাড়িটা, যা এগিয়ে আসা গাড়ীটাকে আড়াল করে রাখে। শুধুমাত্র থেমে থাকা গারিই নয়, চলন্ত গাড়িও ব্ল্যাক পয়েন্ট সৃষ্টি করে বিপদ ঘটায়। অনুরূপ পরিস্থিতিকে একটা নির্দিষ্ট মনস্তাত্ত্বিক ফ্যাক্টরের দ্বারা সূত্রায়িত করা যায়। তা হচ্ছে, “ পথচারী বা চালক, লুকানো বিপদটি আগে থেকে আঁচ পড়তে পারেনি”। আর ঐ দিনের ঘটনায়, ওভারটেকের সময়ে, সামনে এগিয়ে চলা লড়িটিই ব্ল্যাক পয়েন্ট সৃষ্টি করে রাখছিল, যুবকটির ক্ষেত্রে। সে লড়িটির পেছনে থাকায়, আগত ম্যাজিক গাড়িটিকে দেখতে পায় নি। দেখতে না পেয়েই বিপজ্জনক এলাকায় ঢুকে পরে।

কিন্তু সমস্ত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণ করলে এটাও দেখা যাবে যে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই, মোটর ভেহিক্যাল আইনের, কোনও না কোন ধারা অমান্য করার কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। ত্রিপুরার সমস্ত রাস্তায় যানবাহনের গতির সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারিত করা করা আছে। অথচ দেখা যায় যে, অতিমাত্রায় গতিবেগের কারণেই প্রায় সব মারাত্মক একসিডেনটগুলো একের পর এক ঘটে চলেছে। তাছাড়াও রয়েছে মাত্রাতিরিক্ত আরোহি সংখ্যা। আমি হলফ করেই বলতে পারি যে, প্রত্যেকটা ঘটনা তদন্ত করলেই দেখা যাবে যে, কোন না কোন আইন ভাঙ্গা হয়েছে। তাই যদি হয়, তাহলে তো ধরেই নিতে হয় যে, ত্রিপুরায় যান দুর্ঘটনা জনিত আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটেছে। আর হতাহতের সংখ্যা যেখানে লাগামহীন, সেখানে এটাও মেনে নিতেই হয় যে, ত্রিপুরার আইনশৃঙ্খলার চূড়ান্ত অবনতিই ঘটেছে। আর তাই যদি হয়, তাহলে তার দায় আবশ্যিক ভাবেই বর্তায় স্বরাষ্ট্র দপ্তরের উপরই। এই সহজ কথাটা থেকে স্বরাষ্ট্র তথা মূখ্য মন্ত্রী যতই মুখ ফিরিয়ে রাখেন না কেন, মানুষ তা ঠিকই বোঝে। অথচ সড়ক সুরক্ষা সপ্তাহে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর থেকে আমরা কোন কথাই শুনতে পাইনাতিনি সড়ক সুরক্ষা জনিত সমস্ত দায় দায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন পরিবহণ মন্ত্রীর নিকট। এমতাবস্থায়, একটা প্রশ্ন কিন্তু সামনে চলে আসে, আর তা হল , পরিবহণ মন্ত্রীর কি ট্রাফিক বিভাগের উপর কোন কনট্রোল আছে

প্রত্যেক বছর জানুয়ারি মাসে ঘটা করেই পালন করা হয়ে থাকে সড়ক সুরক্ষা সপ্তাহ। এটা সমস্ত দেশ জুড়েই পালিত হয় আরও অনেক দিবসের মতই। এই সপ্তাহ এখন অনেকটা উৎসবের মেজাজ নিয়েই হাজির হয় বলেই অনুমান করা যায়। কত টাকা খরচ করা হয় এই দিবস পালন করতে তার হিসেব জানা নেই। তবে এই দিবসকে কেন্দ্র করে আরক্ষা দপ্তরের ট্রাফিক বিভাগে আর সারফেস ট্রান্সপোর্ট দপ্তরে সাজ সাজ রব পড়ে যায়। পরিবহন মন্ত্রী আমলাদের নিয়ে সভা করে ঠিক করে দেন, এই দিবস কিভাবে পালন করা হবে। কোথায় কোথায় সভা করতে হবে আর কত লোক জড়ো করতে হবে ইত্যাদি। কিন্তু মৃতদের পরিবারের প্রতি কোন শোকবার্তা পাঠানো হয় কিনা জানা নেই।

এবছরও সপ্তাহ জুড়ে সারা ভারতেই সড়ক সুরক্ষা সপ্তাহ পালিত হচ্ছে। ত্রিপুরায় পরিবহন মন্ত্রি এক বছর আগে, সড়ক সুরক্ষা সপ্তাহ শুরু করার আগের দিন অর্থাৎ গত ১০-১-২০১৬ তারিখে এক সাংবাদিক সন্মেলন করে জানিয়েছিলেন, এই রাজ্যে নাকি দুর্ঘটনার সংখ্যা ক্রমহ্রাসমান। তিনি যুক্তি খাঁড়া করে বলেছিলেন, ২০১৩ সালে দুই শতাধিকের বেশি মানুষ মারা যায়। আর ২০১৪ সালে যান দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা দুইশ’ জনের নীচে চলে এসেছে। আরো বলেছিলেন, মোট দুর্ঘটনার সংখ্যাও নাকি কমেছে। আর দেখিয়েছিলেন যে, প্রতি বছরই ত্রিপুরায় যানবাহনের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তাই যান দুর্ঘটনা ত্রিপুরায় ক্রমহ্রাসমান। আর ঘটা করে ১১-১-২০১৬ তারিখে পালন করা প্রকাশ্য কেন্দ্রীয় জমায়েতে তিনি বলেছেন,  দুর্ঘটনার মূখ্য কারণই হচ্ছে আইন অমান্য করে যান চালনা। এই ছিল মন্ত্রি মহোদয়ের মূল কথা।

অথচ বাস্তবে, এই দপ্তর নয়, রাস্তার যানবাহনের চলাচল নিয়ন্ত্রণের অর্থাৎ রাস্তাঘাটের আইনশৃঙ্খলার সামগ্রিক দিকটা সামলানো হয়,  ট্রাফিক বিভাগ দিয়ে। জনগণ তথা আরোহী আর চালকেরা কিন্তু যে কোন পরিস্থিতিতেই ট্রাফিক বিভাগকেই সামনে দেখে এবং আইনের দিক থেকেও এটাই ঠিক। অথচ ট্রাফিট দপ্তরের মন্ত্রী নিশ্চুপ থাকেন এই ব্যাপারে।

এবার দেখে নেয়া যাক, যান দুর্ঘটনার সমস্যাকে আইনশৃঙ্খলা জনিত সমস্যা হিসেবে কতটুকু চিহ্নত করা যায়। প্রথমেই একটা প্রশ্নও সামনে এসে যায়। ত্রিপুরাতে যখন কাতারে কাতারে অসহায় মানুষ উগ্রপন্থী আক্রমনের কারণে মরে যেত, তখন কিন্তু সেই সমস্যাকে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা হিসেবেই চিহ্নিত করে, স্বরাষ্ট্র দপ্তর মাথা ঘামাতো। কিন্তু সেই সমস্যা বিলীন হতে না হতেই ত্রিপুরার রাস্তায় রাস্তায় আইনশৃঙ্খলার চূড়ান্ত অবনতির এই সময়ে স্বীকার করা হচ্ছে না যে, এটা আরো বড় আইনশৃঙ্খলা জনিত সমস্যা। কারণ উগ্রপন্থী আক্রমনে যত মানুষ প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি মানুষ যান দুর্ঘটনায় ইতিমধ্যেই প্রাণ হারিয়েছে এবং তা সরকারি নথি-পত্রেই দেখা যায়।  

এই হচ্ছে ত্রিপুরার সাধারণ অসহায় মানুষের হাল হকিকত। বোকার মত নিরীহ মানুষ কাতারে কাতারে মরে যাচ্ছে বা জীবন্মৃত অবস্থায় চলে যাচ্ছে। অগণিত পরিবার পথে বসে যাচ্ছে।  শিশু কিশোর-কিশোরী পিতামাতাকে হারিয়ে দিশাহারা। 

দুর্ঘটনায়, যাত্রীদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ কিন্তু মাথায় আঘাত লাগা।  মাথা ছাড়া শরীরের অন্য কোন অঙ্গে আঘাত লাগলে মৃত্যু হয়না, যদিও অল্প সংখ্যক মারাত্মক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে বেশি রক্তপাত বা দেরিতে চিকিৎসার কারণেই মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে। এই ঘটনায়ও দুজনেই মাথায় আঘাত পেয়েই মারা গেছে।
তাছাড়া, মাথায় আঘাত থেকে বহুবিচিত্র স্থায়ী অস্থায়ী গুরুতর মানসিক ও স্নায়বিক রোগ দেখা দেয়। এই ধরণের কত  রোগী যে, পরিবার সহ পথে বসে যায়, কে তার খোঁজ রাখে। এসবের আমরা খোঁজ পাইনা কারণ, তারা জীবন্মৃত হয়েই থাকে, থাকে সাধারণের দৃষ্টির বাইরে। আর আমরা  কেউ পেছনের দিকে আর তাকাই না। 

এটা অস্বীকার করার যো নেই যে, যান চালকেরা নিজেদের জীবন বাজি রেখেই গাড়ি মোটর সাইকেল চালায়। তাই যদি হয় তাহলে তাদের উপর দোষ চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে কেন এই প্রশ্নটাই সর্বাগ্রে আমাদের সামনে এসে হাজির হয়। এই প্রশ্নটিকে সাইকো-স্যোসিও প্রেক্ষাপট থেকে বিচার বিশ্লেষণ করতে না পারলে, সব কিছুই শুধুমাত্র কথার কথাই থেকে যাবে। এই কথাটা প্রমানিত হতে কোন বাধা থাকেনা, যখন আমরা দেখি যে, এইভাবে সুরক্ষা সপ্তাহ পালন করেও কোন সুরাহা দেখা যাচ্ছে না। আর এখানেই রয়েছে, সমস্যাটি থেকে উৎরানোর মূল চাবিকাঠি।

আর আমাদের দেশের প্রতি পাঁচ জনে একজন যে মানিসিক ভারসাম্যহীন, তা কিন্তু কেউ বিবেচনায় আনার প্রয়োজন বোধ করে না। উগ্র মানসিক অবস্থা একটি বিপজ্জনক রোগ, যার জন্যেই বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। তাই ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার আগে প্রতিটি আবেদনকারীর মানসিক অবস্থা যাচাই করা অতি-আবশ্যিক। প্রসঙ্গত উল্লেখ করতেই হয় যে, আমরা জন্ম সূত্রে মূখ্যত চার ধরণের মেজাজ নিয়ে জন্ম গ্রহন করি। 

এগুলোকে মোটামুটি চারটি ভাগে ভাগ করা করা হয়। ১। অতি চঞ্চল বা CHOLERIC TYPE অনেকে বলে রগচটা ২। প্রাণচঞ্চল বা SANGINOUS TYPE অনেকে বলে হাসিখুশি  ৩। নির্বিকার বা PHLEGMATIC TYPE অনেকে বলে আত্মপ্রতিষ্ঠ ৪। বিমর্ষ বা MELANCHOLIC  TYPE  অনেকে বলে ভীতু প্রকৃতির
 
এই অতি চঞ্চল বা CHOLERIC TYPE মেজাজের কেউ উপযুক্ত পরিবেশে বিভিন্ন রকমের উগ্র আচরণ করে। এরা সবসময় মাত্রাতিরিক্ত সাহসী। এরা এক কথায়, প্রায়শই দুঃসাহসী কাজকর্মে জড়িয়ে পরে। এই ধরণের লোকেরা চালকের আসনে বসলে কি হয়, আর কি হচ্ছ, সহজেই তা অনুমেয়। ঐ দিনের যুবকের এবং টাটা ম্যাজিক চালকেরও চরিত্র কোলেরিক টাইপের বলাই বাহুল্য। 

এসব অতশত পরিবহণ দপ্তরের নীতি নির্ধারকেরা বোঝেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই আসবে যে তারা এসব কিছুই বোঝেন না বা তাদের অন্য কোন গোপন উদ্দেশ্য আছে। তার প্রমাণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, তাহলে তো, ড্রাইভিং লাইসেনস ইস্যু করার আগে, সমস্ত ক্ষেত্রেই প্রার্থির সাইকোলজিক্যাল পরীক্ষা করা হত।  কিন্তু কোনও ধরণের মানসিক রোগ নিয়ে কোন আবেদনকারী হাজির হয় কিনা এবং তা যাচাই করা হয় কিনা, তার জবাব কিন্তু, অতীত কাল থেকেই না বাচক।   

তদুপরি, কুসংস্কার বসে, দুর্ঘটনার ফাঁড়া কাটাতে মাদুলি নিয়ে, আর জ্যোতিষের কাছে গিয়ে আগাম রত্ন ধারণ করে, আর তথাকথিত ইশ্বরের কাছে মানত তথা মানসী করে, নিশ্চিন্তে এক্সেলেটার চাপতে দুঃসাহসী হয়ে পড়ে অনেক চালক। উল্লেখিত অতি চঞ্চল বা CHOLERIC TYPE মেজাজের উচ্চ পর্যায়ে থাকা কেউ যদি, মানসিক দিক দিয়ে এইসব কুসংস্কারের দিকে ঝুকে পড়ে, তবে তো আর কথাই নেই।  আর কিনা বিজ্ঞান মন্ত্রী, নিজের অজান্তেই হোক বা জ্ঞানতই হোক, স্বয়ং সরাকারি কাগজের অপব্যবহার করে, জ্যোতিষ চর্চায় মদত দেন। এ নিয়ে কম জল ঘোলা হয় নি, অথচ সরকার তরফে এ নিয়ে টু শব্দটি নেই এখনো। এই হচ্ছে আমাদের রাজ্যের হাল আমলের পরিস্থিতি। 

আর এটাও সর্বজনবিদিত যে, ত্রিপুরা রাজ্যের সড়ক নিরাপত্তাকে, হাতে ধরে শেষ করে দিয়েছে এই রাজ্য সরকার নিজেই। অনেকে বলতে পারেন কি সেই কারণ। এবার সেই দিকেই একটু আঙ্গুল তোলা যাক।
রাজ্য সরকার বছরের পর বছর ধরে, তার কর্পোরেশনগুলোর মাধ্যমে লোন দিয়েছে জীপ গাড়ি আর অটো রিক্সা কেনার জন্যে। কাগজে প্রায়শই বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে বেকারদের আকর্ষন করার জন্যে। প্রচুর ভর্তুকির ব্যবস্থা সহ এই সব তিন চাকা চার চাকার গাড়ি ত্রিপুরায় পথে নেমেছে যেসবে শাটল যাত্রি পরিবহণ করা যায় না। আবারো বলছি, বাস ছাড়া অন্য কোন ধরণের যানবাহন, যাত্রি পিছু ভাড়া নিয়ে রাস্তায় চলতে পারে না। এইসব একমাত্র রিজার্ভ হিসাবেই চলতে পারে। অথচ ত্রিপুরায় ক্যাডার তৈরির উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে, অত্যন্ত কৌশলের সাথেই এইসব যানের অতি মাত্রায় রাস্তায় নামার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতেই ত্রিপুরায় বাসগুলো পথে বসে গেছে। রাধানগর স্ট্যান্ডের সামনে, এইসব ক্যাডাররা সরকারের দেয়া বাসের চালক আর কনডাক্টরদের উপর হামলাও করেছে, যেন বাস রাস্তায় না চালানো হয়। এই জীপ গাড়ি আর অটোর দৌরাত্বেই ত্রিপুরার রাস্তায় রাস্তায় দুর্ঘটনা প্রাদুর্ভাব ঘটেছে, যা ট্রাফিক দপ্তরের আমলারা ভাল করেই জানেন এবং বলেও থাকেন। আর ট্রাফিক বিভাগের উপর মোটর চালক মালিকের সংগঠনগুলোর কতটুকু নিয়ন্ত্রন আছে তা সকলেই জানেন। 

যান দুর্ঘটনা কাকে কখন কিভাবে কোথায় বিপদে ফেলবে কেউ বলতে পারে না। আমরা সবাই মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রয়েছি। কেউ জীবনে একাধিক বার  যান দুর্ঘটনার সাথে জড়িত হন না। আমরা যারা দুর্ঘটনায় পড়ি, তারা সবাই চোর পালালে বুদ্ধি বাড়াই। তাই এমনটা হয়। অথবা জীবন্মৃত হয়ে অন্তরালে চলে যাই।



কোন মন্তব্য নেই: